চীনা পণ্য বয়কটের আওয়াজ : ভারতে বাড়ছে ওষুধের কাঁচামালের দাম
কাশ্মীরের লাদাখে চীনের সেনাদের হাতে অন্তত ২৩ ভারতীয় সেনা নিহতের ঘটনায় ভারতজুড়ে বাড়ছে চীনবিরোধী উত্তাপ। সারা ভারতে চীনা পণ্য বয়কটের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। তবে বাস্তবে তা কতখানি সম্ভব, সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কারণ দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই চীন থেকে আমদানি করতে হয়। বয়কট প্রচারণার জেরে ইতোমধ্যে ভারতে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে ওষুধ তৈরির কাঁচামালের দাম।
উত্তরাখণ্ডের ওষুধ উৎপাদক কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, গত চার দিনে ভারতে ওষুধের কাঁচামালের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশ। চীন বয়কট প্রচারণার জেরে এভাবেই বিপাকে পড়েছে ওষুধ শিল্প। একদিকে চলছে চীনের জাতীয় পতাকা এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিংপিংয়ের ছবি পোড়ানোর উৎসব। অন্যদিকে লাফিয়ে বাড়ছে ওষুধের কাঁচামালের দাম।
উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বার ও রুদ্রপুরে রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগমের অধীনে শতাধিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান দপ্তর রয়েছে। সেখানকার একটি ওষুধ উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার জানিয়েছেন, ‘গালওয়ান উপত্যকার ঘটনার পর চীনকে বয়কটের ডাক উঠেছে। এর জেরে দেশটি থেকে ওষুধের উপাদান সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো রাতারাতি ৩০ শতাংশ দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির দোহাই দিলেও তারা অনৈতিক উপায়ে মুনাফা লাভের উদ্দেশেই এটা করছে।’ তার অভিযোগ, ভারতে ওষুধের উপাদান সরবরাহকারী প্রধান ১০-১২টি কোম্পানি রয়েছে। এরাই মূলত চীন থেকে পণ্য আমদানি করে। উপাদান সরবরাহের ওপর এ প্রতিষ্ঠানগুলোর পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তাদের এড়িয়ে উপাদান সংগ্রহ অসম্ভব।
কারণ যাই হোক উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে বাড়তি দামে ওষুধ কিনতে হচ্ছে। পণ্য মজুত রেখে কালোবাজারির প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে সরবরাহকারীদের মধ্যে। জানা গেছে, ভারতে ওষুধ তৈরির কাঁচামালের ৮০ শতাংশই চীন থেকে আমদানি করা হয়। ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে এটি সংগ্রহ করতে গেলে দাম পড়বে দ্বিগুণ। এ জন্যই কাঁচামাল সংগ্রহে চীনমুখী ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।
হরিদ্বারের একজন উৎপাদক জানিয়েছেন, ‘ভারতে তৈরি যাবতীয় ওষুধের উপাদান জোগাড় করা হয় চীন থেকে।’ ব্যবসায়ীরা বলছেন, এমনকি সাধারণ প্যারাসিটামল জাতীয় মেডিসিন তৈরি করতেও গেলেও বেইজিংয়ের ওপর নির্ভরশীলতার বিকল্প নেই।
এ পরিস্থিতিতে চীননির্ভরতা কমাতে তৎপর হয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। চীন থেকে যে পণ্যগুলো আমদানি করা হয়, সে সবের তালিকা চাওয়া হয়েছে। এমনকি সেসব ভারতে উৎপাদিত হলে দাম কত পড়বে, উৎপাদনের ক্ষেত্রে করসংক্রান্ত কী কী অসুবিধা রয়েছে, সেসবও শিল্পমহলের কাছে জানতে চেয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
ভারত সরকার মনে করছে, এসবের ফলে চীন থেকে নিন্মমানের বহু পণ্যের আমদানি যেমন কমানো যাবে, দেশে উৎপাদিত পণ্যের পরিমাণও বাড়বে। ফলে দেশের অর্থনীতি আরও চাঙা হবে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দপ্তরে হওয়া আত্মনির্ভর ভারত প্রকল্প নিয়ে একটি বৈঠকে চীনের ওপরে নির্ভরতা কীভাবে কমানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়।
এদিকে সাম্প্রতিক সীমান্ত উত্তেজনার প্রেক্ষিতে চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা তিনটি প্রকল্প স্থগিত করেছে ভারতের মহারাষ্ট্র সরকার। এ প্রকল্পগুলোর সমন্বিত ব্যয় প্রায় পাঁচ হাজার কোটি রুপি। মহারাষ্ট্রের শিল্পমন্ত্রী সুভাষ দেশাই জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব চুক্তি লাদাখ সীমান্তে ২০ ভারতীয় সেনা হত্যার আগে করা হয়েছিল। এছাড়া, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নতুন করে আর কোনো চুক্তি না করার নির্দেশ দিয়েছে বলেও জানান তিনি।