এক-তৃতীয়াংশ কারখানায় বেতন হয়ে গেছে: বিজিএমইএ
করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যেও এক-তৃতীয়াংশ কারখানা শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেছে বলে দাবি করেছে মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
বকেয়া বেতনের দাবিতে রোববার ঢাকার সাভার ও আশুলিয়া এবং নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিকদের বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে পোশাক শিল্প মালিকদের পক্ষ থেকে এই দাবি করা হয়।
১৬ এপ্রিলের মধ্যে অন্য কারখানার শ্রমিকরাও বেতন পেয়ে যাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক।
বিজিএমইএ দাবি করছে, সংগঠনভূক্ত ২ হাজার ২৭৪টি কারখানার মধ্যে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত ৭৬১টি শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করেছে।
তাদের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার ৩৭২টি কারখানার মধ্যে ১০১টিতে বেতন পরিশোধ হয়েছে। গাজীপুর অঞ্চলের ৮১৮টি কারখানার মধ্যে ৩০৫টি বেতন দিয়েছে। সাভার/আশুলিয়া এলাকায় ৪৯১টি কারখানার মধ্যে ১৮৭টি বেতন পরিশোধ করছে। নারায়ণগঞ্জের ২৬৯টি কারখানার মধ্যে ৭১টি বেতন দিয়েছে। আর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৩২৪টি কারখানার মধ্যে ৯৭টি বেতন দিয়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বিশ্ব অর্থনীতি থমকে যাওয়ায় বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য পোশাক ব্যবসায়ও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
এই সঙ্কট মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে ৫ হাজার টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, যা দিয়ে রপ্তানিমুখী শিল্প মালিকরা শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন দিতে পারেন।
শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে রুবানা হক বলেন, “সব পক্ষকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানাচ্ছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে সড়কগুলো অচল হয়ে আছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো পুরোদমে চলছে না।
“সর্বশেষ তথ্য হচ্ছে রপ্তানি কমে গেছে ৭৭ শতাংশ, কারখানা মালিকরা পড়েছে নানান সমস্যায়। এই পরিস্থিতিতে আমি বলবো সবাইকে বিশ্বাস রাখতে। ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া আছে, নির্ধারিত সময়েই বেতন পরিশোধ করা হবে।”
এদিকে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা যারা এখনও শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করেননি তাদের দ্রুত তা পরিশোধ করার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।
বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক এবং বিকেএমইএ সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান বলেছেন, মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব এক কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সংগ্রাম করছে।
“পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আমাদের শ্রমিক-কর্মচারী ভাইবোনেরাও তাদের বেতন-ভাতা নিয়ে এক অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংক কর্মকর্তাদেরকে অনুরোধ করা হচ্ছে, এ সংকটকালে আপনারা (পোশাক মালিক) শ্রমিকের বেতন প্রদানের ক্ষেত্রে সহজ শর্তে সহযোগিতা করুন। অনেক স্থানে লকডাউন থাকলেও শ্রমিকদের বেতনের টাকা দেওয়ার জন্য ২/৩ দিন কয়েক ঘণ্টা খোলা রেখে বেতনের টাকা দেয়ার ব্যবস্থা করুন।”
পোশাক কারখানার মালিকদের ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে শ্রমিকদের একসঙ্গে না এনে ভাগে ভাগে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বেতন পরিশোধের আহ্বান জানিয়েছে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।
“যারা এখনও শ্রমিকদের ব্যাংক বা মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) অ্যাকাউন্ট করতে পারেননি অতি দ্রুত তা সম্পন্ন করুন। এমএফএস প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’, ‘রকেট’ ও ‘বিকাশ’ শ্রমিকের অ্যাকাউন্ট খুলতে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে। প্রয়োজনে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সহযোগিতা নিন।”
পোশাক কারখানাগুলোতে গত ৪ এপ্রিল থেকে শ্রমিকদের মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট খোলা শুরু হয়েছে।
শেষ খবর পর্যন্ত নগদ-এ ৮৫ হাজার, রকেট-এ এক লাখ ৬০ হাজার এবং বিকাশ-এ তিন লাখ ৬০ হাজার নতুন একাউন্ট চালু করা হয়েছে।