শিকলবন্ধি শাহান আলী’র জীবনের ১৯ বছর

এস.এম রফিক, (নেত্রকোনা):
পায়ে শিকল পড়ে বন্ধি অবস্থায়ই যেন নিত্য দিনের সঙ্গি হয়ে দাড়িঁয়েছে শাহান আলী(২৬) নামের এক যুবক। নেত্রকোনার দুর্গাপুরে জন্মের পরে ৬ পেরিয়ে যখন ৭ বছর বয়স হয় তখন থেকেই পায়ে শিকল ও হাতে দড়ি বাঁধা হয়ে প্রায় ১৯ বছর ধরে মানবেতর জীবনযাবন করছে মানসিক ভারসাম্যহীন ঐ যুবক। শাহান উপজেলার চন্ডিগড় ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের থাপনারগাতি গ্রামের আঃ মজিদ মিয়ার ছেলে।
এ নিয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পায়ে লোহার শিকল ও হাতে দড়ি লাগিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে মানসিক ভারসাম্যহীন শাহান আলী’কে। কখনো সে দাঁড়িয়ে থাকছে, কখনো সে শুয়ে বসে সময় কাটাচ্ছে, আবার কখনো হাসি-কান্নার মধ্য দিয়েই কাটছে তার জীবন।
কথা বলতে পারেনা সে, কখনও চিৎকার করতে থাকে। সন্তানের এ অবস্থা দেখে চিন্তায় সারাক্ষণ কাঁদেন তার বাবা-মা।
পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯৬ সালের সালের ১৩ই নভেম্বর মো. শাহান আলীর জন্ম হয়। জন্মের প্রায় ৭ বছর বয়স হওয়ার পর থেকেই তার মধ্যে মানসিক কিছু পরিবর্তন দেখা দেয়। তার অস্বাভাবিক আচরণ শুরু হয়।
সে সময় তাকে ছেড়ে দিলে ছোটাছুটি করে যাকে সামনে পেত তাকেই মারধর করতো। পরে সামর্থ মতো কিছুদিন চিকিৎসা চালালেও সুস্থ হয়নি শাহান আলী। তার আচরণের কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং অস্বাভাবিক আচার-আচরণ, মারধর দিন-দিন বাড়তে থাকে। এলাকাবাসীর কারো গরু, হাস, মুরগি, ছাগলদেরও মারধর করা সহ পরিবারের লোকজনদেরও কাছে পেলে আঘাত করার চেষ্টা করতো।
এ জন্যই পায়ে শিকল ও হাতে দড়ি দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে। এভাবেই চলতে থাকে বছরের পর বছর। মুক্ত থাকলে কখন কি দুর্ঘটনা ঘটায় এমন আশংকায় বন্দী করে রাখা হয়েছে বলে জানান তার পরিবারের সদস্যরা। শাহানকে রাতে ঘরের ভিতর পালার সাথে এবং সকালে বাড়ির সামনে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে সেখানেই খাবার দেওয়া হয় তাকে।
একদিন খেলে ২দিন চলে যায় তবুও খাবার খায় না। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে চলছে শাহানের বন্দি জীবন। প্রস্রাব পায়খানা এলে চিৎকার শুরু করে পরে পলিথিন দিলে সেখানে পায়খানা করে এরপর তার মা অথবা বাবা পরিষ্কার করেন। সরকারি সহায়তায় উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে হয়তো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারতো বলে জানান তার পরিবারের সদস্যরা।
শাহান আলী’র মা রহিমা খাতুন প্রতিবেদক’কে বলেন, রাতে ছেলের পায়ে শিকল ও দিনে হাতে দড়ি দিয়ে ঘরের পালার সাথে বেঁধে রেখে ঘরে ঘুমানোর ব্যবস্থা করি। দীর্ঘ সময় ধরে হাতে পায়ে বেঁধে রেখেছি আমার সন্তানকে। দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতে রাখতে হাতের স্থানগুলো ক্ষত হয়ে গেছে। এই দৃশ্য আমি মা সহ্য করতে পারছিনা।
মা হয়ে আমি নিজেও সারারাত ঘুমাতে পারি না। কারণ কখন সে কি করে বসে এই দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় আমাকে। আমি গরীব মানুষ, ঠিকমতো সংসার চালানোই আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। ছেলের উন্নত চিকিৎসা করব কীভাবে? তাকে উন্নত চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য আমাদের নেই। ছেলের চিকিৎসায় বৃত্তবান ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান পরিবার সহ এলাকাবাসীগন।