ওএমএসের চাহিদা বাড়ছেই
বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষের জন্য কম দামে ওএমএসের (ওপেন মার্কেট সেল) চাল ও আটা বিক্রি করছে সরকার। বাজারমূল্যের প্রায় অর্ধেক দামে চাল-আটা কিনতে ওএমএস দোকান ও ট্রাকের সামনে প্রতিদিনই লম্বা হচ্ছে মানুষের সারি। এ অবস্থায় উপজেলা পর্যায়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কর্মসূচির ভর্তুকি ১৯ শতাংশ বা ৮০০ কোটি টাকা বাড়িয়েছে সরকার।
সম্প্রতি এ কর্মসূচির কার্যক্রম মহানগর ও জেলা শহর থেকে বাড়িয়ে সব পৌরসভা এলাকায় সম্প্রসারণ করেছে খাদ্য অধিদফতর। চাল-আটার কালোবাজারি রোধে একই ব্যক্তি যাতে বারবার লাইনে দাঁড়াতে না পারে সে জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা চেয়েছে রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানটি।
খাদ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) আবদুল্লাহ আল মামুন গতকাল বলেন, ‘ওএমএসের চাহিদা দিন দিনই বাড়ছে। ওএমএস কেন্দ্র ও ট্রাক সেলের সামনে মানুষের ভিড় বাড়ছে, লম্বা হচ্ছে ক্রেতার লাইন। এরই মধ্যে আমরা এ কর্মসূচির কার্যক্রম মহানগর ও জেলা শহরের পাশাপাশি সব পৌরসভায় সম্প্রসারণ করেছি। শ্রমঘন এলাকায়ও কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এজন্য কর্মসূচির ভর্তুকি ৮০০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে।’
জানা গেছে, উপজেলা পর্যায়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ওএমএসে ভর্তুকি ৮০০ কোটি টাকা বা ১৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। ১৮ জানুয়ারি নিয়মিত বাজেট বরাদ্দের বাইরে অতিরিক্ত ৩ লাখ টন চাল ও ১ লাখ টন গম অনুমোদন করেছে অর্থ বিভাগ। আগামী জুন পর্যন্ত দরিদ্র মানুষের মধ্যে এ চাল-আটা বিক্রি করা হবে। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এ অতিরিক্ত খাদ্য বরাদ্দ চেয়ে দুই সপ্তাহ আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। বর্তমানে ওএমএসের প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর জন্য মোট ভর্তুকি ৪ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা, যা চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪ হাজার কোটি টাকা। এ অর্থ মূল বাজেট বরাদ্দ থেকে ১৯ শতাংশ বেশি।
কর্মসূচির চাল-আটা কালোবাজারি রোধে কঠোর মনিটরিং করছে খাদ্য অধিদফতর। এরই মধ্যে পাঁচটি পরিদর্শক দল গঠন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে খাদ্য অধিদফতরের সরবরাহ, বণ্টন ও বিপণন বিভাগের উপপরিচালক আফিফ-আল-মাহমুদ ভূঁঞা বলেন, ‘ওএমএসের চাল-আটার দাম বাজারের প্রায় অর্ধেক। ফলে অনেকেই চাল-আটা কালোবাজারি করছে। খাদ্য অধিদফতরের পরিদর্শনেও এর প্রমাণ মিলেছে। এজন্য অনেকের ডিলারশিপ স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া দেখা গেছে, একই ব্যক্তি নির্দিষ্ট চাল-আটা নেওয়ার পর আবারও লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনছেন। এতে অনেকে চাল-আটা না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন। এটা বন্ধ করতে তদারক কর্মকর্তাদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে পাড়ায়/মহল্লায় পথসভার মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে খাদ্য অধিদফতর।’
দীর্ঘ হচ্ছে ক্রেতার লাইন:
বাজারে মোটা চালের কেজি ৫০ টাকা, আর আটা পাওয়া যায় ৩২ থেকে ৩৬ টাকায়। সে চাল-আটা ওএমএসে ৩০ ও ১৮ টাকায় কেনা যাচ্ছে। ফলে ওএমএসের বিক্রয় কেন্দ্রে বাড়ছে মানুষের দীর্ঘ লাইন। তবে বরাদ্দ কম থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়েও অনেক সময় মিলছে না চাল। গতকাল রাজধানীর রামপুরা, সিপাহীবাগ, খিলগাঁওয়ের কয়েকটি ওএমএস কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। পূর্ব রামপুরা লোহারগেট ওএমএসের ডিলার হাজী আনোয়ার আলীর কেন্দ্রের সামনে কথা হয় চাল কিনতে আসা ওই এলাকার গার্মেন্ট কর্মী রফিকুলে সঙ্গে। তিনি জানান, সকাল ৯টা থেকে কেন্দ্রর সামনে দীর্ঘ লাইনে ২ ঘণ্টা অপেক্ষার পর ৫ কেজি চাল কিনেছেন।
তাতে তার ১০০ টাকা সাশ্রয় হয়েছে। ওএমএসের চাল তিনি প্রতি সপ্তাহে কেনেন। কখনো কখনো বরাদ্দ কম থাকায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও চাল পান না। তখন বাধ্য হয়ে বাজার থেকে চড়া দামে কিনে খেতে হয়। রমিসা বেগম নামে একজন বয়স্ক নারী বলেন, ‘এখান থেকে চাল কিনতে পারলে ১০০ টাকা কম দাম পড়ে, আটায় ৬০ টাকা। আমরা গরিব মানুষ। এটা আমাদের জন্য অনেক।’ রামপুরা বৌবাজার এলাকার ডিলার হুমায়ুন তালুকদার বলেন, ‘আগে মানুষ এসব এত বেশি কিনত না।
কিন্তু করোনা শুরুর পর থেকে বিক্রি বেড়েছে। সে তুলনায় বরাদ্দ না পাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। অনেকে এসে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন।’ ডিলাররা জানান, বর্তমানে একজন ডিলার সর্বোচ্চ দেড় টন চাল ও ১ টন আটা বরাদ্দ পান, যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। ক্রেতারা আরও জানান, বাজারে চাল ও আটার দামে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। সে কারণে স্বল্প দামে চাল-আটা কিনতে ওএমএসের দিকে ছুটছেন তারা। এতে এখন অনেক গুণে বেড়েছে ওএমএসের চাল-আটা বিক্রি। কেউ কেউ ওএমএসের চাল ও আটা বিক্রি শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই নির্ধারিত স্থানে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন।