এগিয়ে যেতে হলে নিজেকেই বেশি এফোর্ট দিতে হয়: শায়লা রহমান
বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন) এবং বাংলাদেশ ওমেন ইন আইটি (বিডব্লিউআইটি)-র উদ্যোগে ২২ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী ‘লুনা শামসুদ্দোহা গার্লস ইন আইসিটি উইক ২০২২’ শীর্ষক একটি আয়োজন। ২২-২৮ এপ্রিল নানা আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে এবং প্রতিদিন একজন সফল নারীকে নিয়ে বিশেষ ফিচার প্রচারিত হবে। এ আয়োজনের অন্যতম সহযোগী টেকশহরডটকম। আজ আয়োজনের প্রথম দিনে থাকছে গ্রামীনফোনের উপ-পরিচালক শায়লা রহমানের কথা।
দেশের অন্যতম শীর্ষ মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের উপ-পরিচালক শায়লা রহমান। ২০০৭ সালে গ্রামীনফোনে যুক্ত হন তিনি এবং এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। শুরুর সময়টা ছিল অনেক চ্যালেঞ্জিং। নারী হিসেবে নিজের কাজের মাধ্যমে জায়গায় সেরাটা যেমন করার তাগিদ ছিল তেমনি কর্মী হিসেবেও নিজেরে কাজটি করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে নিজেকে প্রমাণ করার প্রচেষ্ঠা ছিল শায়লা রহমানের। এর বাইরে একজন চাকুরিজীবি হিসেবেও পরিবারের কাছে নিজেকে প্রমাণ করার আরেক চ্যালেঞ্জেও ছিলেন তিনি। এত প্রমাণের ভিড়ে তিনি হারিয়ে যাননি। শুধু নিজেকে বলেছেন, পারতে হবে। প্রতিনিয়ত নিজেকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে দিয়ে এগিয়ে গেছেন তিনি। ২০০৭ সালের দিকে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল একেবারেই হাতে গোনা। অনেক চোখের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা বেশ কঠিনই ছিল শায়লা রহমানের। সেখানেই ধৈর্য্য ধরে নিজেকে প্রমাণ করতে হয় এবং এ পথচলায় অনেকেই হাল ছেড়ে দেন। তবে, শায়লা রহমান মনে করেন, এগিয়ে যাবার জন্য নিজের ইচ্ছাই সবচেয়ে বড় কথা।
শায়লা রহমানের এমন মানসিক দৃঢ়তার শুরু আরো আগে থেকে। ২০০৪ সালে পারিবারিকভাবে বিয়ের পর তুরস্ক চলে যান স্বামী আরিফুর রহমানের সঙ্গে। কারণ বিয়ের আগে থেকে সেখানে ১০ বছর ধরে চাকরি করতেন আরিফুর রহমান। কিন্তু তুরস্কতে শায়লা রহমানের বেশিদিন ভাল লাগছিল না থাকতে। দেশেই কাজ করবেন এমন ভাবনা থেকেই দেড় বছরের মাথায় দেশে ফিরে আসেন স্বামী-স্ত্রী। দেশে ফিরেই যোগ দেন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেডে। বছরখানেক পর ২০০৭ সাল থেকে গ্রামীনফোনে চাকুরির শুরু। পরিবারের সমর্থন আর নিজের ইচ্ছের ওপর ভরসা করে কাজ চালিয়ে যান তিনি। নানা চ্যালেঞ্জ পার হয়ে এখন অনেকেরই ভরসার মানুষ তিনি।
গ্রামীনফোনের বিভিন্ন শাখায় লিডারশিপ রোলে কাজ করেছেন তিনি। স্বীকৃতিস্বরুপ ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ব্রান্ড ফোরাম থেকে ‘ইন্সপায়ারিং ওমেন ইন লিডারশিপ’-এর স্বীকৃতি পেয়েছেন। সংসার জীবনেও চড়াই উৎরাই গেছে তার। দেশে আসার পর হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে যান স্বামী আরিফুর রহমান। সেই পরিস্থিতিতেও ভেঙে না পড়ে নিজের কাজ করে গেছেন শায়লা রহমান। জীবনের পেছনে তাকিয়ে সংগ্রামের দিনগুলোকে এখন দেখেন আশির্বাদ হিসেবে। তবে, স্বামী আরিফুর রহমানের কাছে আজীবনের জন্য কৃতজ্ঞ তিনি। কারণ, শুধু স্ত্রীর কথা চিন্তা করে নিজের দূর্দান্ত ক্যারিয়ার ফেলে ফিরে এসেছিলেন দেশে।
শায়লার ভাষায়, এই ত্যাগের কোনো মূল্য হয় না। হয়তো এর নাম শ্রদ্ধা, সম্মান বা ভালবাসা। সব সামলিয়ে শায়লা রহমানের এখন শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা। অন্যদের জন্য তার পরামর্শ, এগিয়ে যাওয়া বা লিডারশিপের জন্য শুধু অফিসের ওপর নির্ভর না করে নিজের শতভাগ এফোর্ট দিতে হয়। অফিস, পরিবার ছাড়া বাইরের পরিবেশের সঙ্গেও তাকে খাপ খাইয়ে নিতে হয়েছে নিজের এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে থেকেই। তাই এগিয়ে যাওয়ার প্রথম মন্ত্র নিজের কাছেই বলে মন্তব্য করেন এ নারী। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অগ্রনী নারী লুনা শামসুদ্দোহা তার আদর্শ। এই খাতে আরো এগিয়ে যাওয়ার ভাবনায় নিজেকেও তিনি কল্পনা করেন তার মতোই।