তিতাসের সাবেক এমডির ভেলকি, সাড়ে ৫০০ কোটি নয়ছয়
নানা অনিয়ম আর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিতাসের ‘দুর্নীতিবাজ’ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হারুনুর রশীদ মোল্লাহর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করেছে সরকার।
সোমবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তবে তার চুক্তি বাতিলের পর কোম্পানিটিতে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এখন চরম শঙ্কায় আছেন।
বিদায়ী এমডির বিরুদ্ধে তিতাস গ্যাস কোম্পানিতে তিন বছর ধরে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে তিনি এ সময়ে ১৫০টি প্রতিষ্ঠানকে গ্যাসের নতুন সংযোগ ও লোড বৃদ্ধি করে অন্তত ৫৫০ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন।
এদিকে তিতাস গ্যাসের দুর্নীতিবাজ এক শ্রেণির কর্মকর্তার উস্কানিতে গতকাল পেট্রোবাংলায় বিক্ষোভ, হামলা ও ভাঙচুর করে কোম্পানির একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী। তিতাস গ্যাসে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ বলে জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, তিতাসের লোকজনের দাবি হচ্ছে তাদের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে এমডি করতে হবে। কিন্তু পেট্রোবাংলার সিনিয়রিটির তালিকায় তিতাস গ্যাসের শীর্ষ ৫০-৬০ এর মধ্যেও কেউ নেই। আবার অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এটা করে একশ্রেণির লোকজন দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়ার চেষ্টা করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের নীতি হচ্ছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স।
তিতাস গ্যাস সূত্র জানিয়েছে, শাহনেওয়াজ পারভেজকে দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকে তিতাসের জিএম (জিএম ইএসডি) হেলাল তালুকদার, জিএম (অডিট) মো. রাশিদুল আলম, ডিজিএম (পিসিডি) ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, প্রিপেইড মিটার প্রকল্পের পিডি কাওসার আলম সুমন অন্যদের উস্কানি দিতে শুরু করেন। অন্যদের ফুঁসলিয়ে পেট্রোবাংলায় গিয়ে হামলার নেতৃত্ব দেন।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বিক্ষুব্ধরা রাজধানীর কাওরান বাজারে পেট্রোবাংলার প্রধান কার্যালয় পেট্রো সেন্টারের নিচতলার রিসিপশনের গ্লাস ভাঙচুর করেন। এর পৌনে এক ঘণ্টা পর তারা তিতাস গ্যাসে ফিরে যান।
সদ্য বিদায়ী এমডি হারুনুর রশীদ মোল্লাহর বিরুদ্ধে আরো অভিযোগের মধ্যে রয়েছে- কেরানীগঞ্জ এলাকায় কয়েক শ’ ছোট-বড় শিল্পকারখানায় অবৈধ সংযোগ দিয়ে তিনি প্রতিমাসে কোটি কোটি টাকা মাসোহারা নিতেন। গত তিন বছরে এসব কারখানায় একবারের জন্যও অভিযান চালানো হয়নি।
সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগ থেকে ঐ এলাকায় গোপনে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। দায়িত্ব দেওয়া হয় জ্বালানি খাতের সবচেয়ে সৎ ও দক্ষ অফিসার হিসেবে পরিচিত গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজকে। এরপর গত দু’দিনের ঝটিকা অভিযানে ওই এলাকায় অসংখ্য অবৈধ শিল্পকারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে হারুনুর রশীদ মোল্লাহ তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের এমডি পদে পদোন্নতি পান। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে একের পর এক ঘুষ ও অনিয়মের অভিযোগ উঠতে থাকে। প্রায় দুই বছরে এমডি থাকাকালীন তিনি অবৈধভাবে ১০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ হাতিয়ে নেন এই খাত থেকে।
এই অর্থের একটা অংশ তুলে দিতেন সিন্ডিকেটের হাতে। বিনিময় হিসেবে ২০২৩ সালের আগস্টে তিতাসের এমডি পদে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত আর রক্ষা হলো না তারা