এফবিসিসিআই’এর চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানববন্ধন
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) থেকে জোরপূর্বক চাকুরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ তাদেরকে চাকুরিতে পূনর্বহাল (জ্যেষ্ঠতা ও পদোন্নতিসহ) এবং এফবিসিসিআইয়ের সার্ভিস রুলস অনুযায়ী প্রাপ্য আর্থিক পাওনাদি প্রদানের দাবিতে শনিবার (১৭ আগস্ট) সকালে মতিঝিলস্থ এফবিসিসিআই ভবনের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।
মানববন্ধন থেকে তারা তাদেরকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে চাকুরিতে পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়, যা সংগঠনের মহাসচিব গ্রহন করেন।
চাকুরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, এফবিসিসিআই দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন হিসেবে শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান, উদ্যোক্তা উন্নয়নসহ দেশের সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর এসব কাজে সার্বিকভাবে সহযোগিতার জন্য এফবিসিসিআইয়ে একটি দক্ষ সচিবালয় দীর্ঘসময় ধরে কাজ করে আসছে। গত শতাব্দীর ৯০ এর দশকে এবং বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে এফবিসিসিআইয়ে নিয়োগকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ তাদের সর্বোচ্চ দক্ষতা ও মেধা দিয়ে এফবিসিসিআইয়ের সক্ষমতা উন্নয়নে কাজ করে আসছিল।
তারা জানান, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদ দুই বছরের জন্য নির্বাচিত হয়ে থাকে। ২০১৯-২০২১ মেয়াদকালের পরিচালনা পর্ষদে প্রেসিডেন্ট হিসাবে শেখ ফজলে ফাহিম দায়িত্ব পালন করেন। ২০২০ সালে দেশে যখন করোনা মহামারির কারনে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সার্বিকভাবে জনজীবনে মারাত্মক সংকট নেমে আসে, সেই দূর্যোগময় মুহুর্তে এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম দলীয়করণের নামে ৬২জন কর্মকর্তা-কর্মচারিকে এফবিসিসিআইয়ের চাকুরি থেকে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করেন। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের সার্ভিস রুলস-১৯৯০ অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য সার্ভিস বেনিফিট থেকে বেআইনি ও নির্দয়ভাবে বঞ্চিত করেন। এ অন্যায় পদক্ষেপ এর বিরুদ্ধে কোনরকম আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার বিষয়েও তিনি নানাভাবে হুমকি প্রদান করেন।
কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ তাদের জীবনের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে মতিঝিল থানায় কেবল জিডি দায়ের করতে পেরেছিলেন।
চাকুরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, একটি প্রতিষ্ঠানে জীবনের দীর্ঘ সময় সর্বোচ্চ এফোর্ট দেয়ার পর অবহেলিত ও অসম্মানিত হওয়ার মাধ্যমে চাকুরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারিবৃন্দ পারিবারিক ও সামাজিকভাবে এবং মানসিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হন। অবৈধ ও বেআইনিভাবে চাকুরিচ্যুতি এবং পাওনা বেতন-ভাতাদি সম্পূর্ণরূপে না পাওয়ায় আর্থিক সংকট ও মানসিক যন্ত্রণায় ইতিমধ্যে এফবিসিসিআইয়ের ৩ জন অফিসিয়াল এ.এফ. আইনুল হুদা (কর্মকর্তা), মোঃ ফজলুল হক (ড্রাইভার) এবং আব্দুল বারেক (সিকিউরিটি গার্ড) হার্ট এ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেছেন। অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারি পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
চাকুরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ বিভিন্ন সময়ে তাদের সমস্যা নিরসনের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের সচিব ও মহাপরিচালক (তৎকালীন পরিচালক), বাণিজ্য সংগঠনসমূহ বরাবরে আবেদন করেছেন। ২০২১ সালের ১২ জুন এফবিসিসিআই এর প্রেসিডেন্ট বরাবর চাকুরিতে তাদেরকে পুনর্বহাল ও সমস্ত বকেয়া পাওনাদি পরিশোধের জন্য আবেদন করেছেন, যার অনুলিপি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ও মহাপরিচালক (তৎকালীন পরিচালক) বরাবর প্রদান করা হয়েছে। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি এবং ৬ মার্চ আইনজীবীর মাধ্যমে এফবিসিসিআই কর্তৃপক্ষকে ডিমান্ড নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু চাকুরিচ্যুতদের চাকুরিতে পুনর্বহাল ও সার্ভিস বেনিফিটসহ বেতনভাতাদি পরিশোধের কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করা হয় নাই।
এ অবস্থায়, এফবিসিসিআইয়ের চাকুরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ তাদের উপর অন্যায় ও অমানবিক পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয় এবং আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে তাদেরকে স্ব স্ব পদে (জ্যেষ্ঠতা ও পদোন্নতিসহ) চাকুরিতে পুনর্বহালের দাবি জানানো হয়। একইসাথে তারা এফবিসিসিআই সার্ভিস রুলস-১৯৯০ অনুযায়ী প্রাপ্য সার্ভিস বেনিফিট ও অন্যান্য বকেয়া পাওনাদি পরিশোধের জোর দাবি জানানো হয়।