স্মৃতিসৌধের পরিদর্শক খাতায় যা লিখেছেন মোদি

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে দুই দিনের ঢাকা সফরে এসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরপর পরিদর্শক খাতায় নিজের অনুভূতি লিখেছেন তিনি।
নিয়ম অনুযায়ী তারিখ, পুরো নাম ও নিজের পদবী উল্লেখের পর নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, ‘আমি বাংলাদেশের আন্তরিক শ্রদ্ধা নিবেদন করছি দেশপ্রেমী শহীদদের, যাদের গৌরবময় ত্যাগ এই মহান জাতির জন্মকে সক্ষম করেছে। এই শ্রদ্ধেয় ভূমির প্রত্যেক দর্শনার্থী নিহত হয়েছেন কিন্তু নিরব না হয়ে থাকা লক্ষ লক্ষ মানুষের পবিত্র স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারেন। তাদের বীরত্ব ভবিষ্যতের প্রজন্মকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং ন্যায়পরায়ণতার কারণটিকে রক্ষা করতে অনুপ্রাণিত করবে। ভারতের জনগণের পক্ষে, আমি প্রার্থনা করি যে সেভারে চিরন্তন শিখা প্রতারণা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সত্য ও সাহসের উজ্জ্বল বিজয়ের এক চিরস্থায়ী স্মৃতি হয়ে থাকবে।’
এরপর নিজের স্বাক্ষর দিয়ে ২৬.০৩.২০২১ জুড়ে দেন মোদি। তার লেখা কথাগুলোর একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে শেয়ার করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে অর্জুন গাছের চারা রোপণ করেছেন মোদি। এরপর তাতে জল ঢেলেছেন। তার পাশে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে আজ সকালে ঢাকায় এসেছেন নরেন্দ্র মোদি। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী একটি উড়োযান সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। প্রতিবেশী দেশের সরকারপ্রধানকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
ঢাকায় পৌঁছার পর বঙ্গবন্ধু কন্যাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাংলায় টুইট করেন মোদি। বিমানবন্দরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে লালগালিচা সংবর্ধনা এবং গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন তিনি।
হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন ও মোদি কিছুক্ষণ আলোচনা করেন। এরপর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও ঢাকা হোটেলে মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোট এবং জাতীয় পার্টির রাজনীতিবিদরা। একই স্থানে ক্রীড়া ও সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন অঙ্গনের সফল তরুণরা মোদির সঙ্গে আড্ডায় অংশ নেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, সালমা খাতুন ও জাহানারা আলম, অভিনেত্রী জয়া আহসান, নুসরাত ফারিয়া, নির্মাতা রেদোয়ান রনি, সংগীতশিল্পী শারমিন সুলতানা সুমি।
বিকেলে মুজিব কোট পরে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘মুজিব চিরন্তন’ শীর্ষক মূল প্রতিপাদ্যে ১০ দিনের অনুষ্ঠানমালার সমাপনীতে হাজির হন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকে ভারত সরকার প্রদত্ত গান্ধী শান্তি পুরস্কার তার কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানার হাতে তুলে দেন মোদি। নিজের ভাষণে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সমর্থনে আন্দোলন করার স্মৃতি রোমন্থন করেন তিনি। একইসঙ্গে ভাষা শহীদ সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারকে স্মরণ করেন।
গোবিন্দ হালদারের লেখা ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা, আমরা তোমাদের ভুলব না’ গানের কথা উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের স্মরণ করেন মোদি। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ থেকে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ জোরালো কণ্ঠে উচ্চারণ করেন তিনি।