সকাল থেকে চলছে তিনটি ফেরি, ঘাটে যাত্রী যানবাহনের তীব্র জট

এস এম আরাফাত হাসান (মাদারীপুর):
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার ফেরিঘাটে সীমিত আকারে তিনটি ফেরি জরুরি ভিত্তিতে আসা যানবাহন ও যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। রোববার সকাল ৮টায় কুঞ্জলতা ও সাড়ে ৮টায় কুমিল্লা নামে দুটি ছোট ফেরি শিমুলিয়ার উদ্দেশ্যে ছাড়া হয়। আর শিমুলিয়া থেকেও সকাল ৮টায় ফরিদপুর নামে একটি ছোট ফেরি সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলাবাজার ঘাটে এসে পৌঁছায়। এতে কমপক্ষে দেড় হাজার যাত্রী ছিল।
ঘাট কর্তৃপক্ষ বলছে, ফেরি চলাচল বন্ধ। তবে জরুরি প্রয়োজনে আসা এ্যাম্বুলেন্স ও লাশবাহী গাড়ি পারাপারের জন্য তিনটি ফেরি চলাচল করছে। এই ফেরিগুলোতে যাত্রীরা ঝাপিয়ে উঠছে। যাত্রীদের কোন ভাবেই আটকে রাখা যাচ্ছে না।
জানতে চাইলে বাংলাবাজার ফেরিঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক (বানিজ্য) জামিল আহমেদ বলেন, ‘দিনে ফেরি চলাচল বন্ধ। তবে লাশবাহী গাড়ি ও এ্যাম্বুলেন্স পারাপারের জন্য সকালে দুটি ছোট ফেরি ছাড়া হয়েছে। সেখানে কিছু মোটরসাইকেল ও কিছু যাত্রী ওঠানো হয়। শিমুলিয়া থেকে ছাড়া একটি ফেরি সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলাবাজার ঘাটে আসে। এই ফেরিতে এ্যাম্বুলেন্সের পাশাপাশি ফেরিটি ভরা যাত্রী ছিল। এই যাত্রীরা ঈদ উপলক্ষে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে।
এদিকে দিনে ফেরিতে পণ্যবাহী ট্রাক ও সাধারণ যানবাহন পারাপার না করায় উভয় ঘাটেই আটকা পড়েছে কমপক্ষে দেড় হাজার যানবাহন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা।
সকাল ৯টায় বরিশাল থেকে ঢাকাগামী মো. জিয়াউদ্দিন নামে ব্যক্তি বলেন, ‘রাত দেড়টায় প্রাইভেট কার নিয়ে ঘাটে আসছি। আমার বাবা ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী। অসুস্থ্য বাবাকে নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছি। ঘাটে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষায় থাকলেও ফেরিতে উঠতে পারছি না।’
তরমুজ ব্যবসায়ী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, রাত ১২টায় ট্রাকে তরমুজ নিয়ে ঘাটে আসছি। ফেরি ঘাটে আছে, কিন্তু আমাদের ওঠানো হচ্ছে না। তরমুজ ট্রাকেই পঁচে যাচ্ছে। তরমুজ নিয়ে আজকের মধ্যে ঢাকায় না যেতে পারলে ৭ লাখ টাকা সব তরজুম নষ্ট হয়ে যাবে।’
সরেজমিনে রোববার সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বাংলাবাজার ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ২৫টি এ্যাম্বুলেন্স ও শতাধিক মোটরসাইকেল, দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে কুঞ্জলতা ও কুমিল্লা নামে দুটি ফেরি শিমুলিয়ার উদ্দেশ্যে ছাড়া হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় ফরিদপুর নামে একটি ছোট ফেরি শিমুলিয়া থেকে ছেড়ে বাংলাবাজার ঘাটে আসে। এই ফেরিতে এ্যাম্বুলেন্স আর দেড় সহ¯্রাধিক যাত্রী। ঘাটে রো রো ও ডাম্ব ফেরিগুলো নোঙর করে রাখা। টার্মিনাল ভর্তি পণ্যবাহী ট্রাক। ঘাটের সংযোগ সড়কেও আটকা পড়েছে অন্তত কয়েকশ যানবাহন।
ঢাকা থেকে আসা গোপালঞ্জগামী যাত্রী নাজমুল হাসান বলেন, ‘বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি। সকাল থেকে তিন ঘন্টা অপেক্ষায় থাকার পরে ফেরিতে উঠতে পারি। এত ভিড় আগে কখনো দেখিনি।’
আলম হাওলাদার নামে আরেক যাত্রী বলেন, কেরানীগঞ্জ থেকে আসছি। যাবো পটুয়াখালী। ভোর পাঁচটায় শিমুলিয়া ঘাটে আসি। ৮টার দিকে অনেক কষ্টে ঠেলাঠেলি করে ফেরিতে উঠি। এমন ভিড়ে বাড়ি না যাওয়াই ভালো ছিল।’
সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলাবাজার ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) আশিকুর রহমান ‘সকাল থেকে ২৫টির মতো এ্যাম্বুলেন্স দুটি ফেরিতে তোলা হয়। এ ছাড়াও রোগীবাহী কয়েকটি গাড়িও ফেরিতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ঘাটে দিনে বেলায় ফেরি না চলায় বাংলাবাজার ঘাটের টার্মিনালে ৫৫০টি পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়েছে।’
বিআইডব্লিউটিসি ঘাট কর্তৃপক্ষ জানায়, বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে সাধারণত ১৬টি যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে পারপার হয়। চলমান করোনাভাইরাসের লকডাউনে চলায় ১৪ এপ্রিল থেকে সীমিত করা হয় ফেরি চলাচল। লকডাউনের শুরুতে দিনের বেলায় ২ থেকে ৩টি ফেরি পরে ৬ থেকে ৭টি ফেরি ছাড়া হলেও গত শুক্রবার থেকে যাত্রী ও জরুরী প্রয়োজনে আসা যানবাহনের চাপ বেশি থাকা প্রায় সব কয়টি ফেরি চলাচল করে এ নৌপথে। এসব ফেরিতে জরুরি প্রয়োজনে আসা যাত্রী, অ্যাম্বুলেন্স, পণ্যবাহী ট্রাক, কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপারের কথা থাকলেও হাজার হাজার সাধারণ যাত্রী পারাপার হতে দেখা যায় ফেরিতে। এ কারণে বিআইডব্লিউটিসির পক্ষ থেকে গত শনিবার সকাল থেকে দিনের বেলায় ফেরি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ঢাকা থেকে আসা ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড় তীব্র হওয়ায় শুধু যাত্রী নিয়ে ফেরি ছাড়তে বাধ্য হয় ঘাট কর্তৃপক্ষ। যাত্রী আর জরুরি প্রয়োজনে আসা গাড়ি পারাপারের কারণে উভয় ঘাটেই আটকা পড়েছে দেড় সহ¯্রাধিক যানবাহন। এর মধ্যে পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।