South east bank ad

মানবতার টানে মুনসুর আলী লাশ টানেন ৪০ বছর ধরে

 প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২২, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

আব্দুর রহমান, (নেত্রকোনা):

মোঃ মুনসুর আলী। বয়স ৬৬ বছর। নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার পূর্বধলা সদর ইউনিয়নের বাবনডহর গ্রামের বাসিন্দা ।
তিনি দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর ধরে খুন, দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া মানুষের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য টেনে নিয়ে যাচ্ছেন হাসপাতাল মর্গে। অর্থ উপার্জনের জন্য নয় বরং মানবতার টানেই এই বৃদ্ধ বয়সেও নির্ধিধায় লাশ বহন করেন বলে জানিয়েছেন ওই বৃদ্ধ। এখন পর্যন্ত তিনি এক হাজারেরও বেশি লাশ বহন করেছেন বলে তার দাবি। একারনে এলাকায় তিনি লাশটানা মুনসুর বলে পরিচিতি পেয়েছেন।

মুনসুর আলী জানান, পূর্বধলা উপজেলায় খুন বা কোন অপমৃত্যুর লাশ ময়নাদতন্তের প্রয়োজন হলে থানা থেকে খবর আসে তার কাছে। খবর পাওয়ার সাথে সাথেই রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছুটে যান তিনি। লাশ যেখানে যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন উদ্ধারের কাজটিও তিনি করেন। কোন লাশ কবর থেকে উত্তোলন করতে হলেও তাকেই করতে হয় এই কাজ।

পূর্বধলা থানা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, মুনসুর আলী দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর ধরে পূর্বধলা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে অস্বাভাবিকভাবে মারা যাওয়া ব্যক্তির লাশ নিজের ভ্যানে তুলে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যান নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে। লাশ নিয়ে যেতে তাকে ৪০-৪৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। একই পথ পাড়ি দিয়ে লাশ নিয়ে আবার তাকে ফিরতে হয়।

মুনসুর আলী বলেন, ডাক্তার আসতে দেরী হলে লাশকাটা ঘরের সামনে গিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। ময়নাতদন্ত শেষে আবার সেই লাশ নিয়ে গিয়ে স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দিই। কোন দিন ভ্যানে হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে ফিরে যেতে গভীর রাত হয়। তবুও তার কোন ক্লান্তি লাগে না। তিনি বলেন, ‘একটা মানুষ মারা গেলে পরিবারের লোজনের ওপর বিপদ।

এই সময়ে আমি যদি তাদের একটু কাজে লাগি এতেই আমি শান্তি পাই। লাশ নিয়ে গেলে ভ্যান ভাড়া নিয়ে কোনদিন কথা বলিনা। মানুষ যা দেয় তাতেই খুশি। বেওয়ারিশ লাশ বা গরীব মানুষ হলে ভাড়া দিতে পারেনা। অনেক সময় থানার স্যারেরাও আমাকে টাকা দেন। প্রতি মাসেই দু’একটি লাশ তাকে বহন করতে হয়। ৪০ বছরে এ পর্যন্ত এক হাজারের বেশি লাশ বহন করেছি।’ মুনসুর আলীর দাবি, লাশ টানার লোক হিসেবে সরকার যদি কিছু ভাতা দিত তা হলে উপকার হতো তার।

মুনসুর আলী পাঁচ মেয়ে ও দুই ছেলে সন্তানের বাবা। দুই ছেলে বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছে। চার মেয়েও বিয়ে হয়ে শ^শুরবাড়িতে। এখন স্ত্রী হালিমা খাতুন, চার বছরের কন্যা তাসলিমা আক্তারকে নিয়ে মুনসুর আলীর সংসার। লাশ টানার আয়েই কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে চলে তার সংসার। মুনসুর আলী বলেন, সংসার চালাতে কষ্ট হলেও অন্য কাজ এখন আর ভালো লাগেনা। সব সময় মানুষের বিপদে পাশে থাকলে শান্তি লাগে। উপকার করতে মন চায়।

পূর্বধলা থানার ওসি মোঃ শিবিরুল ইসলাম বলেন, মুনসুর আলী খুবই ভালো মানুষ। তার আচার ব্যবহার প্রসংশা করার মতো। সে টাকার জন্য কাউকে কোন দিন আঘাত দেয়না। আর টাকা হলেই সব কাজ সবাইকে দিয়ে করানো যায়না। কিন্তু মুনসুর আলী টাকার জন্য নয় বরং মানবতার টানেই লাশ বহন করে থাকে।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: