আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কামালনগরে সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করার অভিযোগ
বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কামালনগর (বাইপাস) গ্রামের বিবাদমান সম্পত্তিতে বালি ফেলে জোরপূর্বক দখল করার অভিযোগ পাওয়া গেছে ক্যাপ্টেন আহসান হাবিব পটলের বিরুদ্ধে।
আজ (১ মার্চ ) মঙ্গলবার সকালে পটল বিরোধীয় সম্পত্তিতে বালি ফেলে ওই সম্পত্তি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করতে উদ্যত হয়। ওই ঘটনার পর পুলিশকে জানিয়েও প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, ক্রয়সূত্রে আহসান হাবিব পটল পলাশপোল মৌজা ১০৮৫ খতিয়ানের ৮ দাগে ১ একর ৩৮ শতক জমি ক্রয় করলেও অন্যান্য দাগে দাবী না করে শুধুমাত্র সমুদয় জমি ৩৭২৯ দাগে দাবী করেন। বিষয়টি নিয়ে পৈত্রিকসূত্রে প্রাপ্ত ওই সম্পত্তির দাবিদার মারুফ আহমেদ খান শামীম এর সাথে আহসান হাবিব পটলের বিবাদ দেখা দেয়।
অতঃপর সম্পত্তি দখলে রাখতে আহসান হাবিব পটল সদর সহকারী জজ আদালতে একটি দেওয়ানী মামলা দায়ের করেন। এবং আদালতের বিচারক মামলাটি শুনানীঅন্তে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন। সম্প্রতি পৈত্রিকসূত্রে প্রাপ্ত ওই সম্পত্তির দাবিদার মারুফ আহমেদ খান শামীম সাতক্ষীরা জেলা জজ আদালতে ওই অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আদেশের কার্যকারিতা স্থগিতের জন্য নালিশী সম্পত্তি নিয়ে একটি আপিল মোকদ্দমা করলে গত ২৬ জানুয়ারি ২০২২ ইংরেজি তারিখে আদালতের বিচারক ওই অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করেন।
আরও জানা গেছে, আদালতের আদেশ অমান্য করে রবিবার সকালে ওই বিরোধীয় সম্পত্তিতে আহসান হাবিব পটল বালি ফেলে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করতে উদ্যত হয়। ওই ঘটনার পর সম্পত্তির দাবিদার মারুফ আহমেদ খান শামীম সাতক্ষীরা থানার পুলিশকে জানালে সোমবার রাতে পুলিশ উভয়পক্ষকে নিয়ে শান্তিপূর্ণ মিমাংসার চেষ্টা করেন।
অতঃপর আহসান হাবিব পটল ওই সম্পত্তিতে কোনো প্রকার স্থাপনা নির্মাণ, আকার আকৃতি পরিবর্তন না করা ও মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোন কিছু করবে না মর্মে মুছলিকা প্রদান করেন। অথচ সেই মুছলিকা ভঙ্গ করে পটল মঙ্গলবার সকালে আবারও বিরোধীয় সম্পত্তিতে বালি ফেলে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করতে উদ্যত হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পলাশপোল মৌজা ১০৮৫ খতিয়ানের ৬ একর ২ শতক জমির মধ্য মৃত শফি আহম্মেদ খানের ওয়ারেশগণের কাছ থেকে ৮ দাগে ৯০১০ কবলা দলিলে ১ একর ৩৮ শতক জমি ক্রয় করেন শহরের ব্যবসায়ি আবুল কালাম বাবলার স্ত্রী মিসেস সালেহা কালাম লিলি। মৃত শফি আহম্মেদ খান এর কোন ছেলে সন্তান না থাকায় ওই জমির মধ্যে ওই ৮ দাগে ৩৩ শতক জমির ওয়ারেশ, ভ্রাদারী, খরিদ সুত্রে মালিক হন তার ভাইপো মৃত সিদ্দিক আহমেদ খানের ছেলে মারুফ আহম্মেদ খান শামীম।
কিন্তু এর মধ্যে ৩৭২৯ দাগে ১ একর ৩৮ শতক জমি পরিপূর্ণভাবে দখল করে ভোগ দখল করছে। তবে এই দাগে মিসেস সালেহা কালাম লিলি পাবেন মাত্র ২৪ শতক জমি। বিষয়টি নিয়ে বিবাদ দেখা দিলে মিসেস সালেহা কালাম লিলি ওই জমির আপত্তি মিমাংসার জন্য সাতক্ষীরা সেটেলমেন্ট অফিসে আপত্তি মামলা করেন যার কেস নং ৫৯৬ সেটেলমেন্ট অফিস দুই পক্ষ নিয়ে একাধিক বার যথাযতভাবে শুনানী করেন।
পরবর্তীতে মিসেস সালেহা কালাম লিলি নিজের ভূল বুঝতে পেরে ২০১২ সালের ১৯ নভেম্বর ওই দাগে দাবি প্রত্যহার করলে তৎকার্লিন সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা মামলাটি নিষ্পত্তি করেন এবং মারুফ আহম্মেদ খান শামীম ও আরিফ আহম্মেদ খান এর নামে ওই দাগের জমি রেকর্ড হয়।
এরপর সালেহা কালাম লিলি তঞ্চকতা করে ২০১৫ সালে ২০ অক্টোবর ৮২০১ নং কবলা দলিলে আহসান হাবীব পটল এর কাছে ১ একর ৩৮ শতক জমি বিক্রয় করেন। তবে ওই দলিলে কোন দাগে দখল তাহা উল্লেখ নেই। এরপর আহসান হাবীব ৮ দাগে ১ একর ৩৮ শতক জমি দাবী না করে শুধুমাত্র সমুদয় জমি ৩৭২৯ দাগে দাবী করেন।
বিষয়টি নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস, খুলনাতে আবারও একটি আপত্তি মামলা দাখিল করেন সালেহা কালাম লিলি ও আহসান হাবীব পটল। ওই মামলায় ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ওই আপত্তি মামলায় শোনানির দিন ধার্য করে মারুফ আহম্মেদ খান শামীম ও আরিফ আহম্মেদ খান নামে জোনাল সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা জমাদ্দার মাহাবুবার রহমান নোটিশ করেন। তবে ওই নোটিশে কোন সিল মোহর বা স্বাক্ষর ছিলনা।
মারুফ আহম্মেদ খান শামীম দাবি করেন, ওই সম্পত্তির তার পৈত্রিক আর কিছু তিনি শরীকের নিকট হতে কিনেছেন। বিএস রেকর্ড ও খাজনা দাখিলাও রয়েছে তার নামে। জোর করে তিনি কারো সম্পত্তি দখল করেননি।
ওই সম্পত্তি আহসান হাবিব পটল জোর করে দখলে নিতে বিভিন্ন পায়তারা করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হলে তাকে (পটল) বিবাদী করে জেলা জজ আদালতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আদেশের কার্যকারিতা স্থগিতের জন্য একটি মামলা দায়ের করেন মারুফ আহম্মেদ খান শামীম। গত ২৬ জানুয়ারি ২০২২ ইংরেজি তারিখে ওই মামলাটি শুনানিঅন্তে বিচারক অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করেন।
অথচ তা ভঙ্গ করে মঙ্গলবার সকালে ওই সম্পত্তিতে আহসান হাবিব পটল বালি ফেলে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করতে উদ্যত হয়। ওই ঘটনার পর সাতক্ষীরা থানার পুলিশকে জানিয়েও কোন সুরাহ হয়নি। বিষয়টি থেকে প্রতিকার পেতে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।