প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান, মেলায় মিলবে চাকরি
বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তি বা প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে রাজধানীতে চাকরি মেলার আয়োজন করতে যাচ্ছে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। ২০১৫ সাল থেকে এই মেলার আয়োজন করে আসছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। মেলায় সহযোগিতায় আছে বিসিসির ‘তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে এনডিডিসহ সব ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ক্ষমতায়ন’ প্রকল্প এবং সেন্টার ফর সার্ভিসেস অ্যান্ড ইনফরমেশন অন ডিজঅ্যাবিলিটি (সিএসআইডি) নামের প্রতিষ্ঠান। মেলায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুক চাকরিপ্রার্থীদের ইতিমধ্যে জীবনবৃত্তান্ত জমা নেওয়া শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) অ্যানালিস্ট (ফরেনসিক) মো. গোলাম রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, বিসিসির মাধ্যমে ২০১১ সাল থেকে প্রতিবন্ধীদের জন্য বিনা মূল্যে আইসিটি প্রশিক্ষণ চালু করা হয়। পরে আইসিটি প্রশিক্ষণ নেওয়া প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থানের জন্য চাকরিপ্রার্থী ও চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে ২০১৫ সাল থেকে চাকরি মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত চাকরি মেলার মাধ্যমে প্রায় সাত শতাধিক আইসিটিতে দক্ষ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মো. গোলাম রব্বানী বলেন, এবার মেলার মাধ্যমে ৩০০ জনকে চাকরি দেওয়া সম্ভব হবে বলে আমরা আশা করছি। এর মধ্যে মেলার সময়ই ১০০ জনকে চাকরি দেওয়া হবে। অন্যদের পর্যায়ক্রমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।
বিসিসি থেকে জানানো হয়, এবার মেলা অনলাইন ও অফলাইন দুই মাধ্যমেই হবে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর অফিস ভবনে মেলা আয়োজন করা হবে। আগ্রহী চাকরিপ্রার্থীরা সিভি দিতে পারবেন এই লিংকের (https://emporia.bcc.gov.bd/jobportal/job-fairus98) মাধ্যমে। ইতোমধ্যে ৪৪৮টি সিভি জমা পড়েছে।
দেশে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত প্রতিবন্ধীদের চাকরির ব্যবস্থা করে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সদস্যভুক্ত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং বা বাক্য, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ও ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।
প্রতিবছর এ মেলায় প্রায় পাঁচ শতাধিক চাকরিপ্রার্থী প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সারা দেশ থেকে ঢাকায় এসে অংশগ্রহণ করেন। মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কম্পিউটার দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের ওপর ভিত্তি করে চাকরিপ্রার্থীদের মেলা থেকেই চাকরি দেওয়া হয়। কিছু চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান সিভি নিয়ে রাখে, পর্যায়ক্রমে চাকরি দেয়।
বিসিসি আরও জানায়, এবার মেলায় ৪০টির মতো চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করবে। মেলা থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার তরুণ-তরুণীরা নিজেদের যোগ্যতা ও চাহিদামাফিক চাকরি খুঁজে নেওয়ার সুযোগ পাবেন।
মেলার মাধ্যমে চাকরি পেয়ে দুই বছর ধরে জেনওয়েব টু লিমিটেড কোম্পানিতে সফটওয়্যার বেটা টেস্টার হিসেবে কর্মরত আছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মো. আরিফ হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পাস করার পর স্থায়ী চাকরি পাচ্ছিলাম না। চাকরি মেলার খবর পেয়ে ঢাকায় এসে সব স্টলে সিভি জমা দেই। সিভি দেওয়ার ১০-১৫ দিন পর জেনওয়েবটু কোম্পানি থেকে আমাকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। মৌখিক পরীক্ষায় পাস করার পার তারা আমাকে নিয়োগপত্র দেয়। এখন এ কোম্পানিতে সফলতার সঙ্গে কাজ করছি।’
শুধু পুরুষ নন, অনেক নারী প্রার্থীও চাকরি মেলার মাধ্যমে চাকরি পেয়েছেন। এর মধ্যে একজন শিল্পী আক্তার। তিনি দুই বছর ধরে ‘দ্য নেট হেডস’কল সেন্টারে চাকরি করছেন। শিল্পী আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০২০ সালের মেলায় সিভি দেওয়ার কয়েক দিন পর আমাকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য কল সেন্টার থেকে ফোন দেওয়া হয়। এখানে আমার সব সহকর্মী আন্তরিক। অফিস থেকে যাতায়াতের ব্যবস্থাও করেছে।’