বিনিয়োগকারীদের পছন্দের শীর্ষে ইস্টার্ন হাউজিং
গত সপ্তাহজুড়ে দেশের শেয়ারবাজার মন্দার মধ্য দিয়ে পার করলেও দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েছে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড। এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের কাছে কোম্পানিটির শেয়ার পছন্দের শীর্ষে উঠে আসে। এতে সপ্তাহজুড়েই কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে। এতে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার শীর্ষ স্থানটি দখল করেছে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার।
অবশ্য শুধু গত সপ্তাহ নয়, প্রায় আড়াই মাস ধরে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ছে। এতে আড়াই মাসেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। কোনো বিশেষ চক্র কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ার পেছনে ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা।
কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে ডিএসই থেকে একাধিকবার বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে সতর্ক বার্তা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে সেই সতর্ক বার্তা কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ার প্রবণতা থামাতে পারেনি। বরং ডিএসইর সতর্ক বার্তা প্রকাশের পর দাম বাড়ার পালে আরও হাওয়া লেগেছে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ২৮ জুলাই ইস্টার্ন হাউজিংয়ের শেয়ার দাম ছিলো ৫২ টাকা। এরপর দাম বাড়তে বাড়তে ৮০ টাকায় উঠলে ডিএসইতে থেকে ২৯ আগস্ট বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে সতর্কা বার্তা প্রকাশ করা হয়।
ডিএসইর ওই সতর্ক বার্তায় বলা হয়, ইস্টার্ন হাউজিংয়ের শেয়ার দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে কোম্পানিটিকে নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশের উত্তরে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সম্প্রতি শেয়ারের যে অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে তার পিছনে কোন অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদশীল তথ্য নেই।
এরপরও কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়তে থাকে। এর মধ্যেই সম্প্রতি কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এই লভ্যাংশ ঘোষণার পর শেয়ারের দাম বাড়ার প্রবণতা আরও বেড়েছে। ইতোমধ্যে প্রতিটি শেয়ারের দাম ১১৬ টাকা ৬০ পয়সায় উঠেছে।
এরমধ্যে গত সপ্তাহেই দাম বেড়েছে ২৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। টাকার অঙ্কে বেড়েছে ২৩ টাকা ৫০ পয়সা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ১১৬ টাকা ৬০ পয়সা, যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৯৩ টাকা ১০ পয়সা।
শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি ১৯৯৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের জন্য কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১৫ শতাংশ নগদ দেয়। তার আগে ২০২০ সালেও কোম্পানিটি একই হারে লভ্যাংশ দেয়। তবে ২০১৯ সালে ২০ শতাংশ নগদ এবং ২০১৮ সালে ২৫ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিলো কোম্পানিটি।
৯৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের এই কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা ৯ কোটি ৩৩ লাখ ৪৫ হাজার ১৫৩টি। এর মধ্যে ৫০ দশমিক ৩৬ শতাংশ আছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ১৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ শেয়ার আছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ২৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং বিদেশিদের কাছে আছে ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
এদিকে শেয়ারের দাম বাড়ার পাশাপাশি কোম্পানিটির শেয়ার বড় অঙ্কে লেনদেন হয়েছে। গত সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৮৩ কোটি ৭৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। আর প্রতি কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৫৬ কোটি ৭৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা।
গত সপ্তাহে দাম বাড়ার শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার প্রসেসিংয়ের শেয়ার দাম বেড়েছে ২৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। ১৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ দাম বাড়ার মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেম।
এছাড়া দাম বাড়ার শীর্ষ দশে স্থান করে নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এডিএন টেলিকমের ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশনের ১৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ, বিডিকম অনলাইনের ১০ দশমিক ৬৫ শতাংশ, শাহিনপুকুর সিরামিকের ১০ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, ইয়াকিন পলিমারের ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ, কে অ্যান্ড কিউ’র ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ এবং অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ দাম বেড়েছে।