ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের পাশে দাঁড়াতে হবে: এ. কে. আজাদ
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ বলেছেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে ছোট-বড় অনেক প্রতিষ্ঠান সমস্যায় পড়েছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আবার অনেক বড় প্রতিষ্ঠান আংশিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অন্যদিকে তরুণ উদ্যোক্তারা দিশা পাচ্ছেন না। ছোট, মাঝারি ও বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সমস্যা নিয়ে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে কাজ করতে হবে।
শনিবার বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) নবনির্বাচিত কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ. কে. আজাদ এসব কথা বলেন। তিনি বিসিআইরও সাবেক সভাপতি। এ. কে. আজাদ বলেন, 'আমি একটি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানি, যাদের বিপণন দক্ষতা চমৎকার। সমস্যা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির ৩৫০ কোটি টাকার সম্পদ আছে, কিন্তু ব্যাংকের দায় ৪৫০ কোটি টাকা। এখন তারা নতুন কিছু করতে পারছে না। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের পাশে দাঁড়ানো দরকার।'
ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, বিসিআইকে ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের পাশে দাঁড়াতে হবে। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। এজন্য সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। এছাড়া অন্য যারা সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদে আছেন, তাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। শুধু নামে সংগঠনে থাকলে চলবে না, সংগঠনের কার্যক্রমে যুক্ত থাকতে হবে। বিসিআই যে লক্ষ্য নিয়ে শুরু হয়েছিল সেভাবে এগোতে পারেনি। এর অন্যতম কারণ, যারা এর পর্ষদে এসেছেন, তারা সংগঠনকে ঠিকমতো গুরুত্ব দেননি। গুরুত্ব না দিলে সংগঠন দাঁড়াবে না। তিনি নবনির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিসহ অন্য সবাইকে গুরুত্বসহকারে কাজ করার আহ্বান জানান।
গত ৮ জানুয়ারি বিসিআইর ২০২১-২৩ মেয়াদের কমিটি গঠন হয়েছে। নতুন কমিটিতেও সভাপতি হয়েছেন সদ্য সমাপ্ত কমিটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ)। ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্তী ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি, ইকোক্যাম বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালক শহিদুল ইসলাম নিরু সহসভাপতি হয়েছেন। এছাড়া রয়েছেন আরও ২১ জন পরিচালক। গতকাল এই কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করে।
নবনির্বাচিত সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) বলেন, বিসিআই অতিক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারিশিল্প খাত নিয়ে কাজ করবে। পাশাপাশি হালকা প্রকৌশল, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও হালাল পণ্য নিয়ে কাজ করবে বিসিআই। তিনি বলেন, শিল্প ও বাণিজ্যে নানান সমস্যা রয়েছে। এগুলো সবাই মিলে কাজ করে সমাধান করতে হবে। বিসিআইর সদস্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ও বিসিআইর বিদায়ী পরিচালক রিজওয়ান রাহমান বলেন, সমস্যাগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানকে টিকে থাকা এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে সামগ্রিক শিল্প খাতের খাপ খাওয়ানোর পরিবেশ সৃষ্টি ও সরকারের নীতি প্রণয়নে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। একেক সংগঠন একেক ধরনের মত দিলে বেসরকারি খাতে বিভেদ রয়েছে বলে সরকারের কাছে বার্তা যাবে। ফলে নীতি প্রণয়নে সরকার বেসরকারি খাতকে গুরুত্ব দেবে না।
স্বাগত বক্তব্যে প্রীতি চক্রবর্তী বলেন, দেশের সকল শিল্পের জন্য একটি কমন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিসিআইকে গড়ে তুলতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্রশিল্পের সহায়তায় কাজ করবে বিসিআই।
অন্য বক্তারা নতুন কমিটির কাছে ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্পের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ আশা করেন। তারা বলেন, নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সংগঠনকে এগিয়ে নিতে আরও উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দেন তারা। বিসিআইকে আরও শক্তিশালী সংগঠনে রূপ দিতে এর কার্যক্রম বাড়ানোর পরামর্শ দেন বিদায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন।
নতুন কমিটির পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন- নাসা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রঞ্জন চৌধুরী, ম্যাটাডোর টুথব্রাশের এমডি জাহাঙ্গীর আলম, রাজা ইন্টারন্যাশনাল সলিউশনের স্বত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেন রাজা, শারমিন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন, নিপ্পন ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি মো. মহব্বত উল্লাহ, টোটাল বিজনেস সলিউশনের এমডি মিজানুর রহমান, সিনার্জি বিল্ডিং টেকনোলজির এমডি রেহানা রহমান, যমুনা মিটার ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি আবুল কালাম ভূইয়া। এছাড়া আরও রয়েছেন ইজি কুক ফুডের চেয়ারম্যান জিয়া হায়দার মিঠু, ট্রিমস ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের এস এম শাহ আলম মুকুল, টেকনোমিডিয়ার এমডি যশোদা জীবন দেবনাথ, কেবিসি কেমিক্যালের চেয়ারম্যান শাহ আলম লিটু, শাহ ফতেউল্লাহ টেক্সটাইল মিলের ভাইস চেয়ারম্যান শহীদ আলম, ইনডেক্স অ্যাক্সেসরিজের এমডি চৈতন্য কুমার দে (চয়ন), ইউনুস গ্রুপের এমডি মোহাম্মদ ইউনুস, মিনিস্টার হাই-টেক পার্কের চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক খান, আকতার ফার্নিচারের পরিচালক কে এম রিফাতুজ্জামান, কোলোএশিয়া লিমিটেডের পরিচালক রুসলান নাসির, ডিজিটাল হাব বাংলাদেশের এমডি নাজমুল আনোয়ার, হ্যাচিন্থ ফেব্রিক মিলসের এমডি খায়ের মিয়া এবং তোহফা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ইশাকুল হোসেন সুইট।
উপস্থিত নবনির্বাচিত পরিচালকদের ফুল দিয়ে অভিবাদন জানান এ. কে. আজাদ। এছাড়া নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান বারভিডা সভাপতি আব্দুল হকসহ অন্য সদস্যদের ক্রেস্ট দেওয়া হয়। ক্রেস্ট দেওয়া হয়েছে বিদায়ী পরিচালকদেরও।