পাঁচ বছরে উৎপাদনে গেছে ৮ শিল্পপ্রতিষ্ঠান
চট্টগ্রামের মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীতে ২০২০ সালে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যায় তিনটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান।
চট্টগ্রামের মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীতে ২০২০ সালে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যায় তিনটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এরপর ২০২২ সালে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যায় এয়াকুব অটো রাইস মিল নামের একটি কারখানা। সর্বশেষ গত ২৪ অক্টোবর এবি কমোডিটি নামের একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করেছে। সব মিলিয়ে গত পাঁচ বছরে উৎপাদনে গেছে মোট আটটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে মাত্র ৫৫ জনের। দেশের ৭৫তম বিসিক শিল্পনগরীতে প্লট বরাদ্দ পাওয়া সবক’টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান উৎপাদনে গেলে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না থাকায় উৎপাদনে যেতে পারছে না অনেকগুলো শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে ২১ নভেম্বর চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে চিঠি দিয়েছে বিসিক কর্তৃপক্ষ।
বিসিক সূত্রে জানা গেছে, ১৫ দশমিক ৩২ একর জমির ওপর নির্মিত মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরী নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ২০১৭ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। এর দুই বছর পর অর্থাৎ ২০১৯ সালে বরাদ্দের জন্য ৮৮টি প্লটের বিপরীতে ১১৪টি আবেদনপত্র জমা পড়ে। যাচাই-বাছাই শেষে ৮৮ শিল্পোদ্যোক্তাকে প্লট বরাদ্দ দেয় বিসিক চট্টগ্রাম জেলা প্লট বরাদ্দ কমিটি। কিন্তু ১৪ শিল্পোদ্যোক্তা সময়মতো অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় প্লটগুলো শূন্য ঘোষণা করা হয়। পরে ১৪টি প্লটের বিপরীতে ৫৬টি আবেদন জমা পড়ে। যাচাই-বাছাই শেষে অবশিষ্ট ১৪টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। ৮৮টি প্লট ৮০ জন শিল্পোদ্যোক্তাকে বরাদ্দ দেয়া হয়। পাঁচ বছরের মধ্যে নয়টি কিস্তিতে প্লটের টাকা পরিশোধ করতে পারবেন শিল্পোদ্যোক্তারা। এতে প্রতি বর্গফুট জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০০ টাকা।
বিসিক আরো জানিয়েছে, মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীতে এ টাইপ প্লট ২৭টি, বি টাইপ প্লট ৩৩টি ও সি টাইপ প্লট ২৭টি। প্লট বরাদ্দ কমিটি প্রকৌশল খাতে ১৯টি, তৈরি পোশাক খাতে ১৬, খাদ্য ও খাদ্যজাত খাতে ১৯, কেমিক্যাল অ্যান্ড অ্যালাইড খাতে ১০, বন ও বনজাত খাতে তিন, প্যাকেজিং খাতে আট, সিরামিকস ও নন-মেটালিক খাতে তিন, রাবার-লেদার অ্যান্ড অ্যালাইড খাতে চারটি প্লট বরাদ্দ দিয়েছে।
এদিকে গত পাঁচ বছরে মোট আটটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান উৎপাদনে গেছে বলে জানিয়েছেন বিসিক চট্টগ্রামের প্রমোশন কর্মকর্তা মো. তানজিলুর রহমান। তবে গ্যাস ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না পাওয়ায় আরো অনেক প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে যেতে পারছেন না বলে দাবি তার।
বিসিকের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘মিরসরাইয়ে বর্তমানে দৈনিক চারবার লোডশেডিং হয়। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না পেলে ছোট কারখানা চালানো খুবই কষ্টকর। তাই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য ২১ নভেম্বর মিরসরাই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে চিঠি দিয়েছি।’ এছাড়া ব্যাংকগুলো সময়মতো টাকা দিতে না পারায় অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান উৎপাদনে যেতে পারছে না বলেও জানান তিনি।
উৎপাদনে যাওয়া আটটি প্রতিষ্ঠান হলো এয়াকুব অটো রাইস মিল, খাজা ভাণ্ডার, খান অ্যাকসেসরিজ, নাছির কেমিক্যাল, আলিফ ফুড, মেঘনা ডাল মিল, ইনোভা টেক্সটাইল ও এবি কমোডিটিজ। বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানে ৫৫ জন কর্মরত রয়েছেন। তবে ইনোভা টেক্সটাইল পুরোপুরি চালু হলে আরো কয়েকশ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ২৫ জন কর্মরত রয়েছেন।
বিসিক জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রামের উপ-মহাব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীর অবস্থান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত, ফলে এখানে প্লটের চাহিদাও বেশি। তাই ২০২০ সালে এ শিল্পনগরীর আয়তন বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু সবগুলো শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু না হওয়ায় নতুন করে আয়তন বৃদ্ধি করা যাচ্ছে না। বর্তমানে এ শিল্পনগরীতে আটটি প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে রয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সুবিধা পেলে আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।’
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ২০০৯ সালে একটি বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার। পরের বছর স্থানীয় একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু মাটি ভরাটসহ নানা জটিলতায় আটকে যায় বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনের কাজ। এরই মধ্যে একাধিকবার প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ানো হয় সময়সীমাও। ২০১৫ সালের ১২ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্প আকারে ২৯ কোটি ২৫ লাখ টাকার মিরসরাই বিসিক প্রকল্প অনুমোদন হয়। তবে ব্যয় ও সময়সীমা বাড়িয়েও নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।