সম্মিলিত ব্যাংকার্স হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে ব্যাংকার্স ক্লাব অব বাংলাদেশ
মো. তারেক উদ্দিনঃ ব্যাংক হচ্ছে দেশের অর্থনীতির ব্লাড লাইন। ব্যাংকিং খাত সচল তো অর্থনীতিও থাকে সচল গতিশীল। যে দেশের অর্থনীতি যতো শক্তিশালী সে দেশের উন্নয়নও ততোধিক গতিময়, দেশ হয়ে ওঠে উন্নত দেশের একটি। এই অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে ব্যাংকাররা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রম হচ্ছে। পালিত হচ্ছে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। সার্বিক মূল্যায়নে দেশ অনেকদূর এগিয়েছে। ইতোমধ্যে দারিদ্র্যের অর্থাৎ স্বল্প আয়ের কাতার থেকে বাংলাদেশের ঠাঁই মিলেছে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে। মাথাপিছু আয় যেখানে ১৯৭১ সালে ছিল ১২০/১২৫ ডলার, এখন তা ২০৬৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। বলা যায় অভাবনীয় উন্নয়নের পথ বেয়ে চলছে দেশ।
দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠেছে বড় ছোট মাঝারি হাজার হাজার সম্ভবত লাখেরও উপরে শিল্প কারখানা। এক কথায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশ উন্নয়নের বাতাসে স্বস্তির আনন্দ। দেশের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমাগত ভালো হচ্ছে। আর এ সবের পেছনে যে সেক্টরটির অবদান সবচেয়ে বেশি তা হচ্ছে ব্যাংকিং সেক্টর। এই ব্যাংকগুলোর অর্থায়নেই উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীরা ব্যবসা-বাণিজ্য শিল্পায়নে অবদান রাখতে সক্ষম হচ্ছেন। বাড়ছে কর্মসংস্থান, জাতীয় উৎপাদন। বাড়ছে রপ্তানি, বাড়ছে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। অর্থাৎ সার্বিকভাবে বলা যায় বাংলাদেশের এই অভাবনীয় উন্নয়নের পেছনে যাদের অবদান ও ভূমিকা অধিক তা হচ্ছে ব্যাংকিং সেক্টর।
দেশে বর্তমানে রাষ্ট্রমালিকানাধীন, বেসরকারি খাত এবং বিদেশি ব্যাংকের কার্যক্রম সব মিলিয়ে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি। এ ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রণাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থাৎ সব মিলিয়ে দেশে ব্যাংকিং পেশায় প্রায় ৩ লক্ষাধিক লোক নিয়োজিত। যারা ব্যাংকগুলোকে সচল রাখতে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এমনকি এই করোনাকালেও তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
ব্যাংকিং খাতের কর্মপেশা একটি অত্যাবশ্যকীয় পেশা। এখানে ভূমিকম্প বা মহামারিতে কাজ বন্ধ রাখার কোনো সুযোগ নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, হাসপাতাল, বিদ্যুৎ বিভাগের মতো ব্যাংকারদেরও জাতীয় প্রয়োজনেই কাজ করতে হয়। করোনা মহামারিকালেও ব্যাংকারদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে, নিয়মিত অফিসে উপস্থিত হতে হচ্ছে। দেশ যখন করোনা মহামারির তান্ডবে ভীত-সন্ত্রস্ত লকডাউনের শিকার তখনও ব্যাংকারদের কাজ করতে হচ্ছে অনেকটা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যেই।
বাংলাদেশে ব্যাংকারদের জন্যে নিজস্ব একটি হাসপাতালের প্রয়োজন থাকলেও আজ পর্যন্ত কোনো কর্তৃপক্ষই এ ব্যাপারে এগিয়ে আসেনি। একমাত্র ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি. তাদের ব্যবস্থাপনায় ৪টি সাধারণ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছে। এ কাজটি করায় তাদের প্রতি মানুষের ভালোবাসা ও আস্থা বেড়ে গিয়েছে বহুগুণ। এখানে শুধু ইসলামী ব্যাংকের লোকজনদেরই নয়, সাধারণ মানুষও চিকিৎসাসেবার সুযোগ পাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ব্যাংকার্স ক্লাব অব বাংলাদেশ লিমিটেড এর নেতৃবৃন্দ যা বলেনঃ সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট মো. আবু জাফর সামছুদ্দিন দাবি তুলে ধরে বলেন, বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ এর মহামারিতে মেডিকেল পার্সোনেল-পুলিশ-আর্মির সাথে ব্যাংকার্স কমিউনিটি দেশের অর্থনীতি বাঁচিয়ে রাখতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। এর মধ্যেই আমাদের সহকর্মীরা করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। অথচ বড় দুঃখের বিষয় ব্যাংকার আর তাদের পরিবারের জন্য সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নেই।
সম্মিলিত ব্যাংকার্স হাসপাতাল নির্মাণের জোর দাবি জানিয়ে মো. আবু জাফর সামছুদ্দিন আরো বলেন, আজ এই বৈশ্বিক মহামারিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি ব্যাংকিং সেক্টরকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে জীবন বাজি রেখে ৩ লক্ষাধিক ব্যাংকার ও তাদের পরিবারের জন্য সরকারি উদ্যোগে কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। আমরা চাই নিজেরাই একটি সম্মিলিত হাসপাতাল তৈরি করতে। এতে ফাইন্যান্স এর কোনো সমস্যা হবে না। আমরা যদি ১ দিনের বেতন দেই তাতেও একটা হাপাতাল করা সম্ভব।
ক্লাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, সমগ্র জাতি আজ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। মানুষের যেমন প্রাণহানি ঘটছে তেমনি অর্থনীতি আজ বিপর্যস্ত। জাতির এই ক্লান্তিলগ্নে ব্যাংকাররা ফ্রন্ট লাইনার হিসেবে ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখছে। ব্যাংকাররা পরিবার পরিজনের মায়া ত্যাগ করে দেশের জন্যে আত্মত্যাগ করে নিয়মিত অফিস করছেন। আবার বিপুল সংখ্যক ব্যাংকার কোভিডে আক্রান্ত হয়ে তাদের পরিবারকেও আক্রান্ত করছেন। এর ফলে ব্যাংকারা মারাত্মকভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন। তাই আমরা মনে করি, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ব্যাংকারদের সুস্থ থাকা আবশ্যক।
তিনি আরো বলেন, হাসপাতাল নির্মাণে সরকার এবং ব্যাংকিং কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ গ্রহণ করলে ব্যাংকগুলোর সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) এর একটা অংশ হাসপাতাল নির্মাণে দিলেই ‘ সম্মিলিত ব্যাংকার্স হাসপাতাল’ নির্মাণ করা সম্ভব। ইতোমধ্যে আমরা হাসপাতাল নির্মাণে এবিবি চেয়ারম্যান বরাবরে প্রস্তাবনা রেখেছি। এ বিষয়ে আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে, খুব শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে একটি প্রস্তাবনা পাঠানোর এবং আলোচনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
ব্যাংকার্স ক্লাব জেনারেল সেক্রেটারি মো. রাশেদ আকতার বলেন; বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাংক ও ব্যাংকারদের অবদান অপরিসীম। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি, জিডিপি, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, বেকার সমস্যা দূরীকরণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে ব্যাংক ও ব্যাংকারদের অবদান আকাশছোঁয়া। ব্যাংকারদের অনেকদিনের প্রাণের দাবি- সম্মিলিত ব্যাংকার্স হাসপাতাল। দেশে বিদেশে কর্মরত প্রায় ৩ লক্ষ ব্যাংকার এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের স্বল্পমূল্যে সুচিকিৎসা প্রদানের ব্রত নিয়ে যদি এদেশের বুকে সম্মিলিত ব্যাংকার্স হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা যায় তবে ব্যাংকারদের পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে দেশের আপামর জনগণেরও স্বাস্থ্য সেবা সুনিশ্চিত করা যাবে । আমরা আশাবাদী বিএবি’র ও এবিবি এর সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা অর্থনীতিতে ব্যাংকার্স কমিউনিটির অবদান উপলব্ধি করে সম্মিলিত ব্যাংকার্স হাসপাতাল অনুমোদন প্রদান করবেন।
প্রয়োজন সম্মিলিত ব্যাংকার্স হাসপাতালঃ
দেশে বিভিন্ন পেশাজীবীদের জন্যে হাসপাতাল থাকলেও এক্ষেত্রে ব্যাংকাররা যেনো গুরুত্বহীন পেশার লোক। সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য সিএমএইচ, পুলিশদের জন্যে পুলিশ হাসপাতাল আছে, বিজিবি’র জন্যে আলাদা হাসপাতাল আছে। সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদের জন্যে সাম্প্রতিক সময়ে বিশাল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি হাসপাতাল নির্মিত হয়েছে। এছাড়া যে কোনো সরকারি হাসপাতালে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জন্যে আলাদা সিট ব্যবস্থা রয়েছে।
কিন্তু ব্যাংকারদের জন্যে তেমন কোনো সুযোগ নেই। এরা যেনো অন্যগ্রহের বাসিন্দা। অথচ এদের রক্ত ঘাম পরিশ্রমে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বইছে সুবাতাস। আজ যে গার্মেন্টস সেক্টর এতো বিশালত্ব লাভ করেছে সারাদেশে হাজার হাজার ইন্ডাস্ট্রি এসবের পেছনে ব্যাংকগুলোর অবদানই বেশি। উদ্যোক্তা উদ্যোগ গ্রহণের পর যে অর্থের প্রয়োজন তার যোগান দিয়েছে ব্যাংকগুলো। সেই সেক্টরে আজ ৫০ লাখের অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর অবদান শুধু উদ্যোক্তাদের নয়, ব্যাংকসমূহেরও। কিন্তু এই ব্যাংকাররা নানা দিক থেকেই অবহেলিত। বিশেষ করে স্বাস্থ্য চিকিৎসার দিক দিয়ে তো তারা অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হয়েই আছে।
এ অবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন। ব্যাংকারদের জন্যে প্রয়োজন সম্মিলিত ব্যাংকার্স হাসপাতাল। এ দাবি তুলেছেন দেশের ব্যাংকারদের প্রতিষ্ঠিত ‘ব্যাংকার্স ক্লাব অব বাংলাদেশ লিমিটেড’। ২০১৮ সালের ১০ জানুয়ারি ক্লাব প্রতিষ্ঠা মুহূর্তে ক্লাবের পক্ষ থেকে এ ধরনের একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। দেশে এবং বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশী ব্যাংকার এবং পরিবারের সদস্যদের স্বল্প ব্যয়ে উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ব্যাংকার্স ক্লাব অব বাংলাদেশ শুরু থেকেই একটি সম্মিলিত ব্যাংকার্স হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
গত বছর করোনার প্রথম পর্যায়ের সংক্রমণের সঙ্কটময় মুহূর্তে ক্লাব কর্তৃপক্ষ এসোসিয়েশন অব ব্যাংকস বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনা করে। তাদের নিকট থেকে উৎসাহব্যঞ্জক সাড়া পেয়ে ২০২০ সালের ২৭ মে একটি প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়।
একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, দেশের যে কোনো দুর্যোগে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে প্রতিটি ব্যাংকই ৫/১০ কোটি টাকাও সাহায্য হিসেবে তুলে দেয়। এসোসিয়েশন অব ব্যাংক বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও নানা উদ্যোগ নেয়া হয়। সেক্ষেত্রে এ ধরনের একটি সম্মিলিত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা তেমন কোনো বিষয়ই নয়। দেশের ৬১টি ব্যাংকের প্রতিটি ব্যাংক যদি নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী ১০ কোটি থেকে ২০ কোটি টাকা করে দিয়ে এবিবি’র মাধ্যমে উদ্যোগ নেয় তাহলে এই ঢাকাতেও সিঙ্গাপুর-কলকাতার মতো সর্বাধুনিক মানের একটি উন্নতমানের হাসপাতাল নির্মাণ সম্ভব।
এতে শুধু যে ব্যাংকাররই চিকিৎসা সুবিধা পাবেন তাই নয়, দেশের অন্যান্য যারা উন্নত চিকিৎসার জন্যে বিদেশে যান, দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করেন তারাও তখন দেশেই চিকিৎসার সুযোগ পাবেন। কারণ, ৬১টি ব্যাংকের সম্মিলিত প্রয়াসে এটি হতে পারে হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের একটি বিশ্বমানের হাসপাতাল। যেখানে বিশ্বের নামকরা চিকিৎসকরা এসে যোগ দেবেন। বাংলাদেশের অনেক চিকিৎসক আমেরিকা, কানাডা, লন্ডনসহ ইউরোপীয় দেশ সমূহে উন্নত চিকিৎসা দিয়েছেন তারা মনে করেন, দেশে উন্নত হাসপাতাল নেই বলে তারা দেশে ফিরছেন না।
এ ধরনের একটি উন্নত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হওয়া সময়ের দাবি। কারণ, স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং জাতির জনকের জন্মশতবর্ষে স্বাস্থ্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশকে এগিয়ে আনার একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে এটি। ব্যাংকারদের এরকম উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে বীমা খাতসহ অন্যান্য অনেক সংস্থাই এ ধরনের উন্নত হাসপাতালের উদ্যোগ নেবে এটা স্বাভাবিক।
ব্যাংকারদের জন্যে ‘সম্মিলিত ব্যাংকার্স হাসপাতাল’ শুধু যে চিকিৎসা ক্ষেত্রেই ভূমিকা রাখবে তাই নয়, এটি গবেষণার ক্ষেত্রেও অবদান রাখতে পারবে। আজ করোনা টিকার জন্যে অন্য দেশের মুখাপেক্ষী হতে হচ্ছে কিন্তু কম্বাইন্ড ব্যাংকার্স হাসপাতাল হলে করোনাসহ পরবর্তী সময়েও যেকোনো মহামারিজনতি রোগের প্রাদুর্ভাব মুহূর্তে প্রতিষেধক এবং টিকা আবিস্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
করোনাকালের অভিজ্ঞতাঃ
দেশের প্রথিতযশা ব্যাংকার বাংলাদেশ ব্যাংকের চেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট উপদেষ্টা আল্লাহ মালিক কাজেমী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তিনি অবশ্য ভালোই চিকিৎসা পেয়েছেন। কিন্তু ব্যাংকারদের মধ্যে অনেকেই অনেকটা বিনা চিকিৎসায় মরতে হয়েছে। ইতোমধ্যে ৬২জন ব্যাংকার করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের প্রায় সবাই কর্মস্থলে ব্যস্ত দিন পার করছিলেন এবং সংক্রমণ হয়েছে ব্যাংক থেকেই, মানুষকে সেবা দিতে গিয়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চৌধুরী মফিদুল ইসলাম মৃত্যুর আগে অনেক চেষ্টা করেও তার জন্যে আইসিইউ বেড যোগাড় করা যায়নি।
এরকম অন্যান্য ব্যাংকের একাধিক ব্যাংকার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন যাদের জন্যে আইসিইউ বেড ম্যানেজ করা সম্ভব হয়নি। এরকম অনেক উদাহরণ রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের সকলেই বলছেন করোনা দীর্ঘস্থায়ী মহামারি। সুতরাং একে প্রতিরোধ করার চেয়ে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত বেশি প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে ব্যাংকারদের জন্যে নিরাপত্তার স্থান হচ্ছে একটি উন্নত সম্মিলিত ব্যাংকার্স হাসপাতাল। যা প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নিতে হবে এবং তা এখনই।
অর্থনীতির সেবা থেকে মানবিক সেবায়ঃ প্রস্তাবিত ‘সম্মিলিত ব্যাংকার্স হাসপাতাল’ এখন সময়ের দাবি। এটি শুধু ব্যাংকারদের দাবি নয়, সচেতন জনগণেরও দাবি। ব্যাংকাররা যেমন সততার সাথে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে দেশকে আজ উন্নত দেশে পরিণত করেছে, তেমনি ব্যাংকারদের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল গড়ে উঠলে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থারও আমূল পরিবর্তন সূচিত হবে।
সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকসমূহের উদ্যোগে প্রস্তাবিত সম্মিলিত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কোনো রকম কালক্ষেপণ করা হবে আত্মঘাতী। ব্যাংকগুলো হাজার হাজার কোটি টাকা সামাজিক দায়-দায়িত্বের খাতিরে ব্যয় করে থাকে, শত শত কোটি টাকা ছাত্র বৃত্তি দিয়ে থাকে, সেখানে নিজেদের কর্মীদের জীবনের চিকিৎসা নিরাপত্তা দেয়া অবশ্যই অধিক জরুরি। কারণ, ব্যাংকাররা না বাঁচলে ব্যাংক বাঁচবে না। ব্যাংকের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়বে, দেশের অর্থনীতিও স্থবির হয়ে পড়বে। সুতরাং দেশ এবং জাতির স্বার্থেই ব্যাংকের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠা লাভ করুক বিশ্বের উন্নতমানের একটি হাসপাতাল ‘সম্মিলিত ব্যাংকার্স হাসপাতাল বাংলাদেশ’। এটি ব্যাংকারদের মনে দায়-দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বস্তি বয়ে আনবে। তারা আস্থা পাবে যে অসুস্থতায় তাদের চিকিৎসার জন্যে একটি নিরাপদ হাসপাতাল আছে যা তাদের নিজেদের হাসপাতাল।
সরকারের সহায়তাঃ
দেশে উন্নতমানের সম্মিলিত ব্যাংকার্স হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় সরকারের সহযোগিতাও কাম্য। সরকার এ জন্যে একটি বড় ধরনের জায়গা বরাদ্দ দিতে পারে যেখানে হাসপাতালসহ একটি মেডিক্যাল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা যেতে পারে। এ ধরনের একটি কার্যক্রমে সরকারের এ সহযোগিতায় দেশে প্রতিষ্ঠিত হবে বিশ্বের উন্নত হাসপাতালের একটি যা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়িয়ে দেবে বহুগুণ। ব্যাংকাররাসহ জনগণ পাবে উন্নত চিকিৎসা। এমনকি বিদেশ থেকেও এদেশে চিকিৎসা নেয়ার জন্যে মানুষ আসবে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীক্ষণে এ উদ্যোগ বাংলাদেশকে আরো এক ধাপ সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।
লেখকঃ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, হেড অফ ব্র্যান্ড মার্কেটিং অ্যান্ড পিআর, দি প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড ও ব্র্যান্ড অ্যান্ড মিডিয়া সেক্রেটারি, ব্যাংকার্স ক্লাব অব বাংলাদেশ।