হাসিনা সরকারের ১৮ লাখ কোটি টাকার ঋণ বড় বোঝা
পলাতক শেখ হাসিনা সরকারের রেখে যাওয়া ১৮ লাখ কোটি টাকা ঋণ জাতির জন্য বড় বোঝা বলে জানিয়েছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ওই বিশাল ঋণ আমাদের জন্য বড় প্রেশার, প্রচণ্ড প্রেশার। কারণ এগুলো দিয়েছে তারা চুক্তি করে। ডোনারদের বলতে হবে এটি বিরাট প্রেশার। আমরা এগুলো রিভিউ করছি, দেখছি। আমরা এটি নিয়ে সতর্ক আছি। আমাদের নিজেদের মধ্যেও এটি নিয়ে কথা হচ্ছে। এত বড় ঋণের বোঝা নিয়ে শুরু করেছি, আমাদের জন্য খুব কঠিন। এগুলো আমরা সমাধানের চেষ্টা করব।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে চীনের কাছ থেকে নেওয়া উচ্চ সুদের ঋণের সুদহার কমানো এবং ঋণ পরিশোধের রেয়াতকাল বা সময় বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, রেট অব ইন্টারেস্ট নিয়ে আমরা তার সঙ্গে কথা বলেছি, সে বলেছে দেখবে। রিপেমেন্ট পিরিয়ড আরও ১০ বছর বাড়ানোর জন্য বলেছি।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকীও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। চীনা ঋণের সুদহার নিয়ে আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, রেট অব ইন্টারেস্ট নিয়ে উপদেষ্টা মহোদয় বলেছেন, এটি যত কমানো যায় এবং রিপেমেন্ট পিরিয়ডটা যেন বাড়ানো যায়। তারা সম্মত হয়েছে যে তারা বেইজিং হেডকোয়ার্টারে আমাদের কনসার্নটা পৌঁছে দেবে এবং তারা শিগগিরই আমাদের জানাবে।
সৌজন্য সাক্ষাতের পর চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে এটি আমার প্রথম সাক্ষাৎ। আমাদের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। আমরা একসঙ্গে কাজ করব।’
চীনা অর্থায়নে বাংলাদেশে যেসব প্রকল্প চলমান রয়েছে, সেসব নিয়ে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, এসব প্রকল্প চলমান থাকবে। পাশাপাশি নতুন করে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার বিষয়েও কথা হয়েছে।
চীনা ঋণের সুদহার নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশের দিক থেকে ঋণের সুদহার নিয়ে যে আপত্তি উঠেছে তা নিয়েও কথা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সুযোগ আছে।’
গত আট বছরে ২৭ প্রকল্পে অর্থায়নের আগ্রহ দেখিয়েছিল চীন, তার মধ্যে ১০টি প্রকল্প বাংলাদেশ গ্রহণ করে। এর মধ্যে কর্ণফুলী টানেল, দাশেরকান্দি পয়োশোধনাগার, ফোর টায়ার জাতীয় ডেটা সেন্টার নির্মাণসহ চারটির কাজ শেষ হয়েছে।
পদ্মা রেল সংযোগ, চট্টগ্রামের সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং বা এসপিএম, ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে, পিজিসিবির আওতায় বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন, ডিপিডিসির আওতায় বিদ্যুতের বিতরণ ব্যবস্থা, রাজশাহীতে ওয়াসার ভূ-উপরিস্থ পানি সরবরাহ প্রকল্প চলমান আছে।
চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের পর অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমদ এদিন কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকলসের সঙ্গেও বৈঠক করেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের দুই অ্যাম্বাসেডরের সঙ্গে কথা হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয়গুলো আমরা কন্টিনিউ করব। তাদের যে প্রকল্প সেগুলো বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করব। তাদের কাছে অনুরোধ করেছি তোমরা তোমাদের টেকনিক্যাল সাপোর্ট, আর্থিক সাপোর্ট কন্টিনিউ করবে। তারা আমাদের নিশ্চিত করেছে তারা সাধারণত যতটুকু করে তার চেয়ে বেশি করবে। তাদের কিছু কিছু বিষয় থাকতে পারে, আমরা দ্রুত সেগুলো চিহ্নিত করব। আমরা সময় নেব না। তারা বলছে এর আগে অনেক সময় ফেলে রাখত। আমরা বলেছি এটি দেখব। ভবিষ্যতে যে টাকা আসবে তা যেন মানুষের কল্যাণে সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার হয়। সময়মতো যেন ব্যবহার হয় এবং কোয়ালিটি কোনোভাবে ব্যাহত না হয়। উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আগের সরকার কিছু সমস্যা তৈরি করে দিয়েছে। অনেক প্রকল্প না নিলেও চলত, আমাদের ওপর ঋণের বোঝা পড়েছে। এগুলো দুঃখজনক ব্যাপার। আমরা চেষ্টা করব যথাসম্ভব সাহায্য করতে। আমরা এসব সমস্যা নিয়ে সতর্ক আছি, যেগুলো তারা তৈরি করে গেছে।’
তিস্তা প্রকল্প নিয়ে চীনের দূতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চীনের সঙ্গে কিছু ইস্যু আছে, কানাডার সঙ্গে কিছু ইস্যু আছে। এগুলোর আলোচনা খুব বিস্তারিত করিনি। অন্য অনেক বিষয়ে কথা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন সরকার। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন প্রকল্পের অনুকূলে ৪ বিলিয়ন ডলার ছাড় করেছে দেশটি।