বেনাপোল বন্দর নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব, বন্দর থেকে লোড-আনলোড বন্ধ
বেনাপোল প্রতিনিধি:
বেনাপোল স্থলবন্দরের হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন নিয়ন্ত্রণে নিতে সাবেক বন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক ও বেনাপোল পৌর কাউন্সিলর রাশেদ আলীর নেতৃত্বে বহিরাগত একটি দল সোমবার সকালে বন্দর এলাকায় শতাধিক শক্তিশালী হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় বন্দর শ্রমিকরা বন্দর অভ্যন্তরে লোড-আনলোড করছিল।
বোমার শব্দ পেয়ে তারা কাজ বন্ধ করে লাঠিসোটা নিয়ে একজোট হয়ে রাস্তায় নেমে এলে বহিরাগতরা বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় বন্দরে কর্মরত কাস্টমস, বন্দর, সিএন্ডএফ এজেন্ট, ট্রান্সপোর্ট কর্মচারি ও সাধারন পথচারিরা আতংকিত হয়ে ছোটাছুটি করতে থাকে। প্রায় ৩ ঘন্টা বন্ধ থাকে বেনাপোল-কলকাতা সড়ক। প্রাণের ভয়েতে বন্দর ও আশেপাশের দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়।
এ ঘটনায় আজিজুর রহমান ও আলী হোসেনসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়। আহতরা মেয়রের সমর্থক ও বোমা হামলার সাথে জড়িত সন্দেহে মারপিট করে শ্রমিকরা। আহতদের দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ ২জনকে গ্রেফতার করেছে। এর ফলে সকাল ১১টা থেকে বন্দরে আমদানিকৃত পণ্যচালান লোড-আনলোড বন্ধ রয়েছে। বেনাপোল বন্দর সহ বাজারে শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে এ ঘটনার বিচার দাবি করে। বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা মেয়রের অফিস, মার্কেটে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে।
জানা গেছে, দলীয় প্রভাব বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন ও বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে।
বর্তমানে বন্দরের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এমপি সমর্থক বেনাপোল বন্দরের ৯২৫ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রাজু আহম্মেদ এবং সম্পাদক উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য অহিদুজ্জামান অহিদ।
মেয়র গ্রুপের সমর্থিত সাবেক হ্যান্ডলিং শ্রমিক সম্পাদক পৌর কমিশনার রাশেদ আলীর লোকজন বোমা হামলা চালিয়ে বন্দরের হ্যান্ডলিং কাজ দখল করতে সোমবার এ ঘটনা ঘটায়।
অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন কারণে বন্দরের নেতৃত্ব থেকে বিদায় নেওয়া সাবেক শ্রমিক নেতা তাদের অবস্থান ফিরে পেতে বন্দরের শ্রমিক নেতৃত্ব দখলের প্রস্তুুতি নিচ্ছে।
৯২৫ শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক অহিদুজ্জামান অহিদ জানান, বর্তমানে শ্রমিকরা বন্দরে শান্তির সাথে কাজ করে আসছে। কিন্তু একটি পক্ষ তা ভালভাবে না নিয়ে ষড়যন্ত্র করে বন্দরের সুন্দর পরিবেশ নষ্ট করতে চাইছে।
যশোরের নাভারন সার্কেল এএসপি জুয়েল ইমরান জানান, বন্দরে দুটি শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সেখানে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সংবাদ পেয়ে উপজেলা প্রশাসন ও আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে আহত অবস্থায় ২জনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে বেনাপোল পৌর কমিশনার রাশেদ আলীর নামে একজন জড়িত বলে নাম এসেছে। এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এ ঘটনায় বন্দর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বেনাপোল এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আমদানি-রফতানিসহ বন্দরের অভ্যন্তরে পণ্য লোড-আনলোড বন্ধ রয়েছে।