ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির তাজ প্যালেস হোটেলে বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক
প্রতিবেশী দেশ ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির তাজ প্যালেস হোটেলে চলছে রাইসিনা ডায়ালগ। তিন দিনের এই সম্মেলনে অংশ নিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের সক্ষমতা তুলে ধরার পাশাপাশি অংশগ্রহণকারী ১৭টি দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
প্রযুক্তি ভিত্তিক নানা সল্যুশন তৈরিতে দেশের তরুণদের সক্ষমতা এবং বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা সম্পর্কেও নানা উপস্থাপনা তুলে ধরছেন ডায়ালগে। আলোচনা করছেন নিজেদের সাইবার আকাশের নিরাপত্তায় করণীয় এবং জোটবদ্ধতা নিয়েও।
সোমবার ডায়ালগের দ্বিতীয় দিনে বিশ্বখ্যাত টেক জায়েন্টদের মেধা সরবরাহে সামনের কাতারে থাকা ভারতীয় প্রাযুক্তিক প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি দিল্লির (আইআইটি) খড়গপুরের ক্যাম্পাস ও বিভিন্ন ল্যাবরেটরি পরিদর্শন করেছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী। এসময় তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি, এনআরএফ-এর অ্যাসিসটেক ল্যাব, থ্রিডি উইভিং এবং স্ট্রাকচারাল কম্পোজিটস সেন্টার ঘুরে দেখেন।
এর আগে সকালে ভারতী স্কুলের সামনে আইআইটি দিল্লীর ইন্টারন্যাশনাল অফিসের ডিন অধ্যাপক নবীন গর্গ বিশ্বাাবদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদকে উষ্ণ অভিবাদন জানান। সেখান থেকে গবেষক অমর নাথ ও শশী খোসলা প্রতিমন্ত্রীকে অ্যাসিসটেক ল্যাবরেটরিতে নিয়ে যান। ল্যাবে কীভাবে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের সাশ্রয়ী খরচে শিক্ষাদান করা হচ্ছে তা পরিদর্শন করেন পলক। এসময় এই ল্যাবে গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে ইনকিউবেশন প্রক্রিয়ায় নতুন নতুন উদ্ভাবনী সল্যুশন তৈরি করে কীভাবে তা শিল্প-উপযোগী করা হয় তা ব্যাখ্যা করেন অধ্যাপক এম. বালকৃষ্ণ।
এরপর বাংলাদেশের আইসিটি প্রতিমন্ত্রীকে ন্যানোস্কেল রিসার্চ ফ্যাসিলিটি (এনআরএফ) ল্যাবরেটরি ঘুরিয়ে দেখান সেখানকার সমন্বয়কারী অধ্যাপক নীরজ খারে। ল্যাবের স্বাস্থ্য, কৃষি, নিরাপত্তা, জ্বালানী শক্তি খাতের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে মাইক্রো-চিপ এবং ভিএলএসআই নকশার চ্যালেঞ্জগুলি সমাধানের জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের খুঁটিনাটি অবহিত করেন তিনি।
পরিদর্শন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরেক্টর অফিসে প্রফেসর রঙ্গন ব্যানার্জির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জুনাইদ আহমেদ পলক। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), রোবোটিক্স, সাইবার-সিকিউরিটি, সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ভিএলএসআই এর মতো অগ্রসরমান প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন এবং ইকোসিস্টেম উন্নয়ন নিয়ে আলাপ হয় এই বৈঠকে।
বৈঠক শেষে আইআইটি-কে বাংলাদেশের আইসিটি বিভাগ এবং আইআইটি দিল্লির সাথে যৌথভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে ৭টি প্রস্তাব দিয়েছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী।
গবেষণা, উদ্ভাবন এবং ইনকিউবেশনে আইআইটি দিল্লির ইকোসিস্টেম চালু করতে উদ্যোক্তা, ছাত্র এবং স্বাধীন গবেষক বা ব্যবসায়ী নেতাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে আইআইটি দিল্লি বাংলাদেশের আইসিটি বিভাগের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি পারে বলে প্রস্তাব দেন তিনি। বাকি প্রস্তাবগুলোতে বিভিন্ন নন-ডিগ্রি হ্যান্ডস-অন ট্রেনিং এবং সার্টিফিকেশন প্রোগ্রামের জন্য ডিপ্লোমা প্রোগ্রামে বাড়ানো, ২ বছরের স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম অনুসরণকারী তরুণ উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং যোগ্য শিক্ষার্থীদের জন্য আইসিটি মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ এর অনুকূলে ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি স্কলারশিপ গঠন, হাইব্রিড প্রশিক্ষণ ও গেবেষণার সুযোগ সৃষ্টি, ভারতীয় নবীন উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করা এবং
বিভিন্ন প্রযুক্তির রূপান্তর এবং কিভাবে যৌথ পেটেন্ট করার স্বাথে যৌথ অংশীদারিত্বে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন জুনাইদ আহমেদ পলক।
এছাড়াও ভারতের তথ্য-প্রযুক্তি খাতের বাণিজ্যিক সংগঠন ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড সার্ভিস কোম্পানি- ন্যাসকমের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জুনাইদ আহমেদ পলক। বৈঠকে ডিজিটাল সাইবার সিকিউরিটির ভবিষ্যত বাজার চাহিদা, গবেষণা এবং এই চাহিদা মেটানোর টেকসই প্রযুক্তি পণ্য ও সেবা নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক সহযোগিতার ভিত্তিতে সাইবার নিরাপত্তায় এশিয়াকে বিশ্বে নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কর্মপরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা করেছেন তিনি।
এছাড়াও ডিজিটাল লেনদেন কাঠামো নিয়ে আলোচনা করেছেন এনপিসিএই ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্টস লিমিটেডের ব্যবসায় উন্নয়ন ও বিপনন বিভাগের ডেপুটি চিফ অনুভব শর্মার সঙ্গে।
প্রসঙ্গত, সম্মেলনের প্রথম দিনই সম্মেলনে পিপলস মজলিস মালদ্বীপের স্পিকার এবং মালদ্বীপের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ নাশিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এসময় মালদ্বীপের পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রযুক্তি মন্ত্রী মিসেস আমিনাথ শাওনা, নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানিকেন হুইটফেল্ড এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সঙ্গেও মত বিনিময় করেন তিনি। এছাড়াও বৈঠক শেষে আইসিটি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রত্যেকের হাতেই “রাজনীতির মহাকাব্য: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ” বইটি উপহার হিসেবে তুলে দিয়েছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী।