South east bank ad

কৃত্রিম সংকটে সারের ঘাটতির আশঙ্কা

 প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   কনজুমার প্রোডাক্টস

কৃত্রিম সংকটে সারের ঘাটতির আশঙ্কা

দেশের খাদ্যশস্য উৎপাদনের সবচেয়ে বড় মৌসুম ‘বোরো’। অক্টোবর-নভেম্বরে দেশে শুরু হয় বোরো আবাদ।
তবে এবার বোরো আবাদে কৃত্রিম সংকটে সারের ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।  

কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বোরো মৌসুমে সারসহ চাষাবাদের প্রয়োজনীয় উপকরণের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। দেশে মোট রাসায়নিক সারের ৭০ শতাংশেরও বেশি ব্যবহৃত হয় শুধু বোরো ও রবি মৌসুমে। ফলে আসন্ন মৌসুমে সারের প্রয়োজনীয় জোগান নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

সার না পাওয়ায় কৃষি উৎপাদন ব্যাহত ও এর ফলে দেশব্যাপী খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে আকস্মিক রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়। গণঅভ্যুত্থানে ছেড়ে দেশ ছেড়ে পালান ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে সৃষ্ট অস্থিরতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশের কিছু সুবিধাভোগী গোষ্ঠী সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির পাঁয়তারা শুরু করে।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) নিয়োগকৃত ঠিকাদার এজেন্টদের মাধ্যমে গত ১৮ বছর ধরে খুলনার শিরোমণি এলাকার ‘এজাক্স জুট মিল’ ঘাটে বিভিন্ন প্রকার সার ডাম্পিং করা হয়ে থাকে। সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের বিএডিসির গুদামে এসব সার সরবরাহ করা হতো। গত ৮ আগস্ট থেকে এজাক্স জুট মিল ঘাট থেকে কোনো প্রকার সার বিএডিসির গোডাউনে সরবরাহ করা যাচ্ছে না।

বিএডিসির চেয়ারম্যানের কাছে আমদানিকারক ঠিকাদারদের দেওয়া চিঠির মাধ্যমে জানা গেছে, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনে মো. কাওছার জামান বাবলা নামক জনৈক ব্যক্তি ওই ঘাটের প্রকৃত মালিক দাবি করে ড্যাম্পিংকৃত সার এজাক্স জুট মিল ঘাট থেকে পরিবহনে বাধা দিয়ে আসছেন। পাশাপাশি বিএডিসির সরকারি সার গোপনে বিক্রি করার হুমকি দিয়ে আসছেন। যার ধারাবাহিকতায় গত ১ নভেম্বর বিএডিসির ঠিকাদারদের সিকিউরিটি/প্রতিনিধিকে ওই ঘাটে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, আমদানিকারক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ২২ হাজার ৪৬৩ দশমিক ৪ মেট্রিকটন টিএসপি ও ডিএপি সার মজুদ রয়েছে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ১০০ কোটি টাকা।

এজাক্স ঘাট থেকে সার পরিবহনে বাধা দেওয়ার কারণে বিএডিসির নিযুক্ত ঠিকাদাররা করপোরেশনের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ জানান এবং সহায়তা কামনা করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ওই ডাম্পিংকৃত সার উদ্ধারের জন্য বিএডিসির কর্তৃপক্ষ ২২ আগস্ট এবং ২৫ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক খুলনা, খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানান। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে ওই সহায়তা শুধুমাত্র কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সার সংকটের প্রভাবে ধান, গম, আলু, এবং সবজি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সারের অভাবে জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে, ফলে ফসলের উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে। কৃষকরা বাধ্য হয়ে কম জমিতে ফসল ফলাচ্ছেন এবং অনেক কৃষক তাদের জমি চাষাবাদ থেকে বিরত থাকছেন। ফলস্বরূপ দেশের খাদ্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে এবং বাজারে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি উৎপাদনে প্রভাব পড়ার কারণে দেশের খাদ্য সরবরাহ হ্রাস পাচ্ছে। দেশের জনগণের জন্য খাদ্যের সহজলভ্যতা সংকটে পড়তে পারে।  

কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সংকট দীর্ঘায়িত হলে খাদ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে এবং নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য সংগ্রহ কঠিন হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্য সংকট ও পুষ্টিহীনতার ঝুঁকি বাড়তে পারে। সরকারের উচিত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই সংকট মোকাবিলা করা। সঠিক পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে সার সরবরাহে স্থিতিশীলতা আনার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক। একইসঙ্গে রাজনৈতিক পরিবর্তনজনিত বাধাগুলো দূর করতে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা এবং সার সরবরাহে নিয়োজিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা জরুরি।  

এর মাধ্যমে দেশের কৃষকদের জন্য সারের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা অক্ষুণ্ন রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সারের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬৮ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টন। চলতি অর্থবছরে এ চাহিদার পরিমাণ কিছুটা বেড়ে প্রায় ৬৯ লাখ টনে দাঁড়াতে পারে। যদিও এর বিপরীতে সরকারি গুদামগুলোয় সারের মজুদ আছে মাত্র ১৭ দশমিক ৭৪ লাখ টন। দেশে সারের মোট চাহিদার চার-পঞ্চমাংশ পূরণ হয় আমদানির মাধ্যমে।

এ বিষয়ে বিএডিসির সচিব ড. কে এম মামুন উজ্জামান বলেন, আমদানিকারক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ আগস্ট বিএডিসি স্থানীয় প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠায়। যেখানে এসব মালামাল উদ্ধারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়।

খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বলেন, সরকারি সার আটকে থাকলে তা উদ্ধারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।

BBS cable ad

কনজুমার প্রোডাক্টস এর আরও খবর: