South east bank ad

বাড়ছে বাংলাদেশি ডেনিমের চাহিদা, আসছে নতুন বিনিয়োগ

 প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   আমদানী/রপ্তানী

বাড়ছে বাংলাদেশি ডেনিমের চাহিদা, আসছে নতুন বিনিয়োগ

পশ্চিমের দেশগুলোর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোয় বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ডেনিমের চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়ছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সাড়ে ৬৪ বিলিয়ন ডলারের ডেনিমের বিশ্ববাজারে আধিপত্য বিস্তারে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। বর্তমানে স্থানীয় রফতানিকারকরা বিশ্বব্যাপী প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলারের ডেনিম পণ্য সরবরাহ করছেন।

তথ্যে দেখা যায়, ২০২৬ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ডেনিমের বাজার ৭৬ দশমিক এক বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি বছরে চার দশমিক আট শতাংশ হারে বাড়বে। এজন্য বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডেনিম খাতে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। দেশে এরইমধ্যে ৪২টি আধুনিক কারখানা আছে। এ থেকে প্রতি বছর ৯০ কোটি মিটারের বেশি ডেনিম কাপড় উৎপাদন সম্ভব বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

প্রায় এক দশক আগেও ১২টি কারখানায় ডেনিম উৎপাদনে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল আট হাজার কোটি টাকা। তবে গত কয়েক বছরে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ডেনিম সরবরাহে বাংলাদেশ প্রতিবেশী চীনকে ছাড়িয়ে গেছে।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) তথ্য অনুসারে, আগামী পাঁচ বছরে ৭০ কোটি ডলারের ডেনিম রফতানির লক্ষ্য নিয়ে হবিগঞ্জে দুটি কারখানার জন্য দেড় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ভারত, জাপান, চীন, লাতিন আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্য বাংলাদেশি ডেনিমের চাহিদা অব্যাহতভাবে বাড়ছে।

তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশে বর্তমানে ৪০টির বেশি ডেনিম মিল রয়েছে। দেশের বার্ষিক ডেনিম রফতানির পরিমাণ প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত কয়েক বছরে ইউএস-ইইউতে বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় ডেনিম রফতানিকারক দেশ হিসেবে অবস্থান তৈরি করেছে।

সাম্প্রতিক ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে দুই দিনের ডেনিম এক্সপো। এতে ভারত, পাকিস্তান, চীন, তুরস্ক, স্পেন এবং ইতালিসহ সাতটি দেশের ৪৪টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য প্রদর্শনের জন্য উপস্থিত হয়।

বাংলাদেশি ডেনিম রফতানিকারক, ডেনিম ফ্যাব্রিক মিলাররা এবং তাদের ক্রেতারা এই বছর ব্যবসায়িক বৃদ্ধির ব্যাপারে খুবই আশাবাদী। কারণ তারা তাদের প্রধান রফতানি গন্তব্যে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য আরো বেশি অর্ডার পাচ্ছে।

প্যাসিফিক জিন্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৈয়দ এম তানভীর বলেন, আমাদের পূর্ণ ক্ষমতায় উৎপাদন চালানোর জন্য তাদের কাছে প্রচুর অর্ডার রয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ১.৫ লাখ পিস জিন্স তাদের কারখানায় উৎপাদন করা হয়।

তিনি বলেন, কাজের অর্ডার বৃদ্ধি পাওয়াতে রফতানিতে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের আশা করছেন। বর্তমানে আগামী বছরের বসন্ত এবং গ্রীষ্মের অর্ডারগুলোর জন্য ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো সংখ্যক অর্ডার দেখতে পাচ্ছেন বলে তিনি জানান।

তিনি উল্লেখ করেন, গত বছর তাদের কোম্পানি ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি করেছে। আশা করা যাচ্ছে, চলতি বছর শেষে দেশের ডেনিম পণ্য রফতানিতে ৩ থেকে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে।

স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম জানিয়েছেন, তাদের কারখানাগুলো সামর্থ্যের বাইরে কাজ করছে। এবং অতিরিক্ত অর্ডার ম্যানেজ করার জন্য গ্রুপটি ইতিমধ্যে একটি নতুন ইউনিট চালু করেছে।

এনভয় টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ উল্লেখ করেছেন, তাদের টেক্সটাইল মিলটি গত কয়েক মাস ধরে ১০০ শতাংশ ক্ষমতায় কাজ করছে, আগামী কয়েক মাস ধরে পূর্ণ উৎপাদন নিশ্চিত করার অর্ডার তাদের হাতে রয়েছে।

তিনি বলেন, বেশিরভাগ ক্রেতাই তাদের অর্ডার বাড়াচ্ছেন। এতে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে এনভয় টেক্সটাইল এ বছর আরো ভালো পারফর্ম করতে প্রস্তুত। আরো মূল্য যোগ করার জন্য, কোম্পানি একটি নতুন পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্ল্যান্ট ইনস্টল করার পরিকল্পনা করছে। কারণ, অনেক ব্র্যান্ড ২০৩০ সালের মধ্যে পুনর্ব্যবহৃত সুতার ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও অ্যাম্বার ডেনিম মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত আজিজ রাসেল বলেন, তার কারখানায় প্রতি মাসে প্রায় ৫৫ মিলিয়ন ইয়ার্ড উৎপাদন হচ্ছে।

তিনি উল্লেখ করেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ টেক্সটাইল শিল্পের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।

তিনি আরো বলেন, ডেনিম মিল প্রতি বছর প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধির সম্মুখীন হয়েছে। শ্রম সমস্যা নিয়ে কিছু আন্দোলন সত্ত্বেও তিনি এই বছরও একই রকম বৃদ্ধির আশা করছেন।

তিনি বলেন, ব্যবসা পরিচালনা এবং প্রবৃদ্ধির জন্য শিল্প অঞ্চলে স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

“এই পরিস্থিতি অতীতের থেকে ভিন্ন, কারণ ছাত্র আন্দোলনের ফলে দেশটি একটি নতুন যুগে প্রবেশ করছে। আশা করি, আমাদের ভবিষ্যত আরো ভালো হবে এবং আমরা এই সেক্টরে একটি আশাব্যঞ্জক সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি” যোগ করেন তিনি।

আন্তর্জাতিক পোশাক বিক্রেতা এইচঅ্যান্ডএম এর বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ইথিওপিয়ার আঞ্চলিক প্রধান জিয়াউর রহমান বলেন, “উৎপাদন ক্ষমতা এবং সামর্থ্য বিবেচনায় আমরা বাংলাদেশে ব্যবসার জন্য ভালো সুযোগ দেখতে পাচ্ছি। বাংলাদেশের অবস্থান প্রতিস্থাপন করার ক্ষমতা অন্য কোন দেশের নেই। ”

ডেনিম পণ্যের জন্য তিনটি ক্ষেত্রে শ্রম সম্পর্ক, মধ্য-স্তরের ব্যবস্থাপনা এবং প্রযুক্তি অভিযোজন উন্নতির পরামর্শ দেন।

টিম গ্রুপের পরিচালক মো. আলী রসুল (তুহিন) বলেন, তৈরি পোশাকের বিদেশি ক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলো দেশের শিল্পকারখানায় সাম্প্রতিক শ্রমিক অসন্তোষের পাশাপাশি রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ তারা সময়মতো পণ্য হাতে চায়।

তার মতে, যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে তবে ব্যবসা বাড়বে। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অন্য দেশে চলে যাওয়া পোশাকের কার্যাদেশ আবার ফিরতে শুরু করবে।

ডেনিম এক্সপোর আয়োজক মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, আন্তর্জাতিক ক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর কাছে ভালো দাম চাই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরো উন্নতি করতে হবে, যাতে বাংলাদেশের প্রতি ক্রেতাদের আস্থা বজায় থাকে।

BBS cable ad