South east bank ad

রোখো ষড়যন্ত্র, মুখোশ খোলো অর্থের জোগানদাতাদের

 প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   সম্পাদকীয়

রোখো ষড়যন্ত্র, মুখোশ খোলো অর্থের জোগানদাতাদের

পীর হাবিবুর রহমান :

চারদিকে শুরু হওয়া সরকারবিরোধী গভীর ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে মোটা অঙ্কের অর্থদাতা কারা? এ প্রশ্ন বারবার এসেছে, যখন বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ থেকে সরকারবিরোধী তৎপরতা ব্যাপক মাত্রায় দেখা দিয়েছে। এখন পর্যবেক্ষকদের মতে, বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চেয়ে জামায়াতের চিন্তা-চেতনা-আদর্শ লালন-পালন করা ব্যবসায়ীরাই এ ক্ষেত্রে বরাবর উদার হাতে অনুদান করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে যারা বর্ণচোরা, মননে-আদর্শে জামায়াতি, কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্যে সুবিধাবাদীর মুখোশে রাতারাতি চেহারা পাল্টিয়ে শেখ হাসিনার সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা এক যুগ ধরে পেতে পেতে চলনে-বলনে বাইরে নব্য আওয়ামী লীগ বা সরকার অনুগত চরিত্রের খোলসে সফল হয়েছেন। সর্বোচ্চ জামায়াতি অনুদানের এই মোড়লরা সরকারের ছায়ায় থেকেই ব্যাংক-বীমা ব্যবসার সঙ্গে জড়িতই নন, সফলতা কুড়িয়ে সমাজেও দাপটের সঙ্গে বিচরণ করেন। কেউ কেউ এয়ারলাইনস ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত। এরা ব্যাংক লুটেরাই নন, অর্থ পাচারকারীদের সারিতেও আলোচিত। আওয়ামী লীগ যেমন দলে এক যুগ ধরে অনুপ্রবেশকারী হাইব্রিড খ্যাত বিএনপি-জামায়াতের কথা বললেও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি, তেমনি সরকার বা দলও এসব বিএনপিমনা ও জামায়াতি ব্যবসায়ীদের সরকারবিরোধী বিদেশি ষড়যন্ত্রের বড় অনুদানদাতাদের চেনা দূরে থাক, নিজের খাস লোক মনে করে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। আর তারা একদিকে আর্থিকভাবে বেনিফিশিয়ারিই হচ্ছে না, সরকারের খেয়ে-পরেই নির্বিঘ্নে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের পেছনে বড় অনুদান দিয়ে যাচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রের এই বিনিয়োগকারীদের মুখোশ খুলে অর্থের জোগানদানের উৎস বন্ধ না হলে ষড়যন্ত্রও বন্ধ হবে না। এদের এখনই চিহ্নিত করতে হবে। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার শুরুর সময় থেকেই লন্ডন-নিউইয়র্কভিত্তিক সক্রিয়দের মাধ্যমে অনুদান ও দেশে দেশে লবিস্ট নিয়োগ থেকে যে তৎপরতা শুরু হয়েছিল, তা এখনো থামেনি। সম্প্রতি এই শক্তির সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র নতুন মাত্রায় যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে সরকারের গুডবুকে ঠাঁই পাওয়া জামায়াতি-বিএনপি ব্যাংক-বীমা মালিকদের বা ব্যবসায়ীদের অনুদান। বিএনপির আদর্শে বিশ্বাসী কিন্তু এক যুগে ধীরে ধীরে সরকারের আনুকূল্য লাভ করা ব্যবসায়ীদেরও একাংশ এদের সঙ্গে রয়েছেন। করোনাকালে যখন প্রতাপশালীরা মুখ থুবড়ে পড়েছে, শেখ হাসিনা তখন দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষার লড়াইয়ে ক্যারিশমা দেখিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন। ঠিক এমন সময় সরকারবিরোধী গভীর ষড়যন্ত্রের তৎপরতা আবার মাথাচাড়া দিয়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের এক যুগ পূর্তির সময় কাতারভিত্তিক বহুল আলোচিত আলজাজিরা টেলিভিশনের বিতর্কিত এক প্রতিবেদন সেই ষড়যন্ত্রের তৎপরতাকে আবার সামনে এনেছে। পর্যবেক্ষকরা এমনটাই মনে করছেন। পর্যবেক্ষকদের মতে, ষড়যন্ত্র কখনোই থেমে ছিল না। সরকারবিরোধী নানামুখী ষড়যন্ত্র ও গোয়েবলসীয় অপপ্রচারের হেডকোয়ার্টার লন্ডন। নির্বাসিত দন্ডিত বিএনপি নেতার নীলনকশা হলেও সঙ্গে অনেকে জুটেছেন। নিউইয়র্ক নেটওয়ার্ক এখান থেকে নিয়ন্ত্রিত। অর্থের জোগানটা কেবল জামায়াতি ও বিএনপির ব্যবসায়ীরা দেন। কখনো গণআন্দোলন, কখনোবা আন্তর্জাতিক মহলের চাপ, আবার কখনো দেশের বিচার বিভাগ থেকে রাষ্ট্রযন্ত্র হয়ে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে বিভ্রান্তির জালে ফেলে দেশকে অস্থির অশান্ত করে শেখ হাসিনার সরকারকে সরিয়ে দেওয়ার নানামুখী তৎপরতা হয়েছে। সব পথে বারবার ব্যর্থ হলেও মোটা অঙ্কের বাজেট নিয়ে লন্ডন-আমেরিকাভিত্তিক নানা ধরনের লবিস্ট নিয়োগ অব্যাহত রাখা হয়েছে। এই তৎপরতাকে সেখানে তীব্র করতে বিএনপি-জামায়াতের কট্টরপন্থিরাই সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। বিএনপির কাজে অতীতে মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের নামে চিঠি জালিয়াতি থেকে অমিত শাহর টেলিফোন নাটকের বিতর্ক থাকলেও জামায়াতিদের তৎপরতা অনেকটা কথা কম কাজ বেশির মতো এবং তারা অপপ্রচারে আন্তর্জাতিক প্রচারমাধ্যমকেও ব্যবহার করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আলজাজিরার প্রতিবেদনকে কড়া সমালোচনায় নাকচই করেনি, এর বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও বলেছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও কড়া প্রতিবাদ করেছেন। জানা যায়, মোটা অঙ্কের অনুদানেই এমন বিতর্কিত প্রতিবেদনে জোর করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিতর্কিত করার অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে। দেশের বাইরে থেকে বেশ কিছুদিন ধরে ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও সরকারের বিরুদ্ধে, এমনকি দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার জন্য বেশ কিছু চেনা মুখ অব্যাহত মনগড়া কল্পকাহিনি ও বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন, যা ছিল সীমা লঙ্ঘনের চূড়ান্ত। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের চরিত্র হননেরও নিরন্তর প্রচেষ্টা চলেছে। জানা যায়, জামায়াত-বিএনপির আর্থিক অনুদানে এই চরম সরকারবিরোধী অপপ্রচারকারীরা জীবিকা নির্বাহই করছেন না, মোটা অঙ্কের অনুদানও পাচ্ছেন। আলজাজিরা মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিরুদ্ধে সরকার বিচার শুরু করলে ধারাবাহিক প্রতিবেদন করে বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছে। একাত্তরের সুমহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর, যারা মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের বিচারের দাবি ছিল জাতির আবেগ-অনুভূতির উৎস থেকে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা গণরায় নিয়ে সরকার গঠন করলে বিচার শুরু হয়। তখন থেকেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে এটি থামিয়ে দিতে জামায়াত জোর তৎপরতা চালায়। অর্থ ঢালে লবিস্ট নিয়োগে। জামায়াতের পাশেই থেকেছে বিএনপি। এখনো সম্পর্ক ছাড়েনি। দেশে হরতাল অবরোধ সহিংসতা, নির্বাচন বর্জন, হেফাজতের তান্ডবকে সমর্থনসহ সব পথে গণআন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিদেশে বসে নানা ষড়যন্ত্রের পথটিই বেছে নিয়েছে চূড়ান্ত প্রক্রিয়ায়। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ঘটনা তো সবারই জানা। সরকার রাজনীতিতে বিএনপিকে দুর্বল ও জামায়াতকে আড়ালে নিতে পারলেও তাদের পথের অনুসারী বর্ণচোরা সুবিধাবাদী ব্যবসায়ীদের বা অর্থের উৎস বন্ধ করতে পারেনি। বরং সরকারের সঙ্গে মিশে গিয়ে বহাল তবিয়তে প্রতাপের সঙ্গে তারা বাণিজ্য করছে। জামায়াত ব্যবসায়ীদের অনুদানে লন্ডন-নিউইয়র্ক থেকে দেশের অভ্যন্তরেও ষড়যন্ত্র বিস্তার হচ্ছে। শেখ হাসিনা মানেই সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীই নন, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক শক্তির ঐক্যের প্রতীক। উন্নয়নের মডেল বাংলাদেশের প্রতীক। স্থিতিশীলতার প্রতীক। ১০ লাখ রোহিঙ্গাকেও আশ্রয় দিয়েছেন। বর্বর মিয়ানমার সামরিক জান্তা আবার ক্ষমতা নিয়েছে। রোহিঙ্গা কবে নেবে এটা বড় প্রশ্ন! এই সময়ে সব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ, ১৪-দলীয় মহাজোট, এক কথায় দেশের জনগণকেই শেখ হাসিনার পাশে ঐক্যবদ্ধ থাকার সময় বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। কারণ অতীতের শিক্ষা, ষড়যন্ত্র অশুভ শক্তির হয় শুভ শক্তির বিরুদ্ধে। একে রুখতে ঐক্যের বিকল্প নেই। ষড়যন্ত্র রোখো, ষড়যন্ত্রের পেছনে অর্থের জোগানদাতাদের মুখোশ খোলো।

(পীর হাবিবুর রহমান , নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন)

BBS cable ad

সম্পাদকীয় এর আরও খবর: