নারী উদ্যোক্তাকে স্বাবলম্বী করে তোলার লক্ষ্যে নতুন উইমেন বিজনেস সেন্টার চালু
বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
৩০টি নতুন উইমেন বিজনেস সেন্টার চালু করার কথা ঘোষণা করলো দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশন ও ইউনাইটেড পারপাজ। এই সেন্টারগুলোর মধ্যে ১৫টি স্থাপিত হবে সুনামগঞ্জ জেলায় এবং ১৫টি স্থাপিত হবে গোপালগঞ্জ জেলায়। সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় ১৫,০০০ জন, গোপালগঞ্জ জেলায় ১৫,০০০ জন এবং জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ ও বকশিগঞ্জ উপজেলায় ১০,০০০ জন — মোট ৪০,০০০ জন নতুন ও বর্তমান নারী উদ্যোক্তার ক্ষমতায়ন ও তাদের স্বাবলম্বী করে তোলা এই সেন্টারগুলোর লক্ষ্য।
২০২০ সালের মধ্যে বিশ্ব জুড়ে ৫০ লক্ষ নারী উদ্যোক্তার অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ২০১০ সালে ফাইভবাইটুয়েন্টি উদ্যোগ গ্রহণ করে দ্য কোকা-কোলা কোম্পানি। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে, দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশন ও ইউনাইটেড পারপাজের মধ্যে পার্টনারশিপের মাধ্যমে ২০১৫ সালে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে উইমেন বিজনেস সেন্টার (ডব্লিউবিসি)। নারীদের দ্বারা পরিচালিত এই সেন্টারগুলো এর মধ্যে ১ লক্ষের বেশি নারীর ক্ষমতায়ন করেছে। জামালপুর, খুলনা ও বাগেরহাট জেলায় ৭০টি উইমেন বিজনেস সেন্টার ইতোমধ্যে চলমান রয়েছে।
নিজেদের ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে নারীদের অনেক সময় নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এই বাধা অতিক্রমে সহায়তা করতে, সরকারের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প ও দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রকল্পের সাথে মিলিত হয়ে উইমেন বিজনেস সেন্টারগুলো ১ লক্ষ ৪০ হাজার নারীকে স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করবে। পাশাপাশি, নারীদের মানসিক সমস্যা সম্বন্ধেও সচেতনতা গড়ে তুলতেও সাহায্য করবে।
দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশনের একজন মুখপাত্র বলেন, “নারীর ক্ষমতায়ন বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত হয়। উইমেন বিজনেস সেন্টার বাংলাদেশের ১ লক্ষ নারীর জীবন পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছে। এই অর্জন দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশনকে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করেছে।”
এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী জামালপুরের মাদেরগঞ্জ এলাকার ইগেনিপাড়া ডব্লিউবিসি-র বিলকিস বেগম জানান, “কোকা-কোলা’র ডব্লিউবিসি আমাদের পুরো সমাজে একটি পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। এখন আমাদের নারীরা স্বাবলম্বী, আরো আত্মবিশ্বাসী এবং তারা নিজেদের পরিবারে অবদান রাখতে পেরে খুবই খুশি।”
দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশন ও ইউনাইটেড পারপাজ আয়োজিত একটি ভার্চুয়াল সেমিনারের মাধ্যমে নতুন উইমেন বিজনেস সেন্টার উদ্বোধনের ঘোষণা দেওয়া হয়। সেমিনারটিতে পূর্ববর্তী উইমেন বিজনেস সেন্টারের অভিজ্ঞতা ও ফলাফল তুলে ধরা হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ড. শেখ মুসলিমা মুন।
বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক হামিদুর রহমান এবং সেলফ হেল্প আফ্রিকা-র জেন্ডার ও ইনক্লুশন উপদেষ্টা মেরি সুইনি।
সেমিনারে আরো যোগদান করেন জিআইজেড, ঢাকা, বাংলাদেশের উপদেষ্টা ডেভিড নেশচার, জামালপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ প্রণয় কান্তি দাশ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জামালপুর অঞ্চলের উপ পরিচালক নিতাই চন্দ্র বণিক, রিডিং গ্লাসেস ফর ইমপ্রুভড লাইভলিহুড (আরজিআইএল), ভিশনস্প্রিং-এর গ্লোবাল প্রোগ্রাম ম্যানেজার খানিন্দ্রা কালিতা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার বিভাগের জামালপুর অঞ্চলের উপ পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের গবেষণা কর্মকর্তা ফারহানা আক্তার, ন্যাশনাল রেজিলিয়েন্স প্রোগ্রাম — এনআরপি (ডিডব্লিউএ পার্ট)-এর জেন্ডার ও ডিআরআর বিশ্লেষক ওয়াহিদা বাশার আহমেদ, মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধিরা এবং ইউনাইটেড পারপাজ ও কোকা-কোলা’র উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ইউনাইটেড পারপাজের কান্ট্রি ডিরেক্টর শ্রীরামাপ্পা গঞ্চিকারা বলেন, “বিদ্যমান ডব্লিউবিসিগুলোর সাফল্যে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। এই নারীদের সাফল্যের গল্প আমাদের কার্যক্রম বাড়িয়ে সারা বাংলাদেশে নতুন নতুন ডব্লিউবিসি শুরু করতে উৎসাহিত করেছে। আমরা আশা করছি, এই নতুন সেন্টারগুলো সমাজে আগের চাইতেও বেশি ইতিবাচক প্রভাব রাখতে সাহায্য করবে।”
সেমিনারে ডব্লিউবিসি-র ৫জন নারী উদ্যোক্তাকে তাদের অসামান্য কাজের জন্য জয়িতা পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন, জামালপুরের মাদেরগঞ্জ এলাকার ইগেনিপাড়া ডব্লিউবিসি-র বিলকিস বেগম, জামালপুরের মেলানদহ এলাকার চর পলিশ মধ্যপাড়া থেকে মসলিমা বেগম, খুলনার রূপসা এলাকার শিয়ালি ডব্লিউবিসি থেকে শিলা রানি বিশ্বাস, খুলনার বাতিয়াঘাটা এলাকার শাইলমারি ডব্লিউবিসি-র অর্চনা মণ্ডল এবং খুলনার রূপসা এলাকার শ্রীফলতলা ডব্লিউবিসি থেকে তসলিমা বেগম।
দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশন (টিসিসিএফ):
১৯৮৪ সালে দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। পরিবেশ সুরক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং মানুষ ও কমিউনিটির সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য এ পর্যন্ত তারা বিশ্ব জুড়ে ১.২ বিলিয়ন ইউএস ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে।