South east bank ad

সার্টিফিকেশন বোর্ড ও সমন্বিত নীতির অভাবে বিকাশ হচ্ছে না হালাল শিল্পের

 প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   কর্পোরেট

সার্টিফিকেশন বোর্ড ও সমন্বিত নীতির অভাবে বিকাশ হচ্ছে না হালাল শিল্পের

বাংলাদেশের হালাল শিল্প বিশ্ববাজারে বড় সম্ভাবনার দ্বার খুললেও দেশের ভেতরে এখনো চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে খাতটি। হালাল পণ্যের অ্যাক্রেডিটেড সার্টিফিকেট প্রদানে স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ না থাকা, দক্ষ জনবল ঘাটতি এবং সমন্বিত জাতীয় নীতির অনুপস্থিতির কারণে বিকাশ হচ্ছে না এ খাতের। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বে হালাল পণ্যের বাজার প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের, কিন্তু বাংলাদেশ রফতানি করছে মাত্র ৮৫ থেকে ১০০ কোটি ডলারের মতো।

গতকাল রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের হালাল শিল্প খাতের উন্নয়ন: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক ফোকাস গ্রুপ আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা জানান। এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ডিসিসিআই।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমানে হালাল পণের বৈশ্বিক বাজার প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের হলেও বাংলাদেশের রফতানি ১ বিলিয়ন ডলারেরও কম। যার বেশির ভাগই কৃষিভিত্তিক পণ্য। একটি কার্যকর হালাল ইকোসিস্টেমের অনুপস্থিতির পাশাপাশি দেশে হালাল পণ্যের অ্যাক্রেডিটেড সার্টিফিকেট প্রদানে স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ না থাকার কারণে এ খাতের বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানের পরীক্ষাগার স্থাপনের সরকারি-বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগ গ্রহণও জরুরি।’

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং বিএসটিআই—দুটো প্রতিষ্ঠান হালাল পণ্যের সনদ প্রদান করে, যা অনেক ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করছে। পাশাপাশি আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে পিছিয়ে থাকা, দেশের ব্র্যান্ডিং ইমেজে পিছিয়ে থাকা, এ খাতে এসএমইদের অনুপস্থিতি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের দেশের হালাল পণ্যের ইতিবাচক ইমেজের অভাব, সমন্বিত নীতিমালার অনুপস্থিতি, দক্ষ জনবলের স্বল্পতার পাশাপাশি কাঠামোগত সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থা না থাকা এ খাতের উন্নয়নে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে।’

সভায় হালাল পণ্যের ডিজিটাল সার্টিফিকেট ও পণ্য উৎপাদন কমপ্লায়েন্স অডিটের মাধ্যমে মান নিশ্চিতের ওপর জোরারোপ করেন প্যারাগন গ্রুপের সহকারী ম্যানেজার (এক্সপোর্ট) মো. আবুল কালাম।

বেঙ্গল মিটের হেড অব সাপ্লাই চেইন অ্যান্ড এক্সপোর্ট এজিএম সায়েদুল হক ভূইয়্যা বলেন, ‘হালাল পণ্যের মূল্য সংযোজন এবং ব্লকচেইনের প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পশুর জীবনবৃত্তান্তের তথ্য সংরক্ষণ করা এখন সময়ের দাবি। একই সঙ্গে দেশে হালাল সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিকভাবে অ্যাক্রেডিটেড হতে হবে।’

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক ড. মো. আবু সালেহ পাটোয়ারী বলেন, ‘বাংলাদেশে হালাল সার্টিফিকেট প্রদান সরকারের একক কোনো প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা নেই। তাই সংশ্লিষ্ট বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ের মাধ্যমে এ সনদ প্রদান করা হচ্ছে। হালাল পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে বিশেষ করে সরকারি প্রতিষ্ঠানের নজরদারি বাড়ানো জরুরি।’

অনুষ্ঠানে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ডিরেক্টর জেনারেল-১ (যুগ্ম সচিব) বেবী রাণী কর্মকার বলেন, ‘হালালের বৈশ্বিক বাজার প্রতি বছর প্রায় ১২ দশমিক ৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্ভাবনাময় এ খাতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য সমন্বিত উদ্যোগ দরকার।’

স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে রফতানি সম্প্রসারণে সম্ভাবনায় হালাল খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ খাতের উন্নয়নে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে বলে উল্লেখ করেন বিডার মহাপরিচালক মো. আরিফুল হক। তিনি বলেন, ‘হালাল খাতের বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বাড়াতে আমরা পিছিয়ে রয়েছি, তবে সবার সমন্বিত উদ্যোগের যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ খাতে সফলতা অর্জন করা সম্ভব।’

BBS cable ad

কর্পোরেট এর আরও খবর: