করোনাকালে বেশি ক্ষতির শিকার নারী শ্রমিক
করোনা পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত নারী শ্রমিকরা। অনেকে কাজ হারিয়েছেন। অনেকের মজুরি ও কাজ দুইই কমে গেছে। ফলে অনাহার-অর্ধাহারে অনিরাপত্তায় কাটছে তাদের জীবন। অনেকে আবার করোনাকালীন সময়ে লকডাউন বা কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও কাজ করছেন ঠিকই, কিন্তু কোনো কারণে অধিকারবঞ্চিত হলে প্রতিকারের সুযোগ পাচ্ছেন না। পুরুষ শ্রমিকদের কাজে রাখলেও নারীদের বাদ দিচ্ছেন। মজুরির ক্ষেত্রেও পুরুষ শ্রমিককে ৪০০ টাকা দিলেও নারী শ্রমিককে দেন ৩০০ টাকা বা কিছু ক্ষেত্রে তার চেয়েও কম। পরিবারের কথা ভেবে বৈষম্য মেনে নিয়েই কাজ করছেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে অর্থাত্ আনুষ্ঠানিক খাতে নারী-পুরুষের বেতন বৈষম্য অনেকটা কম হলেও অনানুষ্ঠানিক খাতে বেতন বা মজুরি বৈষম্য এখনো অনেক বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সর্বস্তরে আয় বৈষম্য নিরসন করা এখনো বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। শ্রমিকদের ঝুঁকি ভাতা, কারখানা মালিকদের উদ্যোগে শ্রমিকদের করোনার ভ্যাকসিন দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া, কর্মপরিবেশের উন্নয়ন করে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা, করোনাকালের সুযোগ নিয়ে শ্রমিক ছাঁটাই না করা, শ্রমিকদের ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করা, ত্রিপক্ষীয় কমিটির কার্যক্রম জোরদার করা, শ্রমিকদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক শিল্প। এ শিল্পের কারণেই দেশ আজ বিশ্ববাজারে পেয়েছে পরিচিতি। দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৪ ভাগ আসে পোশাক খাত থেকে। এ খাতে কাজ করেন ৪৫ লাখের বেশি শ্রমিক। এর মধ্যে ৮০ ভাগই নারী শ্রমিক। পোশাক শিল্পের কল্যাণে দেশের অনেক নারীই আজ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। অন্যদিকে বিপরীত চিত্রও আছে। এই শিল্পে কাজ করতে এসে অসংখ্য নারী শ্রমিক অধিকারবঞ্চিত হচ্ছেন। পাচ্ছেন না শ্রমের উপযুক্ত মূল্য। এই করোনা মহামারির সময়ে চাকরি হারিয়ে পথে বসছেন অনেকে।
ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিস—বিলস্ এর মহাসচিব ও নির্বাহী পরিচালক নজরুল ইসলাম খান বলেন, দৈনিক কাজের সময় আট ঘণ্টা নির্ধারণের জন্য এখনো আন্দোলন করতে হয় এবং ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারের জন্যও আন্দোলন করতে হচ্ছে। করোনায় আক্রান্ত ব্যাংক কর্মকর্তাদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছে সেসব শ্রমিকদের জন্য এ ধরনের সুবিধা যুক্ত করা উচিত।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন, আগে শ্রমিকদের জীবন বাঁচাতে হবে। শ্রমিক বাঁচলে কারখানা বাঁচবে। এ জন্য শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে শ্রমিকদের দ্রুত আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে মহামারিতে শ্রমিককে অতিরিক্ত ভোগান্তির শিকার হতে না হয়। শ্রমিকের জন্য ঘোষিত সামাজিক নিরাপত্তার সুযোগ শ্রমিককেই দিতে হবে।