শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে ৫২৫ কোটি টাকা দেবে সরকার

বন্ধ হওয়া বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৪টি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের আগামী ৯ মার্চ পাওনা পরিশোধ শুরু হবে। পাওনা পরিশোধে সরকারের খরচ হবে ৫২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেতন পাবেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে বেক্সিমকো লিমিটেডের ১৪টি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা।
গতকাল সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান নৌ-পরিবহন ও শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, ‘বেক্সিমকোর বন্ধ কারখানার ৩১ হাজার ৬৬৯ শ্রমিক ও ১ হাজার ৫৬৫ কর্মকর্তাকে ৫২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা পরিশোধ করা হবে। এজন্য অর্থ বিভাগ তাদের পরিচালন ব্যয় থেকে ৩২৫ কোটি ৪৬ লাখ ও শ্রম মন্ত্রণালয় ঋণ হিসেবে বাকি ২০০ কোটি টাকা দেবে। শুক্রবার (আজ) বেক্সিমকো শিল্প পার্কের ১৪টি প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হবে। ৯ মার্চ থেকে বেক্সিমকো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘বেক্সিমকো শিল্প পার্কের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ২০০৮-২০২৪ পর্যন্ত জনতা ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ প্রদানের জন্য দায়ী ও জড়িত কর্মকর্তা, ব্যাংকের বোর্ড সদস্য, কোম্পানির বোর্ড সদস্য, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ (বিএসইসি) সংশ্লিষ্ট অন্য সবার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সাখাওয়াত হোসেন আরো বলেন, ‘ঋণ প্রদানের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা যেন দেশের বাইরে যেতে না পারেন, সেজন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে বেক্সিমকোর লে-অফকৃত প্রতিষ্ঠান নিয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে ছয় সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এ কমিটির নেতৃত্ব দেবেন। কমিটিতে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও অ্যাটর্নি জেনারেলের একজন করে প্রতিনিধি এবং বেক্সিমকোর রিসিভারকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে কাজ করবেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান।
গত বছরের আগস্টে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন বেক্সিমকো গ্রুপের অন্যতম কর্ণধার ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই সংকটের মধ্যে পড়েছে গ্রুপটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক থেকে বিপুল অংকের ঋণ নিয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো গ্রুপ। এক্ষেত্রে প্রভাব খাটিয়ে প্রয়োজনীয় জামানত ছাড়াই ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে। এমনকি বেক্সিমকো গ্রুপের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা পরিচালক ও সহযোগী কোম্পানির কাছে থাকা শেয়ার বন্ধক রেখেও ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজারে বেক্সিমকো গ্রুপের তিনটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। কোম্পানি তিনটি হচ্ছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি (বেক্সিমকো) লিমিটেড ও শাইনপুকুর সিরামিকস লিমিটেড।
বেক্সিমকো গ্রুপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি করে শ্রমিকদের পাওনা মেটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। পরে শেয়ার বিক্রিতে জটিলতা দেখা দেয়ায় সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়।