এপ্রিলের ২৬ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার

দেশে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের উচ্চ প্রবৃদ্ধি এপ্রিলেও অব্যাহত রয়েছে। চলতি মাসের প্রথম ২৬ দিনে প্রবাসীরা ২২৭ কোটি বা ২ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগে ২০২৪ সালের পুরো এপ্রিলে দেশে এসেছিল ২ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গতকাল এ তথ্য জানানো হয়।
এদিকে রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবৃদ্ধির ওপর ভর করে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী (বিপিএম৬) গতকাল (২৭ এপ্রিল) দেশের মোট রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার। গত মার্চের শেষে এর পরিমাণ ছিল ২০ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২৬ এপ্রিল গ্রস রিজার্ভ ২৬ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ছিল।
দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে চলতি বছরের মার্চে। এ সময় প্রবাসীরা রেকর্ড ৩২৯ কোটি বা ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন। এর আগে কখনই এক মাসে এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি। এক্ষেত্রে রমজান মাস ও ঈদুল ফিতরের বড় ভূমিকা ছিল।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, মার্চের ধারাবাহিকতায় এপ্রিলেও রেমিট্যান্সে বড় প্রবৃদ্ধি অর্থনীতির জন্য ভালো সংবাদ। সাধারণত ঈদের পরের মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা কমে যায়। কিন্তু গত বছরের পুরো এপ্রিলে যা এসেছিল, এবার ২৬ দিনেই তার চেয়ে অনেক বেশি প্রবাসী আয় এসেছে। রেমিট্যান্সের বড় উল্লম্ফনের পেছনে দেশ থেকে অর্থ পাচার ও হুন্ডির তৎপরতা কমে যাওয়ার প্রভাব রয়েছে।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান তথা গত বছরের ৫ আগস্ট থেকেই দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় প্রবৃদ্ধি শুরু হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ২১ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে)। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৭ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরে প্রবাসীরা ৪ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার বেশি পাঠিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ।
বিদ্যমান প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হলে চলতি বছর রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে মনে করেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘বিদেশে হুন্ডির চাহিদা তৈরি হয় দেশ থেকে। বাংলাদেশীদের পাচারকৃত অর্থের বড় অংশ বিদেশে প্রধান শ্রমবাজারগুলো থেকে সংগ্রহ করা হয়। গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশ থেকে টাকা পাচারের পথ অনেকটাই সংকুচিত হয়ে এসেছে। এ কারণে বিদেশে হুন্ডি কারবারিদের চাহিদাও কমে গেছে। কালোবাজারে চাহিদা কমলে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ে। বর্তমানে ব্যাংক খাতে রেমিট্যান্স প্রবাহে যে উল্লম্ফন আমরা দেখছি, সেটি তারই প্রভাব।’
রেমিট্যান্সের বিদ্যমান প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর হতে হবে জানিয়ে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘টাকা পাচার বন্ধ হলে হুন্ডির তৎপরতাও কমে যাবে। প্রবাসী বাংলাদেশীরা বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে আরো বেশি উৎসাহিত হবেন। আর যে প্রবাসীরা অর্থনীতিতে এত বড় ভূমিকা রাখছেন, তাদের জন্যও সরকারের দিক থেকে সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে ২০২০-২১ অর্থবছরে। কভিড মহামারীর ওই বছরে প্রবাসীরা রেকর্ড ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠান। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলারের প্রবাসী আয় দেশে আসে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা বেড়ে ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যমান প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে ২৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসার সম্ভাবনা রয়েছে।