প্রণোদনা কমায় উৎপাদন ও রফতানি হ্রাস পেয়েছে

মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে বড়লেখা উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। উপজেলার সুজানগর ইউনিয়নে যাওয়ার পথে কাঁচা-পাকা রাস্তার উভয় পাশেই রয়েছে মূল্যবান আগর গাছ। এমনকি এখানকার গ্রামগুলোর প্রায় সব বাড়িতেই এ গাছের দেখা মেলে। এসব গাছের ওপর ভিত্তি করেই সুজানগরে গড়ে উঠেছে দেশের একমাত্র আগর-আতর ক্লাস্টার। প্রায় ৪০০ বছর ধরে বংশপরম্পরায় এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এখানকার উদ্যোক্তারা। ক্লাস্টারটিতে প্রায় ১০০টি আতর তেল প্রস্তুতকারক কারখানা রয়েছে। যেখানে প্রস্তুতকৃত আতর বিদেশে রফতানি করা হয়।
সুজানগর ইউনিয়নের সালদিঘা, রফিনগর, হাসিমপুর, চিন্তাপুর ও বড়থলসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রাম এবং পাথারিয়ার পাহাড়ি এলাকায় আগর চাষ হয় সবচেয়ে বেশি। ইউনিয়নের বড়থল গ্রামে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কম-বেশি সব বাড়িতেই আতর গাছ রয়েছে। কেউ কেউ শুধু পরিপক্ব গাছ বিক্রি করে, আবার কেউ আতর প্রস্তুত করে বিক্রি করে। প্রতিটি বাড়িই যেন আতর তৈরির কারখানা। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় বংশপরম্পরায় তারা এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বাড়িগুলোতে ভেতরে ঢুকলে দেয়া যায়, ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের আগর গাছ। কিছু গাছে পেরেক ঠুকা রয়েছে, আবার কিছু গাছ ফালি ফালি করে কেটে রাখা হয়েছে। আবার কোনো কোনো গাছ থেকে আতর অয়েল (তেল) ও আতর উড (কাঠ) বের করে নেয়া হচ্ছে। আগর গাছের কোনো অংশই ফেলনা নয়, আতর অয়েল (তেল) বের করে নেয়ার পর যে বর্জ্য বের হয় তাও বিদেশে রফতানি হয়।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) ফাউন্ডেশনের তথ্যানুসারে, দেশের একমাত্র আগর-আতর ক্লাস্টারের অধীনে প্রায় ১০০ আতর তেল প্রস্তুতকারক কারখানা রয়েছে। আগর তেল উৎপাদনে ও আগর বাগানে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশই নারী শ্রমিক। ক্লাস্টারের বার্ষিক রফতানি বাজার প্রায় ৬০ কোটি টাকা। তবে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এ শিল্প এখনো বিকশিত হতে পারেনি। বিশেষত জ্বালানি সংকটের কারণে নতুন করে কেউ আতর কারখানা স্থাপন করতে পারছে না। অন্যদিকে সরকার ২০২৪ সালে এ খাতে প্রণোদনা ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশ করেছে। ফলে উৎপাদন কমে গিয়ে রফতানি প্রায় ৭০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে বলে জানান উদ্যোক্তারা। এজন্য প্রণোদনার পরিমাণ অন্তত ১০ শতাংশে উন্নীত করার দাবি তাদের।
পাথারিয়া আগর প্রসেসিং এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী কবির আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘গ্যাস সংযোগ ছাড়া এ ব্যবসা সম্প্রসারণ করা যাবে না। নতুন অনেকে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করে। যার কারণে খরচ বেশি পড়ে। এতে খুব একটা লাভবান হওয়া যায় না।’
তিনি আরো জানান, রফতানির জন্য শিপমেন্টের ক্ষেত্রেও কিছু প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। বন বিভাগ ও কৃষি অধিদপ্তরের সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়ায় সময়ের অপচয় হয়। এসব কাজ যদি দ্রুত সময়ে বা অনলাইনে করা যায় তাহলে শিপমেন্ট দ্রুত হবে বলে দাবি করেন এ উদ্যোক্তা। পাশাপাশি এ অঞ্চলে একটি মানসম্মত গবেষণাগার প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
বন বিভাগের অধীনে থাকা গাছগুলোর নিলামে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন সাদিয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. আনসারুল হক। তিনি বলেন, ‘বন বিভাগের অধীনে কিছু পরিপক্ব আতর গাছ রয়েছে। এগুলো দ্রুত নিলামে তোলা প্রয়োজন। তাহলে আগ্রহীরা কিনে নিয়ে সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করে বাইরে রফতানি করবে।’
এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সাম্প্রতিককাল এনবিআরের চেয়াম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আগর-আতর শিল্পের সমস্যাগুলোকে তুলে ধরেছি। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, যতটুকু পারেন দেখবেন।’