South east bank ad

চাঁদপুরে বন্যায় ১২ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি

 প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   সারাদেশ

চাঁদপুরে বন্যায় ১২ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি

কুমিল্লা, ফেনী ও নোয়াখালী জেলার বানের পানিতে তলিয়ে গেছে চাঁদপুরের কচুয়া, শাহরাস্তি ও হাজীগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ ফসলি জমি।

একই সময়ে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে ফরিদগঞ্জ, সদর ও হাইমচর উপজেলায় পান, আখ, রোপা আউশ ও আমনের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ফলে জেলার ৬ উপজেলায় ১২ হাজার হেক্টর জমির ধানসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হয়েছে ৮৬ কোটি ৬৬ লাখ ২২ হাজার টাকা। কৃষি বিভাগ বলছে-ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে প্রণোদনা হিসেবে আমনের বীজ ও সার সরবরাহ শুরু করেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, বন্যা ও জলাবদ্ধতায় জেলায় ৪৭ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই সময়ে মাঠে ফসলের আবাদ ছিল ৩৩ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমিতে। দণ্ডায়মান ফসল আছে ৩২ হাজার ২৯২ হেক্টর জমিতে। আক্রান্ত ফসলি জমির পরিমাণ ১২ হাজার ১৪৭ হেক্টর। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ৮ হাজার ৭৮৬ হেক্টর।

সরেজমিন বন্যা দুর্গত কচুয়া ও শাহরাস্তি উপজেলায় বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে রোপা আউশ পানির নিচে তলিয়ে আছে। কিছু মাঠে রোপা আউশ দেখা গেলেও ধানের গোড়া পচে নুয়ে পড়েছে।

 ফরিদগঞ্জ উপজেলার মদনের গাঁও গ্রামের কৃষক জসিম উদ্দিন বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে রোপা আমন ক্ষতিগ্রস্ত। একই সঙ্গে আখের জমিগুলো সব নুয়ে পড়েছে। এসব আখ বিক্রি করেও দাম পাওয়া যাবে না।

পাশের মানিকরাজ গ্রামের কৃষক মো. রহুল আমিন বলেন, জলাবদ্ধতায় আমাদের বেশি ক্ষতি হয়েছে রোপা আমন ও বীজতলা। এ বছর আর রোপা আমন করা সম্ভব হবে না। কারণ সময় পার হয়ে গেছে।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কল্লোল কিশোর সরকার বলেন, জলাবদ্ধতায় উপজেলায় প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমির রোপা আউশ, আমন, আখ, বীজতলা ও অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি পানি নেমে গেলে বীনা জাতের বিআর-২২ ও ২৩ জাতের ধান আবাদ করতে। কারণ খুব দ্রুত সময়ে এ ধানের ফলন হয়।

শাহরাস্তি রায়শ্রী উত্তর ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকা উনকিলা গ্রামের কৃষক কেরামত আলী বলেন, আমার ১ একর জমিতে আউশের আবাদ আছে। ধান কর্তনের সময় হয়েছে। কিন্তু এখন সবই শেষ। আমাদের এই ক্ষতি কীভাবে পোষাবো বলতে পারছি না।

একই এলাকার দুলাল নামে আরেক কৃষক বলেন, এ বছর তিনিও ১ একরের বেশি জমিতে রোপা আউশ আবাদ করেছেন। তার জমিগুলোও এখন পানিতে তলিয়ে আছে। গাছের চিহ্নও দেখা যায় না। ঋণ করে টাকা নিয়ে জমিতে বিনিয়োগ করেছি। এখন কোনো পথ দেখছি না।

শাহরাস্তি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আয়শা আক্তার বলেন, উপজেলার বন্যাকবলিত ইউনিয়নের মাঠ জরিপে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে ৪ হাজার কৃষকের তথ্য পেয়েছি। রোপা আউশসহ বিভিন্ন ফসলে ৬ কোটি ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকার প্রাথমিক ক্ষতির আশঙ্কা করছি। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে প্রণোদনা হিসেবে সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে।

 

উপজেলার উত্তর আলগী ইউনিয়নের মহজমপুর গ্রামের পান চাষি আবু তাহের জানান, তিনি এ বছর ৪০ শতাংশ জমিতে প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ করে পানের বরজ করেছেন। টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় দুটি পানের বরজ। বরজের ভবিষ্যৎ কী হবে তাও বলতে পারছেন না তিনি।

হাইমচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাকিল খন্দকার বলেন, উপজেলার ১১৯ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ আছে। অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে প্রায় ১০০ হেক্টর জমির পান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পান চাষের সঙ্গে জড়িত আছে ১ হাজার ৭২ জন কৃষক। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি এবং ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. সাফায়েত আহম্মদ ছিদ্দিকী বলেন, আমাদের মাঠ জরিপের তথ্যমতে বন্যা ও জলাবদ্ধতায় প্রায় ৪৭ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত। ফসলের মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাঠে থাকা রোপা আউশ, আমন ও পান। পানিতে তলিয়ে ক্ষতি হয়েছে আমন এবং বীজতলা। ইতোমধ্যে প্রায় সব উপজেলায় কৃষকদের মাঝে প্রণোদনা হিসেবে আমনের বীজ, সার ও নগদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সব কৃষকদের আমরা প্রণোদনার আওতায় আনার চেষ্টা করছি।

BBS cable ad

সারাদেশ এর আরও খবর: