ডিসিসিআইয়ের ওয়েবিনার : করোনা মোকাবিলায় সরকারের দেওয়া সুবিধা অব্যাহত রাখার তাগিদ
করোনা ভাইরাস সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের দেওয়া নীতিসহায়তা সঠিক ছিল বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদরা। এই সহায়তা বাতিল কিংবা শর্ত কঠোর না করে বরং তা অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করার ওপরও জোর দিয়েছেন তারা। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক অনলাইন সেমিনারে (ওয়েবিনার) তারা এসব কথা বলেন। ‘বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান ও ভবিষ্যত্’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমানের সঞ্চালনায় এতে অর্থনীতিবিদরা অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যত্ উত্তরণ বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, করোনা মোকাবিলায় সরকারের নেতৃত্ব সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে এবং তা যথার্থ ছিল। তবে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে প্রণোদনা প্যাকেজসহ যে ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে, তা অব্যাহত রাখা উচিত। অন্তত চলতি অর্থবছর পর্যন্ত এ সুবিধায় পরিবর্তন আনা ঠিক হবে না। এছাড়াও তিনি অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতির ওপর আরো বেশি হারে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে ডিজিটাল ব্যবস্থার বাস্তবায়নের মাধ্যমে সবাইকে করের আওতায় নিয়ে আসা, তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে আরো সহায়তা দেওয়া, অবকাঠামো উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া, সবুজ অর্থনীতি ও টেকসই উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কার্যক্রমে বিনিয়োগ বাড়ানো, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে আরো বেশি হারে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বিনিয়োগ কেন প্রত্যাশিত মাত্রায় বাড়ানো যাচ্ছে না, তার কারণ খুঁজে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, করোনার সময় আমাদের বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে। কিন্তু ভারত এমনকি পাকিস্তানেও বেড়েছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও নীতি সহায়তা দেওয়ার পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ে চাহিদা বাড়ানো, দারিদ্র্য বিমোচন প্রক্রিয়ায় নজর দেওয়া এবং রাজস্ব আদায়ে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন। জিডিপিতে রাজস্বের অবদান না বেড়ে উলটো কমে যাওয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এক সময় জিডিপিতে রাজস্বের অবদান ছিল ১১ শতাংশ, এখন তা ৭ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে গেছে। এছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের (এমএসএমই) উদ্যোক্তাদের অর্থায়নের লক্ষ্যে কৃষি ব্যাংকের মতো কোনো বিশেষায়িত ব্যাংককে অন্তর্ভুক্ত করা এবং চামড়া শিল্পের উন্নয়নে সাভারের ট্যানারির কার্যক্রম দেখভালের লক্ষ্যে বিসিককে বাদ দিয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোনো প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
ড. মসিউর রহমান বলেন, করোনা পরিস্থিতি সরকার সফলভাবে মোকাবিলা করেছে। অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে অগ্রগতির বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রবাসীরা দেশে ফেরত আসলে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে সচেতন থাকার ওপর গুরুত্ব দেন।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, করোনা মহামারির সময় আমাদের স্বাস্থ্য খাতের দৈন্যদশা পরিলক্ষিত হয়েছে। এ অবস্থার উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়ানো এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে গুরুত্ব দেন। পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. এম মাশরুর রিয়াজ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নীতিমালাকে যুযোপযোগী করার পরামর্শ দেন।