প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাপানে লালগালিচা সংবর্ধনা

তিন দেশ সফরের শুরুতেই জাপানে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে চারদিনের সফরে গতকাল বিকালে তিনি টোকিওতে পৌঁছেন। এ সময় দেশটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সরকারপ্রধানকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভিভিআইপি চার্টার্ড ফ্লাইট (বিজি১৪০৩) গতকাল জাপানের স্থানীয় সময় বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে টোকিওর হানেদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

বিমানবন্দরে জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ইয়ামাদা কেনজি ও জাপানে বাংলাদেশের নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত সাহাবুদ্দিন আহমেদ প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। খবর বাসস।

এর আগে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ১৫ দিনের সরকারি সফরের প্রথম পর্যায়ে টোকিওর উদ্দেশে গতকাল সকাল ৭টা ৫৬ মিনিটে বিমানটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।

টোকিওর বিমানবন্দর থেকে আনুষ্ঠানিক মোটর শোভাযাত্রার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে আকাসাকা প্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হয়। জাপান সফরকালে প্রধানমন্ত্রী টোকিওর এ প্রাসাদেই অবস্থান করবেন। সফরকালে টোকিওর সঙ্গে আটটি চুক্তি সই করার কথা রয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্রিফিংকালে বলেন, ‘দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে উভয় দেশের মধ্যে আটটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।’ তিনি আরো বলেন, ‘জাপান সফরকালে কৃষি, মেট্রোরেল, শিল্প উন্নয়ন, জাহাজ রিসাইক্লিং, শুল্কসংক্রান্ত বিষয়, মেধাস্বত্ব, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, আইসিটি ও সাইবার নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তি সই হবে।’

সমঝোতা স্মারক সইয়ের বিষয় নিয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ‘প্রতিরক্ষা সংলাপ, দ্বিপক্ষীয় সফর, শিক্ষা, ট্রেনিং কোর্স, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং দুই পক্ষের সম্মতিতে এসবের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রসার ও শক্তিশালী করার জন্য এ সমঝোতা হচ্ছে।’

প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, বাংলাদেশের সক্ষমতা বেড়েছে, অর্থনৈতিক সক্ষমতাও বেড়েছে। আমরা আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীকেও শক্তিশালী করতে চাই। তারই অংশ হিসেবে এটা করা এবং এটাতে অন্য কোনো উপাদান নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন সক্ষমতা তৈরি হয়েছে এবং আমরা বিনিয়োগ করছি যেখানে সম্ভব হচ্ছে সব ক্ষেত্রেই। আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির বৃহত্তর কর্মসূচির অংশ হিসেবে এগুলো করা হচ্ছে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৬ এপ্রিল জাপানের সম্রাট নারুহিতোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।’

একই দিন চুক্তি সইয়ের পর শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে নৈশভোজের মাধ্যমে বৈঠকটি শেষ হবে। জাপান সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি বিনিয়োগ সম্মেলন এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও যোগ দেবেন বলে জানা গেছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য চার জাপানি নাগরিককে ‘ফ্রেন্ড অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ প্রদান করবেন আজ।

আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টোকিওতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি ও জেট্রোর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বাংলাদেশ বিজনেস সামিটে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেবেন।

সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর জাপানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশী ও কমিউনিটি আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে।

টোকিও সফরকালে প্রধানমন্ত্রী জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োশিমাসা হায়াশির সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়া তিনি জাইকা, জেইটিআরও, জেইইআইসি, জেবিপিএফএল, জেবিসিসিইসির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকসহ আরো কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যোগ দেবেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাপানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সহধর্মিণী আকি আবে ও জাপানি স্থপতি তাদাও আন্দোর সঙ্গেও দেখা করবেন বলে জানা গেছে। এছাড়া জাপানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল ‘এনএইচকে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি সাক্ষাত্কার সম্প্রচার করবে।

প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন।