শিরোনাম

South east bank ad

নতুন ২ কোটি করদাতার সন্ধানে এনবিআর

 প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   এনবিআর

বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম

নিয়মিত কর্মযজ্ঞের চাপ তো আছেই; এর সঙ্গে মহামারীর প্রভাবে ব্যয় বেড়ে গেছে সরকারের। বিশ্বব্যবস্থার সঙ্গে তাল মেলাতে নতুন নতুন খরচের খাতও তৈরি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এ ছাড়া নাগরিকের জীবনযাত্রা, শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য, ভ্রমণ, নিরাপত্তা, উদ্ভাবনসহ সব খাত নতুন করে সাজাতে চায় সরকার। ফলে নতুন ধরনের অবকাঠামো, পরিকাঠামো, পরিচালন পদ্ধতির প্রচলন করতে হচ্ছে। এসব কাজে দরকার প্রচুর অর্থ।

অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যেতে সরকারও নতুন নতুন বিনিয়োগ করছে। ফলে প্রতিবছর বাজেট বড় হচ্ছে। এসব ব্যয় মেটাতে সরকার তাকিয়ে থাকে জনগণের দিকেই। কেননা সবার দেওয়া করের টাকাতেই চলে সরকার। বিশাল বাজেট বাস্তবায়নে তাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে বেশি বেশি রাজস্ব চায় সরকার। রাজস্বের বিপুল এ চাহিদা মেটাতে নতুন করদাতা খুঁজে বের করাকে সমাধান মনে করছে এনবিআর। এ জন্য করযোগ্য আয় থাকার পরও যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কর দিচ্ছে না, তাদের করের আওতায় আনার কৌশল নিয়েছে এনবিআর।

দেশের জিডিপির আকারের পাশাপাশি গড় মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বেতনভুক্ত কর্মীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। সামগ্রিক বিবেচনায় যত ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক করদাতা দেশে থাকার কথা, তা নেই। বর্তমানে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা। অর্থাৎ মাসিক ২৫ হাজার টাকার বেশি আয় থাকলে সে করের আওতাভুক্ত। এ টাকার বেশি আয় করার লোকের সংখ্যা ২২ লাখের অনেক বেশি বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এ জন্য করযোগ্য সব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে করের আওতায় আনা এনবিআরের মূল লক্ষ্য।

জানা গেছে, জনসংখ্যার অনুপাতে বাংলাদেশে সবচেয়ে কম নাগরিক আয়কর দেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কর দেওয়ার জটিল প্রক্রিয়া এবং হয়রানির ভয়ে এ দেশের নাগরিকরা করযোগ্য আয় থাকলেও কর দিতে আগ্রহ বোধ করেন না। তবে বড় অংশই আয়কর ফাঁকি দেন। আবার অনেকে আয়করের বিনিময়ে সরকারি সেবা কম পাওয়ার কথাও বলেন। দেশে আয়করদাতার সংখ্যা কম বলেই শুল্ক ও ভ্যাট আদায়ে বেশি চাপ দেওয়া হয়। যেমন সাবানের মতো প্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর নানা পর্যায়ে ভ্যাট আরোপ আছে। অথচ ধনী-গরিব সবাই সাবান ব্যবহার করেন। ফলে ভ্যাটের মতো পরোক্ষ করের মাধ্যমেও গরিব মানুষের কাছ থেকে কর আদায় করা হয়।

বাংলাদেশের চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা ভুটান, নেপাল, শ্রীলংকায় জনসংখ্যার অনুপাতে বেশি মানুষ কর দিচ্ছেন। এটি সম্ভব হয়েছে কর কাঠামোকে আধুনিক করার মাধ্যমে। এনবিআরও সেই চেষ্টা করছে। এ জন্য অনলাইনে টিআইএন খোলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে অনেক আগে। স্বেচ্ছায় আয়কর রিটার্ন দেওয়ার প্রক্রিয়াও সহজ করা হয়েছে। এক পৃষ্ঠার রিটার্ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে এনবিআর। সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক অন্যান্য কার্যক্রম সংস্কারের কাজ চলছে।

২ কোটি করদাতার খোঁজে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সিটি করপোরেশনে এনবিআর করযোগ্য ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানকে করের আওতায় আনতে বিদ্যুৎ, গ্যাস আর সিটি করপোরেশনের ডাটাবেজ যাচাই করতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআর কর্মকর্তার ধারণা- বিদ্যুৎ, গ্যাস আর সিটি করপোরেশনের ডাটাবেজ যাচাই করতে পারলে অন্তত দুই কোটি করদাতা বেরিয়ে আসবে। যে কারণে বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতের করদাতা শনাক্তে সহযোগিতা চেয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান। এনবিআরের ঊর্ধ্বতন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অধীনে চারটি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ও দুটি সংস্থা রয়েছে। বিতরণ কোম্পানিগুলো হলো- ডিপিডিসি, ডেসকো, নেসকো ও ওজোপাডিকো। আর দুটি সংস্থা হলো- পল্লী বিদ্যুৎ ও পিডিবি। যেখানে সারা দেশে আবাসিক গ্রাহকের সংখ্যা চার কোটি ১৯ লাখ। আর বাণিজ্যিক সংযোগ রয়েছে চার লাখ ৮৬ হাজার। অন্যদিকে দেশে গ্যাস বিতরণকারী কোম্পানি রয়েছে ছয়টি। এগুলো হলো- তিতাস গ্যাস, কর্ণফুলী ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড এবং সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড। এখানে সারাদেশে আবাসিক ও বাণিজ্যিক বৈধ গ্যাস সংযোগ গ্রহণকারী প্রায় ৪৪ লাখ গ্রাহক।

অন্যদিকে ঢাকার দুই সিটিকে ডিজিটাল সার্ভের আওতায় আনতেও উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। দুই সিটি করপোরেশনকে ডিজিটাল সার্ভের আওতায় আনতে পারলে এনবিআরের ধারণা সেখান থেকে অন্তত ৫০ লাখ করদাতা করনেটে চলে আসবে। বর্তমানে এনবিআর বিআরটিএ থেকে তথ্য নিয়ে গাড়ি মালিকদের আর জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর থেকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীদের তথ্য যাচাই করছে। এতে সুফল আসতে শুরু করেছে বলে বলছেন কর্মকর্তারা।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ এক লাখ ২৮ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা, আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে এক লাখ পাঁচ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা এবং আমদানি শুল্ক থেকে ৯৫ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়।

BBS cable ad

এনবিআর এর আরও খবর: