'ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার' অনুসরণ, বাগান থেকে নামছে আম
আমের রাজধানীখ্যাত রাজশাহীতে মধুমাস জ্যৈষ্ঠের প্রথম দিন শুক্রবার (১৫ মে) থেকে আম ভাঙা শুরু হয়েছে। আর আগাম গুটি জাতের এ আম ভাঙার মধ্য দিয়েই চলতি মৌসুমে প্রথম আম বাজারে এসেছে।
এবারও গাছ থেকে পরিপক্ব আম নামানের জন্য আগেই সময় বেঁধে দিয়েছিল রাজশাহী জেলা প্রশাসন।
'ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার' অনুসরণ করে সেই অনুযায়ী এখন রাজশাহীর বিভিন্ন বাগান থেকে আম নামছে।
তবে গাছ থেকে পরিপক্ব আম নামলেও এটি কিছুদিন ঘরে রেখে পাকিয়ে তারপরই খেতে হবে। তবে এরই মধ্যে দেশের বাজারে রাজশাহীর পাকা আম পাওয়া যাচ্ছে।
যদিও সব আম রাজশাহীর নয়। রাজশাহীর নাম দিয়ে বিক্রি হচ্ছে। তাই বাজার থেকে পাকা আম কেনার আগে কিছু বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। কারণ আমের অনেক জাত রয়েছে। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না কোন আম কোন সময় বাজারে পাওয়া যায়। তাই অনেক সময় আম কিনতে গেলে সন্দেহ হয় যে, আম আসলেই পাকা তো?
এ সময়ে বেশিরভাগ আম ক্ষতিকর রাসায়নিক দিয়ে পাকানো হয়ে থাকে। বাজারে আম কিনতে গেলে আম উপরে দেখে বোঝার উপায় নেই পাকা নাকি কাঁচা। আর কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো আম স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
কেমিক্যাল মানুষের শরীরে গেলে ত্বকের ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, জরায়ুর ক্যান্সার, লিভার ও কিডনির সমস্যা, মস্তিষ্কের ক্ষতির মতো মারাত্মক রোগ হতে পারে। তাই পাকা আম দেখে কিনতে হবে। আর চেনার সহজ উপায় হচ্ছে বেশি চকচকে দেখায় এমন আম কখনোই কেনা যাবে না। গাছপাকা আমের গায়ে মিষ্টি গন্ধ থাকবেই। এ বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে নাকের কাছে আম নিয়ে পরখ করে নিতে হবে। জানতে হবে কোন আম কখন পরিপক্ব হয়।
রাজশাহীর বিশিষ্ট লেখক ও আম গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী 'আম' নিয়ে তার প্রকাশিত গ্রন্থে বলেছেন, পোক্ত, পুষ্ট ও পরিপক্ব আম চাইলে আরও একটু সময় অপেক্ষা করতে হবে। ভোক্তা সচেতনভাবে সঠিক সময়ে তার পছন্দের আমটি কিনতে পারলে বিষমুক্ত আমের প্রভাব থেকে নিজেকে ও পরিবারের অন্য সদস্যদের মুক্ত রাখতে সক্ষম হবেন।
তার মতে, রাজশাহীতে গোবিন্দভোগ আম ২৫ মের পর পরিপক্বতা আসে। গুলাবখাস জাতের আম ৩০ মের পর পরিপক্বতা আসবে। জাত আম গোপালভোগ পরিপক্ব হবে ১ জুনের পর। রাণীপছন্দ আমে পরিপক্বতা আসবে ৫ জুনের পর। হিমসাগর বা খিরসাপাত আমে পরিপক্বতা আসবে ১২ জুনের পর। ল্যাংড়া আমে পরিপক্বতা আসবে ১৫ জুনের পর। লক্ষ্মণভোগ আমের পরিপক্বতা আসবে ২০ জুনের পর। হাঁড়িভাঙা আমের পরিপক্বতা আসবে ২০ জুনের পর। এছড়া আম্রপালি আমের পরিপক্বতা আসবে ১ জুলাই থেকে। মল্লিকা আমের পরিপক্বতা আসবে ১ জুলাই থেকে। ফজলি আমের পরিপক্বতা আসবে ৭ জুলাই থেকে এবং সর্বশেষ আশ্বিনা আমের পরিপক্বতা আসবে ২৫ জুলাই থেকে।
দেশের মাটিতে ফলা নির্দিষ্ট ধরনের আমের রয়েছে সুনির্দিষ্ট জীবনচক্র। ক্যালেন্ডারের নিয়ম মেনেই আম পরিপক্ব হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, মে মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয় আমের এ মওসুম। চলে আগস্ট পর্যন্ত। তাই গুটি আম দিয়ে শুরু হলেও গোবিন্দভোগ, গোপালভোগসহ ভালো জাতের আমের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও ১০/১৫ দিন।
আমে যাতে ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানো না হয় সেজন্য হাইকোর্ট থেকে আগেভাগেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট তদারকি সংস্থাগুলোকে বাগানগুলো নজরদারি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই গত ১৫ মে জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম দিন থেকে রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় আম পাড়া শুরু হয়েছে। রাজশাহী জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত ও বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী ১৫ মে থেকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে। তবে কোনো আম আগে পাকলে স্ব-স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানাতে হবে। তার পরিদর্শন শেষেই গাছ থেকে নামানো যাবে আম।
রাজশাহীতে সাধারণত সবার আগে পাকে গুটি জাতের আম। জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ মে থেকে এ আমটি নামাতে পারছেন চাষিরা। আর উন্নতজাতের আমগুলোর মধ্যে গোপালভোগ ২০ মে, রাণীপছন্দ ২৫ মে, লক্ষণভোগ বা লখনা নামানো যাবে ২৫ মে থেকে এবং খিরসাপাত বা হিমসাগর ২৮ মে থেকে নামানো যাবে।
এছাড়া ল্যাংড়া আম ৬ জুন, আম্রপালি ও ফজলি ১৫ জুন থেকে নামানো যাবে। আর সবার শেষে ১০ জুলাই থেকে নামানো যাবে আশ্বিনা ও বারি-৪ জাতের আম।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দিন বলেন, গুটি আম প্রতিবছরই একটু আগে পাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তাই অনেকেই গুটি আম নামাতে শুরু করেছেন। তবে আঁশযুক্ত এ আমের স্বাদ তুলনামূলক কম।
বিভিন্ন জাতের জনপ্রিয় আমের পরিপক্বতা আসার সময়কালের মধ্যে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহের পর উঠবে গোপালভোগ আম। অত্যন্ত সুস্বাদু, আঁশবিহীন, আঁটি ছোট আম। সাইজ মাঝারি, কেজিতে ৫ থেকে ৬টা ধরবে। এর পর পাকা শুরু হবে ল্যাংড়া ও হিমসাগর আম।
তাই রাজশাহীতে জুনের প্রথম ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে উঠবে ল্যাংড়া আম। নাম ল্যাংড়া হলেও এর স্বাদ অসাধারণ। আঁটি ছোট ও পাতলা, খোসা খুব পাতলা, রসালো, গায়ে শুধুই মাংসল। এভাবে পর্যায়ক্রমে রাজশাহীর সব আম নামতে শুরু করবে বলেও জানান রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।