শিরোনাম

South east bank ad

কর ছাড়ের সংস্কৃতি থেকে বের হতে চায় এনবিআর

 প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২২, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   এনবিআর

কর ছাড়ের সংস্কৃতি থেকে বের হতে চায় এনবিআর

বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম

সরকারের ব্যয়ের খাত কেবল বড়ই হচ্ছে, অথচ আয়ে আছে বড় ঘাটতি। ব্যয়ের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ নেই সরকারের কাছে। বরং টাকার সংকটে আছে সরকার। সরকার পরিচালনার খরচ বেড়েছে। বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নেওয়ায় সুদ পরিশোধ ব্যয়সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আকার বাড়ছে উন্নয়ন ব্যয়ের। বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের বিপুল আগ্রহ। সব মিলিয়ে সরকারের ব্যয়ের তালিকা বড় হচ্ছে। কিন্তু রাজস্ব আয়ের বাইরে সরকারের জন্য অর্থের উৎস হচ্ছে ঋণ নেওয়া। এই ঋণ এখন অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ফলে সরকার অর্থ সংস্থানের নানা উপায় খুঁজছে। বিশেষ করে সরকার কর ছাড়ের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) মনে করে, প্রকল্পসহ বিভিন্ন খাতে কর অব্যাহতি দেওয়া এক ধরনের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে, যা রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর পথে বাধা হিসেবে কাজ করছে। দেশে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির তুলনায় কর অনুপাত অত্যন্ত কম। এমন বাস্তবতায় উন্নয়ন প্রকল্পে কর অব্যাহতির লাগাম টেনে ধরতে চায় এনবিআর। এ জন্য প্রকল্পে কর ছাড়ের যে বিদ্যমান নিয়ম আছে, তা পরিবর্তন করে বিকল্প প্রস্তাব করছে সংস্থাটি।

সম্প্রতি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত চিঠিতে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছেন, উন্নয়ন প্রকল্পে ‘সরাসরি’ কর অব্যাহতি দেওয়া যাবে না। এর পরিবর্তে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম আমদানির মাধ্যমে শুল্ক-কর পরিশোধ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। যে পরিমাণ শুল্ক-কর পরিশোধ করা হবে, পরে তা ফেরত বা রিফান্ড দেওয়া হবে। এ জন্য প্রতিবছর বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখা যেতে পারে।

রাজস্ব বোর্ড আরও বলেছে, প্রকল্প প্রণয়নের সময় যে ব্যয় প্রাক্কলন করা হবে, তার সঙ্গে শুল্ক ও কর বাবদ কত লাগবে তা একসঙ্গে যুক্ত করে মোট ব্যয় নির্ধারণ করতে হবে। এখন প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয়ের সঙ্গে শুল্ক ও কর যুক্ত করা হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কর মওকুফের বিশেষ সুবিধা নেওয়া হয় এনবিআর থেকে এসআরও জারির মাধ্যমে।

জানা গেছে, গত এক দশকে দেশ উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সমানভাবে রাজস্ব আহরণ হয়নি। গত ৫ বছরে রাজস্ব আহরণে সমমানের অন্যান্য দেশ, আঞ্চলিক ব্লক ও উন্নত দেশের সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায়, বাংলাদেশের রাজস্ব জিডিপি ৯ দশমিক ৯ শতাংশ- যেখানে ভারতের ১৯ দশমিক ৭, নেপালে ২১ দশমিক ৫, পাকিস্তানে ১৪ দশমিক ৯, শ্রীলংকায় ১২ দশমিক ৭ শতাংশ। উদীয়মান ও উন্নয়নশীল এশিয়ায় ২৪ দশমিক ৭ শতাংশ এবং উন্নত দেশে ৩৫ দশমিক ৮ শতাংশ। এজন্য রাজস্ব আহরণে যেসব দুর্বলতা রয়েছে তা দূর করার উদ্যোগের অংশ হিসেবে নতুন কৌশল নিচ্ছে এনবিআর।

জানা গেছে, রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগের সচিবদের কাছে লিখিত চিঠিতে এনবিআরের চেয়ারম্যান উল্লেখ করেন ‘মূলত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে শুল্ক-কর অব্যাহতি আমাদের অবস্থানের উন্নতিতে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। এ কর আদায় করা গেলে প্রকৃত কর-জিডিপি অনুপাত বর্তমানের দ্বিগুণ হবে। এর ফলে বাংলাদেশের উন্নয়নকে অধিক মাত্রায় ত্বরান্বিত করা সম্ভব বলে আমার দৃঢ়বিশ্বাস।’

চেয়ারম্যান জানান, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটতে চলেছে বাংলাদেশের। কিন্তু এখনো কর জিডিপির অনুপাত ১০ শতাংশের নিচে। কর জিডিপির অনুপাত না বাড়ার পেছনে বাধাগুলোর অন্যতম কর অব্যাহতি। কর অব্যাহতির কারণে অনেক সময় এনবিআর রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারে না।

কর অব্যাহতির বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর একটি অনুশাসন তুলে ধরে এনবিআর চেয়ারম্যান চিঠিতে উল্লেখ করেন : ‘২০১৬ সালের ১০ মে শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের উপস্থিতিতে উচ্চপর্যায়ের সভায় অব্যাহতির পরিবর্তে প্রযোজ্য শুল্ক-কর পরিশোধসাপেক্ষে পণ্য ছাড়ের মাধ্যমে কর জিডিপির হার বৃদ্ধির বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছিল। আমরা ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে চাই।’

কতটি উন্নয়ন প্রকল্পে এ পর্যন্ত কর সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তার কোনো তথ্য-উপাত্ত এনবিআরের কাছে নেই। তবে রাজস্ব বোর্ড বলেছে, এ সুবিধা দেওয়ার কারণে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। অধিকাংশ মেগা প্রকল্প কর মওকুফ সুবিধা ভোগ করছে। এর বাইরে বড় বড় প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে এ সুবিধা দিয়েছে সরকার। তবে সবচেয়ে বেশি কর সুবিধা পাচ্ছে বিদ্যুৎ খাত। এ খাতের সব বড় প্রকল্পই কর অব্যাহিত ভোগ করছে। এ ছাড়া অবকাঠামো খাতের বড় প্রকল্পগুলো একই রকম সুবিধা পাচ্ছে।

এদিকে কর অব্যাহতির বিষয়ে গত বছর একটি সমীক্ষা চালায় এনবিআর। এতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন খাতে অব্যাহতি দেওয়ার ফলে প্রতিবছর রাজস্ব ক্ষতি হয় ২ দশমিক ২৮ শতাংশ, টাকার অঙ্কে প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকা।

খাতওয়ারি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কয়েকটি খাতকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে ৮ মাসে প্রায় পৌনে ৪ হাজার কোটি টাকা অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। খাতগুলো হলো মোটরসাইকেল, মোবাইল, কম্পিউটার, ওয়াশিং মেশিন, কম্প্রেসার, এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার, লিফট ও মাইক্রোবাস। এনবিআর সূত্র মতে, ছোট-বড় উন্নয়ন প্রকল্প, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পে কর অব্যাহতি দিয়ে আসছে এনবিআর। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়, সরকারি সংস্থা, বিভিন্ন বাহিনী ও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে কর অব্যাহতি দেওয়া হয়। অন্যদিকে বিনিয়োগ বাড়াতে তথ্যপ্রযুক্তি খাত, বেজা-বেপজায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ এবং শিল্প স্থাপনে কর অব্যাহতি দেওয়া হয়।

BBS cable ad

এনবিআর এর আরও খবর: