শিরোনাম

South east bank ad

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস থেকে গুরুত্বপূর্ণ নথি গায়েব

 প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২২, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

মো. নজরুল ইসলাম, (ময়মনসিংহ):

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকার ব্যক্তিগত দাপ্তরিক কক্ষ থেকে গায়েব হয়েছে পরীক্ষার নম্বরপত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক নথি। বিষয়টি নিয়ে থানায় জিডি করা হয়েছে। এ ঘটনাটি ঘটার এক সপ্তাহ পর অবশেষে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ নিয়ে সাংবাদিকরা রিপোর্ট করতে গেলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। অবশেষে ৩ মার্চ রাতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারজানা নাজ স্বর্ণপ্রভা গত (২৪ ফেব্রুয়ারি) ত্রিশাল থানায় করা এক সাধারণ ডায়েরিতে জানান, বিভাগের পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম শেষে (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাত ১২টার দিকে কলা ভবনের নিচতলার ব্যক্তিগত কক্ষটি তালাবদ্ধ করে বাসায় যান তিনি।

পরদিন (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টার সময় তিনি ওই কক্ষে এসে দেখতে পান তার রুমের জানালার কাঁচ ভাঙা, অফিসিয়াল প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ও গোপনীয় নথি, একাধিক শিক্ষাবর্ষের গোপনীয় নম্বরপত্র, পরীক্ষার উত্তরপত্র, উপস্থিতি রেজিস্ট্রার খাতা, পেন ড্রাইভ নেই। তবে সেখানে স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র এলোমেলো অবস্থায় পড়ে ছিল।

এ বিষয়টিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি সন্দেহের চোখে দেখছে জানিয়ে প্রক্টর প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, বিষয়টি আমি শোনার পর সংশ্লিষ্ট সবাইকে কল করি এবং ভবনের পেছনে পাঠাই। আমি ম্যাডামের কাছে জানতে চেয়েছিলাম কি কি ছিল সেখানে। এক পর্যায়ে ম্যাডাম বলেন, ব্যাগে থাকা অধিকাংশ জিনিসই নেই।

তিনি আরও বলেন, এটি একটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত ঘটনা হতে পারে। কেননা এই অফিস রুমটিকে আমরা সবাই অত্যন্ত নিরাপদ মনে করি। সেই জায়গায় তিনি যে এমন কিছু রেখেছেন এটি কেউ জানতে পারা এবং সেটি বের করে নেওয়াটা সন্দেহের বিষয়। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এমন অপরাধ সংঘটিত হলেও মামলার পরিবর্তে সাধারণ ডায়েরি করেই দায় সেরেছে কর্তৃপক্ষ। আর সেখানে উল্লেখ করা হয়, ওই কক্ষের জানালার একটি গ্লাস ভাঙা পাওয়া যায়।

তবে সরেজমিনে দেখা গেছে জানালাটির গ্রিল ছিল অক্ষত। অর্থাৎ ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি কেউ। তাহলে কিভাবে গায়েব হলো স্পর্শকাতর এসব নথি? এমন প্রশ্নের জবাবে স্বর্ণপ্রভার ভাষ্য, তাকে বিপদে ফেলতেই কেউ সরিয়েছে নথি।

ফারজানা নাজ স্বর্ণপ্রভা আরো বলেন, আমি আমার চাকরি জীবনে কখনো আমার অফিস কক্ষে গুরুত্বপূর্ণ নথি, কাগজপত্র রাখতে সিকিউরড ফিল করিনি। সেদিন শিক্ষার্থীদের রিহার্সাল করাতে অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় পরদিন সকালেই অফিসে চলে আসব ভেবে আমি আমার গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলো সেখানে রেখে যাই।

কিন্তু রাতের ৯ ঘণ্টার মধ্যেই তা চুরি হওয়া মানে স্পষ্টই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যারা করেছে তারা নিশ্চয়ই অনেক দিন ধরে আমাকে অনুসরণ করেছে এবং সুযোগ পেয়ে আমাকে বিপদে ফেলতেই এ কাজ করা হয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ নথি ওই কক্ষের আলমারিতে না রেখে একটি ব্যাগের ভেতরে রেখে টেবিলের পাশে ফেলে বাসায় চলে গিয়েছিলেন ওই শিক্ষিকা। তবে এমন কান্ডে তার দায়িত্বে অবহেলা দেখছেন না থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিস বিভাগের প্রধান মো. আল জাবির। তিনি বলেন, দায়িত্বে অবহেলার প্রশ্নই উঠে না।

একজন শিক্ষকের ব্যক্তিগত কক্ষে কোনো উপকরণ রাখলে তা সুরক্ষিত হিসেবেই রাখেন। তিনিও তাই করেছিলেন। এই ঘটনাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

আল জাবির আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একটি নিরাপদ স্থান। সার্বক্ষণিক এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকে। এই পরিস্থিতি থেকে কারও অফিসিয়াল কক্ষ থেকে কোনো কিছু চুরি হওয়ার কথা নয়। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তা না হলে সেখানে স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিস ছিল সেগুলোও চুরি হতে পারত, তানা নিয়ে পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট নথি কেন চুরি হবে?

গুরুতর এই ঘটনার সপ্তাহ পার হলেও কেন তদন্ত কমিটি হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের কথায় গরমিলে বিভ্রান্ত ছিলেন তারা।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, প্রাথমিকভাবে আমাকে জানানো হয়েছিল যে জিনিসগুলো মিসিং ছিল তার বেশিরভাগই তারা উদ্ধার করতে পেরেছে। পরবর্তীতে বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে আলাপ করে জানতে পারলাম আসলে সেগুলো পায়নি। যেহেতু দুইজনের কথার মধ্যে গড়মিল পাওয়া গেছে সেজন্য আমাদের তদন্ত কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। আমরা দ্রুতই অধিকতর তদন্ত করে মূল ঘটনা বের করার চেষ্টা করব।

বৃহস্পতিবার ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আহমেদুল বারীকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিস বিভাগের প্রধান মো. আল জাবির, প্রক্টর প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান, সিকিউরিটি অফিসার রামিম আল করিম।

ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইন উদ্দিন বলেন, এটি চুরি নাকি অন্য কোনো ঘটনা তা আমরা তদন্ত করে দেখছি। তদন্ত শেষে আমরা যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারব।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: