South east bank ad

চালের দাম ৪০ টাকার মধ্যে থাকা সহনীয়

 প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৮, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   ক্রয়-বিক্রয়

চালের দাম ৪০ টাকার মধ্যে থাকা সহনীয়

চালের দাম ৪০ টাকার মধ্যেই থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, আমার মনে হয় চালের দাম ৪০ টাকা সহনীয়। যারা খাদ্য উৎপাদন করে তাদের স্বার্থও আমাদের দেখতে হয়। তারাও একটা বিরাট জনগোষ্ঠী। এই দেশে শুধু কয়েকজন খাদ্য উৎপাদন করে না প্রতিটি লোক খাদ্য উৎপাদন করে। প্রতিটি লোক খাদ্য যেমন উৎপাদন করে তেমনি বাজার থেকে খাদ্য খরিদ করে। সুতরাং খাদ্যের দামটা আমাদের অবশ্যই একটু ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হয়। সেই পর্যবেক্ষণ বলছে ৪০ টাকার মধ্যে দাম হলে সেটা হচ্ছে আমাদের জন্য সহনীয়। উৎপাদনকারী যারা তাদের জন্যও একটা গ্রহণযোগ্য মূল্য। শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘নিরাপদ খাদ্য দিবস ২০১৮’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত দুইদিনের মেলা উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

‘নিরাপদ খাদ্যে ভরবো দেশ, সবাই মিলে গড়বো সোনার বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে নিরাপদ খাদ্য দিবস ২০১৮। কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা ছাড়াও সারা দেশে জেলা ও উপজেলায় একযোগে দিবসটি পালিত হয়েছে। জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবসের কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর

অংশ হিসেবে শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন পর্যন্ত একটি র‌্যালির আয়োজন করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। র‌্যালি শেষে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট মোঃ কামরুল ইসলাম ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ। এতে সভাপতিত্ব করেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব শাহাবুদ্দিন আহমদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোঃ মাহফুজুল হক।

বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ এ বিষয়ে একমত প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, অনেকেই বলেন দেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ তবে কেন আটা বা গম আমদানি করে? এটা অনুধাবনের বিষয়। দেশ চাউলে স্বয়ং সম্পূর্ণ এবং স্বয়ং সম্পূর্ণের চেয়ে বেশি চাল রফতানি করতেও সক্ষম। আমরা প্রচুর ভুট্টা উৎপাদন করি। আটা হয়ত আমাদের কম। দেড় লাখ টনের বেশি আমরা গম উৎপাদন করতে পারি না। খাদ্যের বিভিন্ন সামগ্রী যদি আমরা গ্রহণ করি তাহলে আমরা সত্যিকারভাবে খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, ‘ফুড শুধু চাল নয়, ফুড ভুট্টা, গম, মাছ, সবজি, ফল এবং ফাস্টফুড। একটা যখন যথাযথভাবে পাওয়া যায় না তখন আরেকটা দিয়ে ক্ষুধা নিবারণ করা যায়। সেইখানে আমরা খাদ্যে সত্যিকারভাবে স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়েছি।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, খাদ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমাদের কিছু বিষয়ে সাবধান হওয়া দরকার। খাদ্যের কিছু শত্রু আছে, সেগুলো যাতে আমরা কোনভাবেই আমদানি না করি। মাঝে মাঝে কোন দুষ্কৃতিকারী এসব করে। তিনি আরও বলেন, টাকা পয়সার হিসেব যারা করেন তাদের বলব, একটি দেশ যখন খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়, তখন সেখানে দারিদ্র্য একটা শক্ত শক্তির সঙ্গে অবস্থানে করে।

তাদের কিন্তু খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ হলে পরে খরচ বেড়ে যায়। কারণ তখন তাদের খাদ্যে ভর্তুকি দিতে হয়। আমরা বছরে ৫০ লাখ পরিবারকে সামান্য দামে খাদ্য সরবরাহ করি। এই যে ভর্তুকিটা দিতে হয় সেটা হচ্ছে মানুষের জীবন রক্ষার জন্য। সুতরাং এটাতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কারণ আমাদের আছে, তাই আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি। মোটামুটিভাবে বলা যায় আমরা বেশ স্বস্তির মধ্যে আছি। শুনলাম আমাদের ১২ লাখ মেট্রিকটন খাদ্য মজুদ আছে। যেটা আমাদের দেশের জন্য যথেষ্ট। সুতরাং খাদ্য নিয়ে আমাদের ভাবনার কোন কারণ নেই। সঙ্কটের কোন আশঙ্কা নেই।

কয়েকটি সংবাদের প্রসঙ্গ তুলে ধরে দুঃখ প্রকাশ করে অনুষ্ঠানে মতিয়া চৌধুরী বলেন, আমরা যখন আমদানি করছি, আমাদের পাইপ লাইনে যখন খাবার আছে, আসছে। তখন আমাদের কোন পোস্ট দিয়ে ঢুকছে, আমাদের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ঢুকছে। সেই সময়ে একটি খবর ছাপা হলো, ভারত খাদ্য রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। সংবাদটি ছিল মিথ্যা। কিন্তু ‘ব্যাড নিউজ ইজ এ গুড কপি ফর সামবডি ফর সাম সেকশান’। এই যে আতঙ্ক তারা ছড়ালেন, তার ফল কি হলে খাদ্যের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা লাফ দিয়ে বেড়ে গেল। এতে কার লাভ হলো? দেশের কলমের, বিবেকের ও দেশের মানুষের? শকুনের দোয়ায় কিন্তু গরু মরে না। যত বদ মতলব নিয়েই নিউজ ছাপানো না কেন, অসত্য নিউজ, সত্য হলে আমার কিছু বলার ছিলো না। মিয়ানমার থেকে খাদ্য আনার সময় অনেকের প্রশ্নের সমালোচনা করেছে বলে মন্তব্য করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, মিয়ানমার থেকে দয়া দাক্ষিণ্য নয় বরং নগদ অর্থের বিনিময়েই চাল আমদানি করেছে সরকার।

তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছিল। এজন্য খাদ্য আমদানি করেছিলাম অস্বীকার করব না। এটি কোন লুকোছাপার ব্যাপার না। আমরা আমদানি করেছি প্রকাশ্য দিবালোকে। আমাদের সেই আমদানি করা পয়সা নিজেদের পয়সা। কেউ আমাদের টাকা ধার দেইনি। আমরা কারোর কাছে সাহায্যের জন্য হাত পেতে চাইনি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, আমরা এমন অবস্থার সৃষ্টি করতে চাই বাংলাদেশের মানুষ যাতে উন্নত দেশের মতো স্ট্রিট ফুড নিশ্চিতে গ্রহণ করে। আমরা উৎপাদন থেকে শুরু করে, প্যাকেটজাত, প্রক্রিয়াজাত করে দেশের মানুষের খাবার টেবিল পর্যন্ত পৌঁছে দেব যাতে তারা নিশ্চিন্তে খাদ্য ভক্ষণ করে। সচেতন কেবল ব্যবসায়ীদের করলেই হবে না। ভেজাল এবং দূষণমুক্তের জন্য প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে। নিরপাদ খাদ্য নিশ্চিতের জন্য একটি বাড়ির প্রত্যেককেই সচেতন হতে হবে।

দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় প্রধানমন্ত্রীর অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ আজ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি ২০২১ সালের মধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত এবং ২০৪১ সালে দেশে পরিণত হবো। ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি আমাদের এই অগ্রযাত্রাকে কেউ যাতে ব্যাহত করতে না পারে, বাংলাদেশকে কেউ যাতে পিছনের দিকে নিয়ে যেতে না পারে আবার কোন আগুন সন্ত্রাস বা হটকারী কর্মসূচীর মাধ্যমে আমাদের উন্নয়ন- অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে না পারে, নিরাপদ খাদ্যসহ সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের ধারাবাহিকতাকে রক্ষা জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পেছনে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে হবে।

BBS cable ad