ছিন্নবিচ্ছিন্ন লাশ দেখে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা
বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
দিনমজুর হিসেবে কাজ করতো ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ী ইউনিয়নের রায়মনি ফকিরবাড়ী গ্রামের ফকির বাড়ির চার সন্তানের জনক মোস্তাফিজুর রহমান বাবলুর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম। গর্ভের সন্তান কেমন আছে তা জানতে শনিবার দুপুরে চতুর্থ সন্তানের আল্ট্রাসনোগ্রাম করার জন্য এসেছিলেন ত্রিশালে।
আল্টাসনোগ্রাম করার জন্য যাওয়ার সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চাপা দেয় মালবাহী একটি ট্রাক। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন স্বামী জাহাঙ্গীর আলম, স্ত্রী রত্না বেগম। এছাড়া সঙ্গে থাকা গুরুতর আহত অবস্থায় বড় মেয়ে সানজিদা খাতুনকে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর রেশ ধরে মোস্তাফিজুর রহমান বাবলুর পরিবারে চলছে শোকের মাতম। ছিন্নবিচ্ছিন্ন লাশ দেখে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী নিহত হলেও গর্ভ ফেটে বের হয়ে আসে শিশু আরেক কন্যা শিশু সন্তান। পরিবারের তিন সদস্য নিহত হলেও বেচেঁ যায় সদ্য ভূমিষ্ট ওই কন্যা সন্তানটি।
মা-বাবা বোনসহ তিনজন নিহত হলেও সদ্য ভূমিষ্ট শিশু কন্যা সন্তানটি অলৌকিক ভাবে বেচেঁ যাওয়ার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সৃষ্টি করেছে ব্যাপক আলোড়ন। ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিও ও স্থিরচিত্র শোভা পাচ্ছে অনেকের টাইমলাইনে।
শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সরেজমিনে নিহতদের বাড়িতে দেখা যায় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। পরিবারের সবার আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। সন্তান ও তার স্ত্রী এবং নাতনির মৃত্যুতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন দাদা প্রতিবন্ধী বাবলু মিয়াসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা।
নিহত জাহাঙ্গীরের চাচাতো ভাই আরিফ রব্বানী বলেন, রত্না বেগম অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তার প্রসবের সময় দুই দিন পার হয়ে যাওয়ায় তিনি একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে আসেন। এরপর সেখান থেকে ফেরার পথে একটি ট্রাক তাদের চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়। তবে এ সময় আঘাত পেয়ে গর্ভ ফেটে ভূমিষ্ট হয় ওই নবজাতক।
হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার আরিফ আল নূর বলেন, এখানে আনার পর আমরা বাচ্চাটির অবস্থা ভালো পেয়েছি। পরে এক্সরে করার পর ডান হাতের দুইটি অংশ ভাঙা দেখা গেছে। শিশুটি এখন নবজাতক বিভাগে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
নিহত জাহাঙ্গীরের বাবা বাবলু মিয়া জানান, সড়কে চালকদের অদক্ষতায় প্রাণ হারাচ্ছে অসহায় মানুষগুলো। তিনি তার সন্তানসহ নিহতদের জন্য দোয়া কামনা করেন।
ত্রিশাল থানার ওসি মো. মাইন উদ্দিন জানান, দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজন মারা গেছে। গাড়িচাপায় ভূমিষ্ট নবজাতক সুস্থ রয়েছে। চালক পলাতক রয়েছে।