৭৬১ কোটি টাকায় মুহুরী প্রকল্পের পানি যাবে জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য মুহুরী প্রকল্পের রিজার্ভার থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি এনে তা ব্যবহারের উপযোগী করতে একটি শোধনাগার নির্মাণ করা হচ্ছে। ৭৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এরই মধ্যে প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালের শেষের দিকে পানি শোধনাগারটি পুরোদমে উৎপাদনে যেতে পারবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বেজা সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য মুহুরী প্রকল্প থেকে পানি এনে তা ব্যবহার করতে দৈনিক ১০০ মিলিয়ন লিটার (এমএলডি) ক্ষমতাসম্পন্ন একটি শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ১৮ একর জমির ওপর নির্মাণাধীন এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৬১ কোটি টাকা। সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০২৪ সালে।
এদিকে মুহুরী নদীর রিজার্ভ পানি আনার জন্য বসানো হচ্ছে ৯ দশমিক ৬ কিলোমিটার পাইপলাইন। পানি শোধনাগার নির্মাণ ও পাইপলাইন সঞ্চালনের কাজ দেয়া হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না জেভিকে।
আগামী বছরের শেষের দিকে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হবে বলে জানিয়েছেন বেজার পরামর্শক আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি পুরোপুরি চালু হলে দৈনিক ৭০০-৮০০ এমএলডি পানি লাগতে পারে। আমরা ১০০ এমএলডি পানি মুহুরী প্রকল্পের রিজার্ভার থেকে এনে শোধনের মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী করব। শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত ওই পানি তিনটি সেন্ট্রাল অ্যাপুল্যান্ড ট্রিটমেন্ট প্লান্টের (সিইটিপি) মাধ্যমে শোধন করে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করা হবে।’
বেজার পরামর্শক আরো জানান, চট্টগ্রাম ওয়াসা ও কোরিয়ান সরকারের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মেঘনা নদী থেকে বাকি পানির ব্যবস্থা করা হবে। তবে তা সময়সাপেক্ষ হওয়ায় জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে গ্রিন ইন্ডাস্ট্রিকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয় জানিয়েছে, বর্তমানে ২৬টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক স্থাপন করা গভীর নলকূপের পানি ব্যবহার করছে। এগুলোর মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপ, সামুদা, ম্যাগডোনাল্ড, এসকিউ, কোলগেট, আরএসপিএল, কিয়াম ও হেলথকেয়ার অন্যতম। প্রতি মাসে এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান ৪১ হাজার ৯৪০ কিউবিক মিটার পানি ব্যবহার করছে। বেজা কর্তৃক প্রতি কিউবিক পানির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২ টাকা। এ হিসেবে প্রতি লিটার পানির মূল্য ৩২ পয়সা। ৩৮টি গভীর নলকূপ বসানো হলেও বর্তমানে পানির চাহিদা কম থাকায় ব্যবহার হচ্ছে ১০-১৫টি।
জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে দায়িত্বরত জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী মাঈন উদ্দিন হাসান বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের কাছ থেকে ২৬টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে ৪১ হাজার ৯৪০ কিউবিক মিটার পানি ব্যবহার করছে। এর মধ্যে উৎপাদনে যাওয়া আটটি ও নির্মাণাধীন ১৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।’
জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের পানি শোধনাগার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হেলাল আহম্মদ বলেন, ‘৭৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য পানি শোধনাগারটি ২০২৬ সালের শেষের দিকে উৎপাদনে যেতে পারে। তবে আমরা যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পানির চাহিদা কম, তাদেরকে জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি বরাদ্দে অগ্রাধিকার দিচ্ছি।’