শিরোনাম

South east bank ad

চলচ্চিত্র পরিবারে এত দ্বন্দ্ব কেন

 প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২২, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   এনবিআর

বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম

চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট সবার দাবি- তারা একটি পরিবার। বিভিন্ন অনুষ্ঠান-আয়োজনে সিনেমার প্রতিটি শিল্পী-কলাকুশলী এ কথাই বলে থাকেন বারবার। এই পরিবারে বয়েছে অনেক কর্তা। কথায় এক পরিবার হলেও পরিবারের একটি ঘরের দ্বন্দ্বই মিটছে না! বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন ঘিরে তৈরি হওয়া সেই দ্বন্দ্ব শেষ পর্যন্ত গড়িয়েছে আদালতপাড়ায়।

শুধু শিল্পীদের মধ্যেই তৈরি হয়েছে দূরত্ব। যা স্পষ্ট হয়েছে গেল ২৮ জানুয়ারি শিল্পী সমিতির নির্বাচন শেষ হওয়ার পর থেকেই। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে এখন সবখানেই চলেছে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা। আর দ্বন্দ্বের বিষয়টি একটু পেছন ফিরে তাকালেই স্পষ্ট হয়ে যায়।

বরাবরের মতো এবারও দুটি প্যানেল নিয়ে শিল্পী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্যানেল দুটি হলো- পরপর দুবার নির্বাচিত হওয়া মিশা সওদাগর-জায়েদ খান আর অন্যটি হলো ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেল। নির্বাচনে সব কিছু ঠিক থাকলেও ‘সাধারণ সম্পাদক’ পদ নিয়ে নিপুণ-জায়েদের লড়াইটা শেষ পর্যন্ত গড়িয়েছে আদালতে। ২৮ জানুয়ারি নির্বাচনে এই পদে জয়ী হন জায়েদ। যার ঘোষণা আসে পরদিন ভোরে। আর সেদিনই এ নিয়ে আপত্তি জানান, চিত্রনায়িকা নিপুণ। নানা নাটকীয়তার পর গেল রবিবার আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সমিতির নতুন কমিটি শপথগ্রহণ করে। সভাপতির পদে ইলিয়াস কাঞ্চন আর সাধারণ সম্পাদকের পদে বসেন নিপুণ। সেই শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে শপথবাক্য পাঠ করান সদ্য বিদায়ী সভাপতি মিশা সওদাগর।

খেলা এখানেই শেষ নয়, গত ৭ ফেব্রুয়ারি জায়েদ তার পদ ফিরে পেতে আদালতের দ্বারস্থ হন। জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে শিল্পী সমিতির নির্বাচনে নিপুণ আক্তারকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জয়ী করে আপিল বোর্ডের দেওয়া সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। এক সপ্তাহের মধ্যে মামলার বিবাদীদের এর জবাব দিতে বলা হয়েছে।

পরদিন নিপুণ হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। পুরো ঘটনা নিয়ে উত্তপ্ত এখন চলচ্চিত্র অঙ্গন। সাধারণ শিল্পীদের মুখে একটি কথাই- কী হচ্ছে এসব! এক পরিবারের দ্বন্দ্ব এখন দেশজুড়ে প্রকাশ্যে। তা হলে কি ‘আমরা সবাই এক পরিবার’ তা শুধু মুখে মুখেই বলা!

বিষয়টি নিয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যে পদটি নিয়ে জল ঘোলা হচ্ছে, সেই পদ তো আমার না। আমি তাদের ব্যাপারে নাক গলাতে চাই না। আর ব্যাপারটা এখন আদালতে গড়িয়েছে। আদালতই এর রায় দেবেন।’ চলচ্চিত্রের শিল্পীরা দাবি করেন, ‘আমরা সবাই এক পরিবার।’

তা হলে এই পরিবারে এত দ্বন্দ্ব কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিবারের মধ্যে কি ঝগড়া হয় না, আদালত পর্যন্ত যায় না। সবাই কি বেহেস্তের মধ্যে থাকে!’

বিদায়ী সভাপতি মিশা সওদাগর বলেন, ‘যেহেতু বিষয়টি এখন আইনি প্রক্রিয়ায় গেছে, তাই বিষয়টি নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। আমি খুব সাধারণ মানুষ, একজন শিল্পী। আমার কাছে নির্বাচনটা হচ্ছে মালাবদলের পালা। আমরা সবাই শিল্পী, সবার মধ্যে একটা শিল্পী মনোভাব থাকা দরকার। যখন এমন কোনো ঘটনা ঘটে তখন কিন্তু শিল্পীদের মধ্যে একটু হলেও দূরত্ব তৈরি হয়। এগুলো ঠিক না, সবার মধ্যেই শিল্পীর ছাপ রাখা উচিত। আর নির্বাচনের বিষয়টি হলো দুই বছর পর পর শুধু মালাবদলের খেলা। এ নিয়ে মনঃক্ষুণ্ন হওয়ার কিছুই নেই।’

এ বিষয়ে কথা বলছেন গুণী নির্মাতা কাজী হায়াৎও। তার ভাষ্য, ‘আমার কাছে এটি খুবই দুঃখজনক আর আমি এর অবসান চাই। আদালত পর্যন্ত যাওয়া উচিত না। এই শিল্পের মানুষজনের মধ্যে অনেক দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে। এর সমাধান হওয়া খুব জরুরি।’

ক্ষোভ নিয়ে গুণী নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু বলেন, ‘এটা এক কথায় বলা যাবে না। ওই ছেলেটা (জায়েদ খান) তো ইন্ডাস্ট্রিকে ধ্বংস করে ফেলেছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছি, কী করা যায়। আর এফডিসিতে এই এমডি (এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিন) থাকলে আমরা আর কাজ করব না- এ নিয়েও কথা চলছে।’

চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির নেতা খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘মিশা-জায়েদ প্যানেল পর পর দুবার নির্বাচন করেছে। এর আগে কি এই সমিতিতে এমন ঝামেলা হয়েছে? বিগত নির্বাচনগুলোর দিকে তাকালেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে। পরিবারের মধ্যেও ঝামেলা থাকে। বিষয়টি নিয়ে আজকেই যে কথা উঠেছে তা কিন্তু না। জায়েদ একনায়কতন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে সমিতির মধ্যে কয়েক বছর ধরেই ঝামেলা হচ্ছে। ১৮৪ জন শিল্পীকে বাদ করে দেওয়া, নানা অন্যায়সহ আরও অনেক অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।

রাজ্জাক সাহেব, ফারুক সাহেব, আলমগীর সাহেবসহ সিনিয়র শিল্পীরা কিন্তু এই সমিতির হয়ে কাজ করেছেন। কই তখন তো এত কথা হয়নি। টুকটাক ঝামেলা হলেও তা নিজেরাই বসে মিটিয়ে নিয়েছেন। এখন কেন এসব হচ্ছে। জায়েদ খান এসে ১৮৪ জন শিল্পীকে বাদ করে দিল। এটা কেন করল সে। তারা নাকি অভিনয় করে না।

আমার প্রশ্ন হচ্ছে, জায়েদ খান তুমি কয়টা ছবি করেছ? যারা বাদ পড়েছে এবং অনেক শিল্পীই বলেছে, ১৮৪ জন শিল্পীকে নিয়ে নাও, এদের পেটে লাথি দিও না। এদের বাদ না দিয়ে, তাদের অভিনয়ের মান উন্নয়নের জন্য জায়েদ প্যানেল ব্যবস্থা করতে পারত। শিল্পী সমিতি এখানে অনেক কোর্স চালু করতে পারত। সিনিয়র শিল্পী ও চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে কথা বলতে পারত। তা হলে আজকে পরিস্থিতি আদালত পর্যন্ত যেত না। শিল্পীদের মধ্যে তারাই দূরত্ব তৈরি করেছে।’

এদিকে বিষয়টি নিয়ে জায়েদ খান, চিত্রনায়িকা নিপুণ এবং নির্বাচনী আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মুঠোফোনে তাদের পাওয়া যায়নি।

BBS cable ad

এনবিআর এর আরও খবর: