নীলফামারীতে নিরাপদ প্রসব সেবার হার বেড়েছে ১১ শতাংশ
শরিফা বেগম শিউলী, (রংপুর):
সপ্তাহে ৭ দিন এবং দিনে ২৪ ঘন্টা নিরাপদ প্রসব সেবা প্রদানের ফলে নীলফামারী জেলার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গত ছয় বছরে নিরাপদ প্রসব সেবার হার বেড়েছে ১১ শতাংশ।
২০১৬ সালে, নিরাপদ প্রসব সেবার হার ছিল ৬২.৪ এবং ২০২০ সালে তা বেড়ে ৭৩ শতাংশ হয়েছে । শো প্রজেক্ট কর্তৃক পরিচালিত জরিপে এই তথ্য পাওয়া যায় এমনকি করোনা মহামারীর মধ্যেও জলঢাকা উপজেলার খুটামারা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে ৬০ টি নরমাল ডেলিভারি (এনভিডি) হয়েছে।
আজ (১৪ মার্চ) সোমবার নীলফামারী জেলার ডিবিএলএম প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আয়োজিত শো পিএসসি কাম স্কোর প্রকল্পের অবহিতকরণ সভায় বক্তারা এই বিষয়ে বলেন।
নীলফামারী জেলার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপ-পরিচালক পরিবার পরিকল্পনা মোজাম্মেল হক।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা বাংলাদেশ এর উন্নয়ন উপদেষ্টা ফারজানা সুলতানা।
বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সিভিল সার্জন ডা. মোঃ জাহাঙ্গীর কবির এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর পরিচালক-প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্ট এ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন আফরোজ মহল।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সহকারী পরিচালক ক্লিনিক্যাল কন্ট্রাসেপশন ডাঃ মোঃ জাহেদুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বলেন, করোনা মহামারীর মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া খুবই কঠিন ছিল; যেখানে শো প্রকল্পের স্বাস্থ্য কর্মীরা নিজেদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রেখে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে, এটি একটি মহৎ কাজ।
তিনি এই প্রকল্পের সাফল্য কামনা করেন। সিভিল সার্জেন ডা. মোঃ জাহাঙ্গীর কবির বলেন, মা ও শিশু মৃত্যু রোধ করার জন্য শো প্রকল্পটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ২ জন করে সিএসবিএ নিয়োগ দিয়েছে, এতে করে গ্রামীণ দরিদ্র মায়েরা বিনামূল্যে নিরাপদ প্রসব সেবা, প্রসব পূর্ববর্তী এবং প্রসব পরবর্তী সেবা পাচ্ছে।
স্বাস্থ্যসেবা চলমান রাখার জন্য কোভিড-১৯ চলাকালীন গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা করেছে। সভার শুরুতে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সেন্ট্রাল অ্যান্ড নর্দান রিজিওন প্রোগ্রামের প্রধান সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন আশিক বিল্লাহ ।
স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ল্যাম্ব এর ডিরেক্টর-সিএইচডিপি বাপন মানখিন। শো এবং স্কোর প্রকল্পের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর স্কোর প্রজেক্টের প্রজেক্ট ম্যানেজার ডা. ওমর ফারুক ।
গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার অর্থায়নে শো প্রজেক্টটি ২০২০ সাল থেকে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং স্থানীয় সহযোগি সংস্থা ল্যাম্ব এর মাধ্যমে নীলফামারী জেলার ৩টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।
স্কোর প্রজেক্টটি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হয়েছে এবং আগামী ৬ মাস এই প্রজেক্টের কাজ চলমান থাকবে। ২০১৬ সাল থেকে এই প্রকল্পটি নীলফামারী জেলার সকল উপজেলায়, খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলা এবং বরগুনা জেলার বরগুনা সদর উপজেলায় বাস্তবায়িত হয়েছে।
নিরাপদ প্রসবসেবা নিশ্চিত করতে এবং মা ও শিশু মৃত্যু রোধ করার জন্য শো প্রকল্পটি ২০১৬ সাল থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সাথে কৌশলগত অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কাজ করে আসছিল ।
আফরোজ মহল বলেন, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বাংলাদেশ সরকারের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার সাথেও আমাদের দীর্ঘকালীন অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ক অব্যাহত আছেচ্।
জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ এবং সৈয়দপুর উপজেলায় অক্টোবর ২০২০ থেকে ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত শো প্রকল্পের মাধ্যমে মোট ৫০৩৮ টি নিরাপদ প্রসব সম্পন্ন হয়েছে, ৪৬, ৩০৭ জন গর্ভবতী মা প্রসব পূর্ববর্তী সেবা গ্রহন করেছেন, এবং ১১,৩০৩ মা প্রসব পরবর্তী সেবা পেয়েছেন। ১,৩৫২ জন মাকে উচ্চতর কেন্দ্রে রেফার করা হয়েছে।
এছাড়াও, ২৫৪ জন কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মীকে এবং ৪৮ জন সিএসবিএকে (কমিউনিটি স্কিলড বার্থ অ্যাটেনডেন্ট) নিরাপদে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য পিপিই প্রদান করা হয়েছে।
কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ থেকে কমিউনিটির মানুষকে নিরাপদ রাখতে ৩টি উপজেলায় ১১,৪০০টি পরিবার, ২৪টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ২৭টি স্কুল এবং ৯২টি কমিউনিটি ক্লিনিকে হাত ধোয়ার ডিভাইস প্রদান করা হয়েছে।
৩টি উপজেলায় কোভিড-১৯ এর মহামারী মোকাবেলায় মোবাইল মানি ট্রান্সফার (এমএমটি) এর মাধ্যমে ৭০০ অতি দরিদ্র পরিবারের মধ্যে মোট ৩১,৫০,০০০ টাকা নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
শো প্রকল্প সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি কক্ষ সংস্কার করে দিয়েছেন কোভিড-১৯ টিকাদানের বুথ হিসাবে ব্যবহারের জন্য।
নীলফামারী জেলায় এপ্রিল ২০১৬ থেকে ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত শো প্রকল্পের মাধ্যমে ৫৯টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে মোট ২০,১৩২ টি নিরাপদ প্রসব সম্পন্ন হয়েছে, ২,০২,৮০৬ জন গর্ভবতী মা প্রসব পূর্ববর্তী সেবা গ্রহণ করেছেন, এবং ৩৪,৭৪৫ জন মা প্রসব পরবর্তী সেবা পেয়েছেন। ৬,২০২ জন মাকে উচ্চতর কেন্দ্রে রেফার করা হয়েছে।