ঝালকাঠির ডাব তৃষ্ণা মিটিয়ে সারা দেশে সরবরাহ হচ্ছে
মোঃ রাজু খান (ঝালকাঠি):
গ্রীষ্মকাল, খাঁ খাঁ রোদ্দুরে যেন কাঠও ফেটে যায়। সকল প্রাণিকূলই অস্থির হয়ে পড়ে তীব্র গরমে। শরীর ঘেমে দুর্বল এবং তৃষ্ণার্ত হওয়ায় দেখা দেয় পানি শুন্যতা ও কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ। এ রোগ থেকে উপায়ের জন্য কেমিকেলমুক্ত চিকিৎসার জন্য সবারই প্রিয় ডাবের পানি। এসময় ১ গ্লাস ডাবের পানি পান করলে পানি শুন্যতা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর করে শরীরকে শীতল করে। রমজান মাসে মুসলমানদের সারাদিন সিয়াম সাধনার পরে ইফতারিতে ১গ্লাস ডাবের পানি তীব্র গরমের অবসাদ-ক্লান্তি দূর করে শরীরে যোগায় শীতল শান্তির পরশ।
নারিকেল ১২ মাসই ফলন হয়। তবে গ্রীষ্ম কালে এর ফলনের পরিমাণ বেশি হওয়ায় বাজারে সরবরাহও বেশি দেখা যায়। সৃষ্টিকর্তা প্রতি মৌসূমীই তার সৃষ্টির চাহিদা অনুযায়ী ফল সব্জি দিয়ে থাকেন। যেমন শীতকালে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় মানবদেহের লাবন্যতা কমে যায়। এ জন্য প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসব্জি দিয়ে থাকেন। ঋতুরাজ বসন্তের শুরুর সাথে প্রকৃতি ফুলে ফুলে এবং নবপল্লবে ভরে যায়। গ্রীষ্মকালে যেমন রোদের তাপ হয় প্রখর মানুষ তার স্ব স্ব কর্মের ব্যস্ততায় শরীর ঘেমে দুর্বল হয়ে পড়ে। তেমন সেই ক্লান্তি এবং অবসাদ দূর করতে সময় অনুযায়ী ডাবের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
বিভিন্ন সময় চিকিৎসকদেরও পরামর্শ থাকে, জ্বর অথবা প্রাথমিক পর্যায়ের কোন অসুখ হলে মৌসূমী ফল খেতে। তাহলেই অসুখ কমে যায়। তীব্র গরমে পানি শুন্যতার কারণে ডায়রিয়া বা কলেরা রোগ দেখা দিলে ডাবের পানির জুড়ি নেই।
ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শাহ জালাল বলেন, ঝালকাঠি জেলায় ১ হাজার ১শ ৭৭ হেক্টর জমিতে নারিকেলের বাগান রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩শ ৯৫ হেক্টর, নলছিটি উপজেলায় ৩শ হেক্টর, রাজাপুর উপজেলায় ২শ ২০ হেক্টর, কাঠালিয়া উপজেলায় ২শ ৬২ হেক্টর জমিতে নারিকেল গাছের আবাদ রয়েছে। এতে কয়েক লাখ গাছ রয়েছে। যেখান থেকে এ অঞ্চলের জুন (শুকনা) ও ডাব নারিকেল জনগণের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় এ মৌসূমে ডাবের উৎপাদন বেশি হয়। নারিকেল গাছ লাগানোর পরে প্রতিবছরের ফেব্রুয়ারী মাসে গাছের গোড়ায় সামান্য কাদা মাটি ও সার দিলে ভালো ফলন হয়। এছাড়া তেমন কোন যত্ন নেয়ার প্রয়োজন হয় না বলেও জানান তিনি।
বাড়ি বাড়ি গিয়ে খুচরা ক্রেতা মোঃ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমরা ডাবের সাইজ অনুযায়ী ৩০/৩৫ টাকা দরে প্রতিটি ডাব ক্রয় করি। গাছে ওঠা ও সরবরাহের পরিশ্রম নিয়ে ৪৫ টাকা করে পাইকারদের কাছে বিক্রি করি। পাইকাররা আমাদের কাছ থেকে ডাব কিনে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়।
পাইকারী ক্রেতা সাইদুল ইসলাম শহিদ বলেন, খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে ৪৫ টাকা দরে ক্রয় করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় বড় শহরের মোকামে পৌছে দেয়া পর্যন্ত বহন খরচ পথে পথে রোড খরচ (চাঁদা) দিয়ে প্রতিটি ডাবে ৫০ টাকারও বেশি খরচ পড়ে। আমাদের কাছ থেকে আবার খুচরা বিক্রেতারা ৫৫টাকা দরে কিনে নিয়ে ৬০/৭০ টাকা দরে প্রতিটি ডাব বিক্রয় করে।
প্রান্তিক পর্যায়ের নারিকেল চাষীদের কাছ থেকে মধ্যসত্ব ভোগীদের হাত বাড়িয়ে ক্রেতা পর্যন্ত পৌছতে দাম অনেক হলেও মূলত প্রকৃত চাষীরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ চাষীদের।