শিরোনাম

South east bank ad

বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মাঝে আতঙ্ক

 প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মাঝে আতঙ্ক

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা ভল্টে ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত লকার ফ্রিজে (স্থগিত) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গভর্নরকে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিশেষ এসব লকারে অপ্রদর্শিত বিপুল অর্থ-সম্পদ জমা থাকতে পারে বলে মনে করছে সংস্থাটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর গত রোববার পাঠানো এক চিঠির সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। কেউ যেন লকার খুলে রক্ষিত কিছু নিতে না পারেন তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেয়ারও অনুরোধ জানানো হয়েছে দুদকের চিঠিতে। এ উদ্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওইসব লকার খোলা ও সেখানে থাকা অর্থ-সম্পদের তালিকা তৈরির অনুমতির জন্য গত সোমবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র স্পেশাল জজের কাছে আবেদন করেছে দুদক। এ বিষয়ে আদালতের পক্ষ থেকে গতকাল অনুমতি দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

জানতে চাইলে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘লকার খোলা ও তাতে থাকা অর্থ-সম্পদের তালিকা তৈরির বিষয়ে আদালত অনুমতি দিয়েছেন। আদালতের পক্ষ থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। দুই-তিনদিনের মধ্যে তার উপস্থিতিতে জব্দকৃত লকারগুলো খোলা হবে।’

গভর্নর বরাবর পাঠানো দুদকের পরিচালক কাজী সায়েমুজ্জামানের সই করা চিঠিতে বলা হয়, দুদক টিম গত ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েন ভল্টে রক্ষিত সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরীর (এস কে সুর) সেফ ডিপোজিট তল্লাশি করে। সেখানে জমা করা তিনটি সিলগালা কৌটা খুলে ৫৫ হাজার ইউরো, ১ লাখ ৬৯ হাজার ৩০০ ডলার, এক কেজি ৫ দশমিক ৪ গ্রাম স্বর্ণ ও ৭০ লাখ টাকার এফডিআর পাওয়া যায়; যা নিয়মিত আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করেননি সাবেক এ ডেপুটি গভর্নর।

তল্লাশিকালে রেজিস্টার পরীক্ষা করে দেখা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের আরো কিছু কর্মকর্তাও সিলগালা করে সেফ ডিপোজিট রেখেছেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। তাতে আরো বলা হয়, এসব সিলগালা কৌটায়ও অপ্রদর্শিত সম্পদ থাকার অবকাশ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।

দুদকের চিঠিতে বলা হয়, অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে গত ৩০ জানুয়ারি দুদক চেয়ারম্যানের সম্পদ পুনরুদ্ধার বিষয়ে এক আলোচনা হয়। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত সম্পদ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা ওই ভল্টে রক্ষিত সম্পদ সাময়িকভাবে ফ্রিজের সম্মতি দিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, গভর্নরকে দেয়া দুদকের চিঠি ও অর্থ উপদেষ্টার সম্মতি থাকায় ভল্টের সব লকারের সম্পদ ফ্রিজ করা হয়েছে। ফলে সাময়িকভাবে লকার থেকে কেউ কোনো ধরনের অর্থ-সম্পদ সরিয়ে নিতে পারবেন না। এর পর থেকেই আতঙ্কে আছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এস কে সুর চৌধুরীর লাকারে যে পরিমাণ নগদ অর্থ ও সম্পদ পাওয়া গেছে, তাতে তারা বিস্মিত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত শতাধিক লকার রয়েছে। সেগুলোয়ও বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ ও সম্পদ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সৎ কর্মকর্তারা দুদকের অভিযানকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। আর অসৎ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তাদের একটি অংশ গত কয়েক দিনে লকার থেকে কিছু সম্পদ সরিয়েও ফেলেছেন হয়তো।’

সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরীকে রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে গত ১৪ জানুয়ারি গ্রেফতার করে দুদক। আদালতের আদেশে ওইদিনই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রভাবশালী সাবেক এ শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আর্থিক খাতের অন্যতম দুর্বৃত্ত প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) অর্থ লুণ্ঠনে সহায়তার পাশাপাশি অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের লকার খোলা ও সেখানে থাকা অর্থ-সম্পদের তালিকা তৈরির অনুমতির জন্য আদালতের কাছে করা আবেদনেও এস কে সুর চৌধুরীর প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে। আবেদনে বলা হয়, গত ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েন ভল্টে রক্ষিত সাবেক এ ডেপুটি গভর্নরের সেফ ডিপোজিট তল্লাশিকালে রেজিস্টার পরীক্ষা করে দেখা যায়, ব্যাংকটির আরো কিছু কর্মকর্তাও সিলগালা করে সেফ ডিপোজিট রেখেছেন। সেখানেও অপ্রদর্শিত সম্পদ থাকার অবকাশ রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তাদের দুর্নীতির আশ্রয় নেয়াকে দেশের জন্য লজ্জার বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তফা কে মুজেরী। তিনি একসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ছিলেন। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকিংয়ের মূল কথা হলো সততা ও আস্থা। আস্থার কারণেই মানুষ তার কষ্টার্জিত অর্থ ব্যাংকে জমা রাখে। আমানতকারীদের আস্থা অটুট রাখার দায়িত্ব হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। কিন্তু আমরা দেখছি, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরের মতো সর্বোচ্চ পদে দায়িত্ব পালন করা ব্যক্তিও দুদকের মামলায় গ্রেফতার হচ্ছেন। এটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি দেশের জন্যও লজ্জাজনক ঘটনা।’

BBS cable ad

বাংলাদেশ ব্যাংক এর আরও খবর: