ভোজ্যতেল হিসেবে সূর্যমুখী আমাদের দেশে জনপ্রিয় করা সম্ভব
মির্জা ইয়াহিয়া:
নব্বই দশকের শুরুর দিকেও আমাদের দেশে রান্নায় সরিষার তেল বেশি জনপ্রিয় ছিলো। পরবর্তীতে সেই স্থান দখল করে নেয় সয়াবিন তেল। দাম কম হওয়ার কারণে পামওয়েলও ব্যবহার করে থাকে অনেকে। কিন্তু গত কয়েক মাসে ভোজ্যতেলের দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। যা নিয়ে বিপদে আছে সাধারণ মানুষ।
একটা বিষয় হলো সয়াবিন ও পামের যে উপকরণ সেটা আমদানি নির্ভর। ফলে বিশ্ববাজারে দাম বাড়লেই এ জাতীয় তেলগুলোর দাম অনেক বেড়ে যায়। এ অবস্থায় আমাদের দেশে যেটা উৎপাদন সম্ভব সেটা নিয়ে কাজ করতে হবে। আমি মনে করি, ভোজ্যতেল হিসেবে সূর্যমুখী আমাদের দেশে জনপ্রিয় করা সম্ভব। কারণ এটা চাষের উপযোগী পরিবেশ আছে এখানে। এই কারণে তেল উৎপাদনের জন্য এই ফুলের চাষ কিন্তু দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা একটা ভালো দিক। কিন্তু ভোজ্যতেল হিসেবে সূর্যমুখীর দাম সাধারণ মানুষের নাগালে আনতে হলে উৎপাদন আরো বৃদ্ধির বিকল্প নেই। কারণ এই তেলের দাম এখনো একটু সামর্থ্যবান মানুষের উপযোগী। সয়াবিন ও পামের তুলনায় বেশি উপকারি বলে স্বাস্থ্যসচেতন মানুষরাও সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করে থাকে। দরিদ্র জনগোষ্ঠী সূর্যমুখী তেল ব্যবহারের বিষয়টি এখনো ভাবতে পারে না দামের কারণে।
তারপরও আমার মনে হয়, ভোজ্যতেলে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার একটি পন্থা হতে পারে সূর্যমুখী তেল উৎপাদনে জোর দেয়া। এর জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোক্তারা যদি কৃষকদের ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা করেন, তাহলে সূর্যমুখী চাষ সহজে বিস্তৃত হবে। এরফলে তেলের উৎপাদন বাড়বে। দামও তখন সয়াবিন তেলের পর্যায়ে আনা সম্ভব হবে।
এখানে আরো একটা বিষয় বলি, ছোটবেলায় দেখতাম কেউ বাগান করলেই একটি-দুটি সূর্যমুখী ফুল গাছ রাখতেন বাগানে। আমার নিজেরও এই অভিজ্ঞতা আছে। তখন কিন্তু আমরা ভাবতেও পারিনি এই সূর্যমুখী একসময় অর্থকরী একটি ফসল হয়ে যাবে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই চিত্র আছে। তবে এরমধ্যে খারাপ ব্যাপারও চোখে পড়ে। অনেকেই সূর্যমুখীর মাঠের ভেতরে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলে ফেসবুকে দেন। এটা করতে গিয়ে যাতে কৃষকের ফসলের ক্ষতি না হয় সেটা লক্ষ্য রাখতে হবে।
ভোজ্যতেলের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রাখতে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নিবে, এই আশাই করি।
(মির্জা ইয়াহিয়া,সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং জনসংযোগ ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান। সিটি ব্যাংক লিমিটেড, বাংলাদেশ, এর ফেসবুক পেইজ থেকে নেয়া।)