করোনা মহামারির মধ্যে নির্বাচন ও এনআইডি সেবা কার্যক্রম অব্যাহত : প্রণোদনা চান ইসি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
করোনা মহামারির মধ্যে নির্বাচন ও এনআইডি সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ পর্যন্ত ইসির ১২৫ জনের মতো করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকেই লাইফ সার্পোটে ছিলেন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন অনেকে। এখনো অসুস্থ আছেন অনেকে। নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন কেউ কেউ। । তাদের জন্য নেই কোনো ঝুঁকিভাতা, ক্ষতিপূরণ বা প্রণোদনা। তাই ইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করোনা আক্রান্তদের জন্য আর্থিক প্রণোদনার দাবি জানিয়েছেন।
ইসির মাঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা প্রতিদিন অফিস খোলা রেখে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি ও ভোটার নিবন্ধনের কাজগুলো করছেন। এতে প্রতিদিনই ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটাতে হচ্ছে। এছাড়া প্রশাসনের করোনা সংক্রান্ত কার্যক্রমেও অংশ নিচ্ছেন। ফলে অন্যান্য সংস্থা বা দফতরের লোকবলের মতো তারাও অধিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন। কোনো ধরনের আর্থিক প্রণোদনা না থাকায় হতাশ ইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
কর্মকর্তারা বলছেন, আক্রান্তদের কেউ কমিশন থেকে বা সরকারিভাবে কোনো আর্থিক সহায়তা পাননি। মৃত্যুবরণ করলেও একজনের পরিবারও কোনো সহায়তা পায়নি।
সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আলিফ লায়লা, চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা আতাউর রহমান। জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার এভারকেয়ার হাসপাতালে প্রায় এক মাস ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার ড্রাইভার দুলাল মিয়া করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, আতাউর রহমান, দুলাল মিয়ার পরিবার কোনো আর্থিক সহায়তা পায়নি। তবে আলিফ লায়লার পরিবার কমিশন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজেদের অর্থে গড়া কল্যাণ সমিতি থেকে দুই লাখ টাকা সহায়তা পেয়েছে। এছাড়া কর্মকর্তাদের অ্যাসোসিয়েশন থেকেও কিছু টাকা পেয়েছে। সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইসরাইল হোসেনও কল্যাণ সমিতি থেকে লাইফসাপোর্টে থাকায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পেয়েছেন। কিন্তু সরকারিভাবে বা কমিশন থেকে কোনো সহায়তা পাননি।
নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা বলছেন, কমিশনের কোনো সদস্য সকল নির্বাচন কমিশনার আমৃত্য পূর্ণ চিকিৎসা সহায়তা পেয়ে থাকেন। এটা আইন করে নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা সরকারি তহবিল থেকেই বহন করা হয়। কিন্তু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্বাচনে দায়িত্বরত অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত না হলে কোনো সহায়তার বিধান কোনো আইনে রাখা হয়নি।
এছাড়া নির্বাচন কমিশনের এনআইডি শাখায় কর্মরত ১ হাজার ৩শ’ ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, ১৫০ জন স্মার্টকার্ড পারসোনালাইজেশন সেন্টারের কর্মচারী, ৬৪ জন টেকনিক্যাল এক্সপার্ট, ৩২ জন টেকনিক্যাল সাপোর্ট ও ১০ জন অ্যাসোসিয়েট; প্রধান কার্যালয় থেকে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে এরা কাজ করছেন এনআইডি শাখায়। এদের কেউ রাজস্ব খাতের কর্মচারী নয়। ফলে তাদের কেউ মারা গেলেও কল্যাণ সমিতি থেকেও সহায়তা পাবেন না। এনআইডি কার্যক্রমের মূল চালিকা শক্তি এই কর্মচারীরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও এনআইডি অুনবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) মো. নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) বিষয়টি নিয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। এতে প্রণোদনার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ইসির সচিব মো. আলমগীর আশ্বাস দিয়েছেন, কমিশনের কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে সরকারের যে সহায়তা তহবিল আছে, সেখানে থেকে প্রণোদনার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের আবেদন করতে হবে।
এছাড়া কল্যাণ সমিতির তহবিল বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্যদিকে এনআইডি প্রকল্পে যারা কাজ করছেন, তাদের জন্যও সহায়তার একটি উদ্যোগ নেওয়া হবে।