South east bank ad

দেশের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিগুলোর শাস্তি না হলে ফের তলানিতে যাবে অর্থনীতি

 প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   কনজুমার প্রোডাক্টস

দেশের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিগুলোর শাস্তি না হলে ফের তলানিতে যাবে অর্থনীতি

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার স্বার্থ এক হয়ে গেলে ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’ তৈরি হয়। ব্রিটিশ-ভারতের শাসক হয়ে ওঠা কোম্পানিটির আদলে বাংলাদেশেও ১০-১৫টি কোম্পানি গড়ে ওঠেছিল। বিগত সময়ে গড়ে ওঠা এসব কোম্পানিকে এরই মধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোকে শাস্তির আওতায় না আনা হলে দেশের অর্থনীতি ফের তলানির দ্বারপ্রান্তে যাবে বলে দেশের বিশিষ্টজনরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

রাজধানীর বনানীতে গতকাল বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) কার্যালয়ে জুলাই-আগস্ট মাসের ‘মান্থলি মাইক্রোইকোনমিক ইনসাইটস (এমএমআই)’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তারা এ আশঙ্কার কথা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছে পিআরআই।

গবেষণা সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. খুরশিদ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। এ সময় জুলাই-আগস্ট মাসের সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআইয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘ইস্ট ইন্ডিয়ার আদলে গড়ে ওঠা কোম্পানিগুলোর শুধু সম্পদ জব্দ করাই যথেষ্ট নয়, বরং তা সরকারের হিসাবের খাতায় নিয়ে আসতে হবে।’ ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রতি আস্থা ধরে রাখতে হলে ব্যাংক হিসাব জব্দ করার ক্ষেত্রে বিবেচনা করে পদক্ষেপ নিতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।

সাবেক গভর্নর বলেন, ‘কোনো অসাধু ব্যক্তির স্ত্রী-পুত্র-কন্যা যদি স্বাধীন হন, তাহলে তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার কী কারণ আছে। আমরা দেখছি, পরিবারের সদস্যদের হিসাবও জব্দ হচ্ছে। এ ধরনের প্রদক্ষেপ ভালো ফল দেবে বলে মনে করি না। এতে ব্যাংকের প্রতি আস্থা কমে যাবে।’

সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যাংক হিসাব জব্দের বিষয়টি খুব সীমিত রাখতে হবে। ওই যে ১০-১৫ জন কুলাঙ্গারের নাম এসেছে, এদের মধ্যে এটি সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।’

দেশে অর্থনীতির অগ্রগতির পাশাপাশি বিগত সময়ে বড় ধরনের দুর্নীতিও হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর। তিনি বলেন, ‘সরকারকে অর্থ পাচারকারীদের ধরার ব্যাপারে উৎসাহিত করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক, শুল্ক বিভাগ (কাস্টমস) ও বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (সিভিল এভিয়েশন) এ ক্ষমতা রয়েছে।’ অর্থবছর জুলাই-জুনের পরিবর্তে জানুয়ারি-ডিসেম্বর করা হলে অর্থের অপচয় কমবে বলেও মনে করেন ড. ফরাসউদ্দিন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান বলেন, ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আদলে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের অর্থনীতিকে তলানির দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা যদি আমরা রক্ষা করতে না পারি, তাহলে আবারো নতুন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জন্ম নিতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘অর্থনীতিতে ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতা ফিরছে। বৈদেশিক খাত ও রাজস্ব আদায়ে কিছুটা ইতিবাচক অগ্রগতিও দেখা যাচ্ছে। তবে প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান এখনো দুর্বল। মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমলেও মজুরি বৃদ্ধির সঙ্গে মূল্যস্ফীতির তাল মিলছে না।’

এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আগস্টে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশে। খাদ্যবহির্ভূত খাতে দাম কিছুটা কমলেও খাদ্যদ্রব্যের দাম কিছুটা বেড়েছে। বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি এখনো ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্য এটা ৭ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা। এজন্য কঠোর মুদ্রানীতি বজায় রাখা হচ্ছে। তবে প্রবৃদ্ধি এখনো মন্দার ধারে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ছে না, যার ফলে প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশিত মাত্রায় পৌঁছাচ্ছে না। প্রকৃত মজুরি কমে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের আয়ও কমছে। কাঠামোগত সমস্যা ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাও নতুন বিনিয়োগে বাধা হয়ে আছে।’

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি কামরান টি রহমান, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ভিজিটিং রিসার্চ ফেলো খন্দকার সাখাওয়াত আলীসহ অনেকে।

BBS cable ad

কনজুমার প্রোডাক্টস এর আরও খবর: