২১ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকার জ্বালানি তেল কিনবে সরকার
আগামী বছরের জন্য ২১ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকার পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে ১১ হাজার ২৩৩ কোটি টাকার অপরিশোধিত এবং সিঙ্গাপুর ও ইউএই থেকে ১০ হাজার ৭১০ কোটি টাকার পরিশোধিত জ্বালানি তেল কেনা হবে। অর্থ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে গতকাল অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া সভায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আরো বেশ কিছু ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ইউএইর আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানির (অ্যাডনক) কাছ থেকে ২০২৫ সালের জন্য ছয় লাখ টন মারবান গ্রেডের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৫ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। একইভাবে সৌদি অ্যারাবিয়ান অয়েল কোম্পানির (সৌদি আরামকো) কাছ থেকে ৭ লাখ টন অ্যারাবিয়ান লাইট ক্রুড গ্রেডের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৬ হাজার ২৫ কোটি টাকা।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের আরেক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সিঙ্গাপুরের ইউনিপেক সিঙ্গাপুর পিটিই লিমিটেড ও ভিটল এশিয়া পিটিই লিমিটেড এবং ইউএইর ওকিউ ট্রেডিং লিমিটেডের কাছ থেকে ১০ হাজার ৭১০ কোটি টাকার পরিশোধিত জ্বালানি তেল কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সিঙ্গাপু্রের ভিটল এশিয়া পিটিই লিমিটেডের কাছ থেকে এক কার্গো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৭০৮ কোটি ৫৫ লাখ ৯৪ হাজার ৮৮০ টাকা। প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম ধরা হয়েছে ১৫ ডলার ২ সেন্ট।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে নাবিল নাবা ফুডস লিমিটেডের কাছ থেকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৯৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। প্রতি কেজির দাম পড়বে ৯৫ টাকা ৯৭ পয়সা। একই মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেডের কাছ থেকে খোলা ভোজ্যতেল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮ লাখ ১০ হাজার লিটার খোলা সয়াবিন তেল কিনতে ব্যয় হবে ৫৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। প্রতি লিটারের দাম পড়বে ১৪০ টাকা। এছাড়া ১ কোটি ১০ লাখ লিটার খোলা পাম অয়েল কিনতে ব্যয় হবে ১৪৩ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে প্রতি লিটার তেলের দাম ধরা হয়েছে ১৩০ টাকা।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আরবের সাবিক এগ্রি-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানির কাছ থেকে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১২৩ কোটি ২৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। প্রতি টন সারের দাম ধরা হয়েছে ৩৪২ ডলার ৩৩ সেন্ট। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে রাশিয়ার জেএসসি ফরেন ইকোনমিক কো-অপারেশন প্রোডিনটর্গ ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় পঞ্চম লটে ৩০ হাজার টন এমওপি সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১০৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা। প্রতি টন সারের দাম পড়বে ২৮৯ ডলার ৭৫ সেন্ট। একই মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মরক্কোর ওসিপি নিউট্রিক্রপস এবং বিএডিসির মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় নবম লটে ৪০ হাজার টন ডিএপি সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২৮০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। প্রতি টন সারের দাম ধরা হয়েছে ৫৮৪ ডলার ৭৫ সেন্ট। একই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৩০ হাজার টন টিএসপি সার ১৫২ কোটি ৪৬ লাখ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রতি টনের দাম পড়বে ৪২৩ ডলার ৫০ সেন্ট।
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে অনুদান চুক্তির শর্তানুসারে, ‘ইমার্জেন্সি মাল্টি-সেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স প্রজেক্ট’ শীর্ষক প্রকল্পের একটি প্যাকেজের পূর্ত কাজ ১২১ কোটি টাকায় কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সুপারিশকৃত দরদাতা বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি)। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে এ প্রস্তাবটি এসেছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘সোনাগাজী ও মিরসরাই অর্থনৈতিক সংযোগ সড়কে ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ’ (প্রথম সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় একটি প্যাকেজের কাজ ৬৩০ কোটি ২১ হাজার ২৭৮ টাকায় কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহসংক্রান্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের তিনটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন), নবম শ্রেণী, দাখিল নবম শ্রেণী ও কারিগরি নবম শ্রেণীর বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য ৫২৫ কোটি ৩৪ লাখ ৯৬ হাজার ৪৭৫ টাকার ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। ২১১টি দরপত্রের মাধ্যমে মোট ৬ কোটি ২৮ লাখ ৫১ হাজার ৫৪০ কপি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। একইভাবে মাধ্যমিক বাংলা ভার্সন দশম শ্রেণীর বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য ৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ২২ হাজার ৫৭৯ টাকার ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ৩৬টি দরপত্রের মাধ্যমে মোট ১ কোটি ১০ হাজার ৯৮১ কপি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া ইবতেদায়ি (চতুর্থ ও পঞ্চম), মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন) দশম শ্রেণী, দাখিল দশম শ্রেণী ও কারিগরি দশম শ্রেণীর বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য ৪২৩ কোটি ২৩ লাখ ৮৮ হাজার ১৭৩ টাকার ক্রয়প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ১৫২টি দরপত্রের মাধ্যমে মোট ৫ কোটি ৫২ লাখ ২ হাজার ১০৩ কপি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।