নতুন জেলা প্রশাসকের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর : ফেসবুকে খুলনাবাসীর উদ্দেশ্যে হেলাল হোসেনের আবেগময় পোস্ট
দুই বছর ১০ মাস দায়িত্ব পালন করে বিদায় নিলেন খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন। রোববার সকালে নতুন জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদারের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন তিনি।
সরকারি কর্মকর্তা হয়েও খুলনার জেলার উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে খুলনাবাসীর মনে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন। বিশেষ করে খুলনায় দেশের পঞ্চম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য ৯টি উপজেলায় অক্সিজেন ব্যাংক স্থাপন, হাইফ্লো নেজাল ক্যানোলা ও আইসিইউ ইউনিটের ভিত্তিমূল স্থাপন, খুলনা শিশু হাসপাতালের জন্য ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ আনা, অনলাইনে ক্লাস করার জন্য ১ হাজার ৭৫০ জন শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে স্মার্টফোন প্রদান, শতাধিক শিক্ষার্থীকে আউটসোর্সিং প্রশিক্ষণ প্রদান করে অনলাইনে আয়ের ব্যবস্থা করা এবং খুলনার রূপসা উপজেলায় নতুন একটি অর্থনৈতিক জোন স্থাপনের উদ্যোগের কারণে আগামীতেও তাকে মনে রাখবে খুলনার মানুষ। পতিতাপল্লীর শিশুদের জন্য পৃথক হোস্টেলের ব্যবস্থা, নিজস্ব উদ্যোগে খুলনা কালেক্টরেট জামে মসজিদের সীমানা প্রাচীরসহ দ্বিতীয় তলা সম্প্রসারণ, খুলনায় প্রথমবারে মতো শেখ রাসেল আন্তর্জাতিক টেনিস টুর্নামেন্টের আয়োজন করা, শেখ রাসেল আন্তর্জাতিক টেনিস কমপ্লেক্স স্থাপন, শেখ জামাল টেনিস একাডেমি, শেখ রাসেল ইকোপার্কের ভৌত উন্নয়ন, সার্কিট হাউজে বঙ্গবন্ধু সংগ্রহশালার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে মোহাম্মদ হেলাল হোসেন এর সময়কালে।
গত ৩ বছরে তার অন্যতম মানবিক উদ্যোগ ছিলো গতবছর চালু করা ‘বেসরকারি মানবিক সহায়তা সেল’। করোনায় কর্মহীন নিম্ন আয়ের মানুষের বিনামূল্যে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ায় ছিলো এই সেলের কাজ। গত দুই বছরে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের কাছে খাদ্য পৌছে দিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। একজন সরকারি কর্মকর্তার উদ্যোগে এমন কার্যক্রম ইতোপূর্বে কখনও হয়নি। এ ছাড়া অসংখ্য কর্মহীন নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সেলাই মেশিন প্রদান, পুরুষদের ভ্যান গাড়ি প্রদান, প্রতিবন্ধিদের হুইল চেয়ার প্রদান করা হয়েছে।
যে কোনো কাজ সহজ করতে তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটানোতেও হেলাল হোসেন ছিলেন এগিয়ে। দেশে প্রথমবারের মতো শুরু হওয়া ‘ডিজিটাল ভূমি তথ্য ব্যাংক’ এর উদ্যোগ শুরু হয় খুলনা থেকেই। মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে ভূমি সংক্রান্ত সেবা পৌঁছে গেছে এখন সারা দেশে। এ ছাড়া মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে ধান-চাল সংগ্রহ, বিভিন্ন সেবা প্রদানে অ্যাপস চালু করেন।
বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকীতে দেড় লাখ ক্ষুদে কণ্ঠে পরিবেশিত হয় ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষন, যা দেশে ব্যাপকভাবে প্রচার পায়। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট খুলনার জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দেন মোহাম্মদ হেলাল হোসেন।
দায়িত্ব হস্তান্তরকালে খুলনাবাসীর উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসকের ফেসবুক পেজে তিনি লিখেছেন,
" প্রিয় খুলনাবাসী,
আসসালামু আলাইকুম। আমি মোহাম্মদ হেলাল হোসেন দীর্ঘ দুই বছর দশ মাস সরকারের পক্ষ থেকে খুলনাবাসীর জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলাম। আমার এ দীর্ঘ চাকুরিকালে স্থানীয় জনগণ, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সরকারি-বেসরকরি কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, সুশীল সমাজ, শিক্ষক সমাজ, সাংবাদিকবৃন্দ সহ সর্বস্তরের জনগণের সাথে সমন্বয় করে সরকারের অর্পিত দায়িত্ব পালনকালে যদি কেউ আমার আচার আচরণে কষ্ট পেয়ে থাকেন, তবে তা নিতান্তই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি আজ আমার অনুজ সহকর্মী মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদারের নিকট জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব হস্তান্তর করে প্রিয় খুলনা ত্যাগ করে চলে যাচ্ছি। চাকুরির সুবাদে খুলনায় আসা হলেও খুলনার মাটি ও মানুষের সাথে এ দীর্ঘ সময়ে জড়িয়ে গেছে আমার আত্মিক বন্ধন। যতদিন আমি বেঁচে থাকবো ততদিন আমার স্মৃতিতে প্রিয় খুলনা চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।
আপনারা আমার জন্য ও আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন, যেন সুস্থ ও সুন্দরভাবে আমার ওপর পরবর্তী অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারি। ধন্যবাদ সবাইকে"