অন্তর্বর্তী সরকারকে ঢাকার বাইরে পদচারণা বাড়াতে হবে
বৈষম্য একটি বহুমাত্রিক বিষয়। এটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পর্যায়ে বিদ্যমান। ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের ব্যবসায়ীরাও আলাদাভাবে এক ধরনের বৈষম্যের শিকার।
বৈষম্য একটি বহুমাত্রিক বিষয়। এটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পর্যায়ে বিদ্যমান। ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের ব্যবসায়ীরাও আলাদাভাবে এক ধরনের বৈষম্যের শিকার। কৃষক ও প্রান্তিক পর্যায়ের যেসব জনগোষ্ঠী রয়েছে তাদের কথা বলা হয়েছে। শ্রমিকদের বিষয় তো আছে বটেই। সুতরাং সব ক্ষেত্রেই এ বৈষম্য বিদ্যমান। গত ১৫ বছর বাংলাদেশ একটি অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে গেছে যেখানে শুধু প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতি হারিয়ে যায়নি, প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতিও প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল। এখন একটি মোড় ঘোরানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এ সম্মেলনের বিষয়বস্তু বৈষম্য বা আর্থিক অপরাধ বা অর্থনৈতিক নিরাময়ের কথা যাই বলি না কেন—চারটি জায়গায় নজর দেয়া প্রয়োজন। এক. সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্য; দুই. বিনিয়োগ অর্থাৎ বিনিয়োগের ধারাটি উৎসাহিত হচ্ছে কিনা; তিন. কর্মসংস্থান। চার. দৈনন্দিন জীবনের স্বস্তি অর্থাৎ মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় সাধারণ মানুষের জীবন যে ধরাশায়ী সে জায়গায় স্বস্তি কতটুকু হচ্ছে। এ চার বিষয় বড় ধরনের কাজের জায়গা। এছাড়া আর্থিক অপরাধের বিচার কার্যক্রমকে যদি ত্বরান্বিত করতে হয় তাহলে এ আর্থিক অপরাধগুলোর নতুনভাবে আইনি ব্যাখ্যাও তৈরি করা প্রয়োজন। অর্থাৎ এ অপরাধের আওতায় কী কী বিষয় পড়বে সেগুলোর আইনি স্পষ্টতা ও ভাষা দরকার। মেগা প্রকল্পের আওতায় অনেক দুর্নীতি ও নানা অপরাধ হয়েছে। এখন সময় এসেছে এ মেগা প্রকল্পের একটি নতুন শব্দ চালু করার। তবে কিছু মেগা প্রকল্পের আওতায় দেশের জন্য বৃহৎ অবকাঠামোর প্রয়োজন আছে। কিন্তু গত ১৫ বছরে যে অর্থ অপচয় দেখেছি সেগুলোকে মেগা প্রকল্প বলা উচিত নয়। এগুলো হচ্ছে ‘ভ্যানিটি প্রজেক্ট’। কারণ এসব প্রকল্পের কোনো অর্থনৈতিক যুক্তি নেই এবং সেগুলোর মাধ্যমে অর্থনৈতিক অবদানের সুযোগ নেই। সেটা টানেল হোক বা রেল প্রকল্পই হোক; সেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ দেয়া হলো। সেজন্য ‘ভ্যানিটি প্রজেক্টস’ নামে আলাদা একটা সংজ্ঞা চালু হওয়া জরুরি বলে মনে করছি। কিন্তু মেগা প্রকল্প বললে অনেক সময় মনে হয়, বাংলাদেশের মতো দেশে বড় অবকাঠামোর প্রয়োজন রয়েছে। অবশ্যই সেটি দরকার আছে। তবে এসব ‘ভ্যানিটি প্রজেক্ট’ একেবারেই দরকার নেই।
এখন অন্তর্বর্তী সরকার ও ভবিষ্যৎ—এ আলোচনা আরো বেশি জোরদার করা উচিত। অবশ্যই দেশের শ্বেতপত্র হচ্ছে। বিগত সরকার যে অপরাধগুলো করেছে সেগুলো মনে রাখতে হবে। কিন্তু আমরা এখন শোধরানো ও বিনির্মাণের অধ্যায়ে আছি। সুতরাং শোধরানো ও বিনির্মাণ—এ জায়গায় আরো বেশি নজর দেয়া জরুরি। সামষ্টিক অর্থনীতির যে দুর্বলতাগুলো রয়েছে সেগুলো সমাধানে অন্তর্বর্তী সরকার অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন রিজার্ভ স্থিতিশীল হয়েছে; ব্যাংক খাতে এক ধরনের সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে ইত্যাদি। কিন্তু অন্য যে তিনটি সূচক, যথা বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও প্রাত্যহিক জীবনে অর্থনৈতিক স্বস্তি—এ বিষয়গুলো সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে শুধু কারিগরি অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নয়, রাজনৈতিক অর্থনীতির দৃষ্টিভঙ্গিও জরুরি। এটা না হওয়ায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না, বরং স্থবিরতার বাস্তবতা সেখানে বিরাজ করছে। এ অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ নতুন বাণিজ্য উপদেষ্টা উপস্থিত আছেন। অর্থ উপদেষ্টাও বলে গেছেন যে তারা জরুরি ভিত্তিতে দ্রুত পলিসি পদক্ষেপ নিচ্ছেন। কিন্তু পলিসি একটি ইকোসিস্টেম। এ ইকোসিস্টেমের প্রথম পদক্ষেপ পলিসি গ্রহণ, বাস্তবায়ন হচ্ছে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এ দুটো পদক্ষেপ যদি সম্মিলিতভাবে না হয় তখন পলিসি কাগজেই থেকে যায়।
কিছুদিন আগে গাইবান্ধায় স্থানীয় অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছিলাম। সেখানে স্থানীয় পর্যায়ের একজন উদ্যোক্তা বা স্থানীয় অংশীজন মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতার আলোকে পলিসি বাস্তবায়নের পুরো বিষয়কে একটি প্রতীকী বাক্যের মাধ্যমে উপস্থাপন করলেন। সেটি এখানে উপস্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছি। তিনি বললেন, দৃশ্যমান দুর্নীতি কমেছে কিন্তু কাজের গতি আরো কমে গেছে। এখন শেষ বিচারে কোথায় দাঁড়িয়ে আছি আমরা? দৃশ্যমান দুর্নীতি কমা দরকার কিন্তু কাজের গতি যখন আরো কমে গেছে—সেখানে ওই বাস্তবায়ন জগতের স্থবিরতাকে নির্দেশ করছে। বাস্তবায়ন শুধু পলিসি ঘোষণার মাধ্যমে হবে না। এখানে বিভিন্ন অংশীজনকে সম্পৃক্ত করতে হবে। দেশে আমলাতন্ত্রের লালফিতার যে দৌরাত্ম্য বা সংস্কৃতি আছে সেটাকে কীভাবে শক্ত ধাক্কা দিয়ে ভাঙতে হবে—এটাও একটি বড় বিষয়।
বাংলাদেশের জন্য এখন নতুন কিছু সূচকের প্রয়োজন হয়ে গেছে। যেমন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) দুর্নীতি সূচক নিয়ে কাজ করে। তেমনি আমার গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) থেকে বাংলাদেশের জন্য ‘হয়রানি সূচক’ নামে একটি নতুন সূচক চালু করতে চাই। বাংলাদেশে দুর্নীতির চেয়েও হয়রানি বেশি ক্রিয়াশীল। ব্যবসায়ী বা সাধারণ মানুষ সবার ক্ষেত্রেই এ হয়রানির বাস্তবতা দুর্নীতির চেয়েও আরো ভয়াবহ। এগুলো শুধু সদুপদেশ দিয়ে ঠিক হবে না। কার্যকর তদারকিই নয়, এটাকে নানাভাবে নজরে আনা খুব জরুরি।
সংগত কারণেই সামষ্টিক অর্থনীতিতে খুবই ভালো কাজ হচ্ছে। সরকারের গৃহীত উদ্যোগগুলোও প্রশংসিত হচ্ছে। কিন্তু বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে কয়েকটি বিষয় আছে সেগুলোর মধ্যে হয়রানিও আছে। আমার কাছে একটি বিষয় মনে হচ্ছে, যারা বিনিয়োগ করবেন তাদের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে শোনার কাজটাও খুব জরুরি। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে গুরুত্ব দেননি। শোনার আগ্রহ সেভাবে প্রকাশ ও পরিবেশ সরকার তৈরি করেনি, যার মাধ্যমে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা তাদের বক্তব্যগুলো সরকারের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরতে পারবেন। তাই বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের কথাগুলো সরকারের কাছে তুলে ধরার পরিবেশ তৈরি করা জরুরি। অনুষ্ঠানে নতুন বাণিজ্য উপদেষ্টা রয়েছেন, আশা করি তিনি এ বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ নেবেন।
আরেকটি বিষয় অন্তর্বর্তী সরকার ঢাকার মধ্যেই বসে রয়েছেন। তাদের মাঠে যেতে দেখা যাচ্ছে না। মাঠে সরকারের পদচারণা নেই কেন? সরকারকে ঢাকার বাইরে পদচারণা বাড়াতে হবে। সরকারকে তো মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হবে। মানুষ সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। সরকারের কাছেও মানুষের প্রত্যাশা রয়েছে। সরকার একটি দায়িত্ব পেয়েছে। অর্থ উপদেষ্টাও বলে গেছেন তিনি ক্ষমতা পাননি, দায়িত্ব পেয়েছেন। এটিও এক ধরনের শুভংকরের ফাঁকি হয়ে যেতে পারে। কারণ আপনি ক্ষমতায় আছেন, ক্ষমতার জন্য আপনাকে জবাবদিহি করতে হবে। সেই জবাবদিহি হচ্ছে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন কিনা তার ওপর। এখানে সদিচ্ছার ঘাটতি নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু যে দায়িত্ব পেয়েছেন সেটাকে কীভাবে পালন করবেন সেটা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
এবার কর্মসংস্থান নিয়ে বলা যাক। দেশের তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের বাস্তবতা বেশ ভয়াবহ। বর্তমানের পরিবর্তন যে তরুণরা এনেছে, তাদের মধ্যে ৪০ শতাংশের বেশি শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণে নেই। কর্মসংস্থান সৃষ্টি নিয়ে যে পরিসংখ্যানগুলোয় দেখা যায়, উৎপাদন খাতে কর্মসংস্থান সংকোচন হয়েছে, কৃষি খাতে বেড়েছে। কিন্তু এটি মূলত এক ধরনের শ্রম বিভাজন। কিন্তু বাস্তবে প্রতিটি জায়গায় উদ্যোগী মানুষ বসে আছে কাজের সুযোগ, কার্যকর সহায়তা ও প্রণোদনা পাওয়ার জন্য। তাদের দিকেও নজর দিতে হবে। আমাদের নতুন প্রবৃদ্ধির চালক খুঁজে বের করতে হবে। আমরা রেমিট্যান্স ও পোশাক খাতের ওপর নির্ভর করে চলছি ৩০-৪০ বছর। একজন বললেন যে কেন শুধু পোশাক কারখানাগুলোয় বন্ডেড ওয়্যারহাউজের সুযোগ-সুবিধাগুলো দিতে হবে। আমাদের অন্য খাতগুলোরও বিকাশ প্রয়োজন, অন্য খাতের উদ্যোক্তারা উন্মুখ হয়ে আছেন। কৃষি খাত অগ্রগামী এক্ষেত্রে। আগামীর অন্যতম একটি প্রবৃদ্ধির চালক হবে কৃষি খাত যদি আমরা সেভাবে সহায়তার হাত বাড়াতে পারি। তবে কর্মসংস্থান শুধু সরকারি খাতে তৈরি হবে—এ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অগ্রসর হলে বেকারত্বের কোনো সমাধান আসবে না। তাছাড়া সরকারি খাতে কর্মসংস্থান তৈরির মতো অর্থনৈতিক সক্ষমতাও আমাদের নেই। সরকারি খাতের পাশাপাশি ব্যক্তি খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি প্রয়োজন। শুধু শহরকেন্দ্রিকই নয়, বিভিন্ন মফস্বল শহরেই কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরি। কারণ বৈষম্যের আরেকটি দিক হলো আঞ্চলিক বৈষম্য। অনেক অঞ্চল আছে, পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের তকমা যাদের গায়ে এখনো লেগে আছে।
চতুর্থত ও সবশেষ যে জায়গাটির কথা বলা দরকার, তা হলো দৈনন্দিন জীবনে অর্থনৈতিক স্বস্তি। মূল্যস্ফীতি এর সঙ্গে জড়িত। কোনো জাদু দিয়ে তা কমানো সম্ভব নয়, যা সবার জানা। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এক ধরনের পদক্ষেপ ব্যবহার করে সামলানোর চেষ্টা করবেন। কিন্তু আরেকটি হলো বাজারের ওপর নজরদারির ব্যবস্থা তৈরি করা, যেটা মূলত নতুন বাণিজ্য উপদেষ্টার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা ২০০৮-এ একটি প্রতিযোগিতা কমিশন গঠন করেছি, ভোক্তা অধিকার কমিশনও করা হয়েছে। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান দুর্নীতি কমলেও সেটি প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। সেজন্য বাজার নিয়ন্ত্রণে বাজারের ওপর কার্যকর নজরদারি বহুগুণ বাড়াতে হবে। আবার দেখা যাচ্ছে বাজার মনিটরিংও আমাদের আমলাতান্ত্রিক ঔপনিবেশিক সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা।
মনিটরিং শব্দটা বলা মাত্রই যেটি ভেসে ওঠে সেটি হলো অপরাধীদের ধরতে হবে এবং শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু মনিটরিং হওয়া উচিত মূলত আগাম পূর্বাভাস তৈরি করা, সমস্যাগুলোকে আগাম চিহ্নিত করা এবং প্রণোদনাগুলো যেখানে দেয়া প্রয়োজন সেখানে দেয়ার ব্যবস্থা করা। কিন্তু আমরা এখনো আমলাতান্ত্রিক মনিটরিং ধারণার মধ্যে আটকে আছি—‘ধরো আর শাস্তি দাও’। আদতে এটা কোনো কাজে দেয় না। বাজার তদারকির ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের কষ্ট আমরা কতটুকু গুরুত্ব দিচ্ছি সেটাও বিবেচ্য। একই সঙ্গে এখানে দাম কমানো যেমন একটি বিষয়, তেমনি পকেটের আয় বাড়ানোটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এ দুই মিলে একটা ভারসাম্য অবস্থা তৈরি হয়। কেবল নীতিবই দেখে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা কোনো কার্যকর পন্থা নয় এবং এটা রাতারাতি কমানোও সম্ভব নয়। মানুষের আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হলো নোয়াখালীর একটা বৃহৎ অঞ্চল, সেটি এখনো জলাবদ্ধতার মধ্যে রয়েছে। ওরা অনুরোধ করেছিল ত্বরিত কোনো প্রোগ্রামের জন্য যাতে ওই জলাবদ্ধতা কাটিয়ে তারা কৃষি উৎপাদনে ফিরে আসতে পারে। গাইবান্ধার মানুষেরও একই আবেদন আছে। সুতরাং আমাদের মাঠ বাস্তবতার সঙ্গে সম্পৃক্ততা বহুগুণ বাড়ানো দরকার। যদি সেটা না হয় তাহলে কাঙ্ক্ষিত সমাধানে পৌঁছানো যাবে না।
অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক সরকার নয়। কিন্তু যেকোনো সরকারেরই একটি রাজনৈতিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে। কারণ মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা শুধু একটি অর্থনীতির বই নয়। এখানে বহুমুখী স্বার্থ আছে। সেগুলোকে সামাল দেয়াটাও আবশ্যক।
নতুন বাণিজ্য উপদেষ্টা ব্যক্তি খাত থেকে এসেছেন। বাস্তবায়নের চিন্তা ছাড়া গতানুগতিক আমলাতান্ত্রিক ধারণা থেকে নীতি গ্রহণ করলে সেই একই গোলকধাঁধার মধ্যে আটকে থাকতে হবে। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশে সম্ভাবনার জায়গা তৈরি হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার পতন হয়, তখন প্রবল একটি জাতীয় ঐক্য তৈরি হয়েছিল এবং এটা এখনো আছে। যারা ক্ষমতা হারিয়েছে তারা ছাড়া সবাই ঐক্যবদ্ধ ছিল। কিন্তু এ ঐক্যবদ্ধ মানসিকতা ধরে রাখা খুব জরুরি। লক্ষ করা যাচ্ছে, নানা ধরনের বিভেদ প্রসারিত হচ্ছে। ঐক্যবদ্ধ মানসিকতাই একটি বড় শক্তি।
ব্যাংক খাতের অর্থকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি, কিন্তু ঐক্যবদ্ধ শক্তি সেই অর্থের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ নয়। সেদিকে নজর দেয়া দরকার। কারণ বাংলাদেশে অবশ্যই একটা পরিবর্তন হচ্ছে। সেখানে সংস্কার হবে। রাজনৈতিক উত্তরণের সুস্পষ্ট একটা পথরেখা পাব। কিন্তু একই সঙ্গে মানসিক উত্তরণও অত্যন্ত জরুরি হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা