কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্কায়ন জটিলতা দূর করার আহ্বান
লোহা ও ইস্পাত শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি করার ক্ষেত্রে পণ্যের শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং বন্দর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।
গতকাল শনিবার এফবিসিসিআইর মতিঝিল কার্যালয়ে আয়রন, কার্বন স্টিল, স্টেইনলেস স্টিল এবং রি-রোলিং ইন্ডাস্ট্রি বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় এই আহ্বান জানানো হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান এবং শাহরিয়ার স্টিল মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসকে মাসুদুল আলম মাসুদ। কমিটির ডিরেক্টর ইনচার্জ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইর পরিচালক মো. আমির হোসেন নূরানী।
এ সময় লোহা ও ইস্পাত শিল্পসহ সব ধরনের শিল্প কারখানার জন্য গুণগত এবং নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দেন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন এফবিসিসিআইর সভাপতি মাহবুবুল আলম। বক্তব্যের শুরুতে তিনি বলেন, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র নির্মাণের লক্ষ্য নিয়ে যেসব তরুণ শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ এমনকি শিশুরা জীবন দিয়েছেন, এসব শহিদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। আহত হয়ে এখনও যারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।
দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে লোহা ও ইস্পাত শিল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই শিল্পের বিদ্যমান সংকট দূর করতে ব্যবসায়ীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।
তিনি বলেন, শুধু ইস্পাত শিল্প নয়, সব খাতেই আমদানিকৃত পণ্যের শুল্কায়ন প্রক্রিয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দীর্ঘদিন ধরেই আমরা শুনে আসছি বন্দরে আমদানিকৃত পণ্যের ইনভয়েস ভ্যালুর তুলনায় অনেক বেশি অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু ধরে শুল্কায়ন করা হয়। এসব জায়গায় আমাদের কাজ করতে হবে। দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করার ক্ষেত্রে বর্তমান এনবিআর চেয়ারম্যান আন্তরিক থাকবেন বলেও আশাবাদ ব্যাক্ত করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
এ সময় এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মানুষ। বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে প্রধান উপদেষ্টার ব্র্যান্ড ভ্যালু কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যাংক সুদের হার স্থিতিশীল রাখা, আয়করের ক্ষেত্রে টার্নওভার ট্যাক্স ও ভ্যাট কমানো, এইচএস কোড সংক্রান্ত জটিলতা দূর করা, অতিরিক্ত জরিমানা আদায় না করা, যৌক্তিক শুল্কায়ন মূল্যের আলোকে শুল্কায়ন করা ইত্যাদি বিষয়ে আলোকপাত করেন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।
সভার শুরুতে এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, দেশে বার্ষিক মাথাপিছু ইস্পাতের ব্যবহার ৪০ কেজি। প্রতিবেশী দেশ ভারতে বার্ষিক মাথাপিছু ইস্পাতের ব্যবহার প্রায় ৯০ কেজি। বাংলাদেশে আকরিক লোহার খনি না থাকার কারণে চাহিদার প্রায় শতভাগ ইস্পাত আমদানি করতে হয়। স্থানীয় চাহিদা পূরণের জন্য প্রতি বছর প্রায় ৩০ লাখ টন ইস্পাত আমদানি হয় দেশে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি মো. মুনির হোসেন, সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী, বর্তমান পরিচালক হাফেজ হাজী হারুন অর রশীদ, আজিজুল হক, মো. নিয়াজ আলী চিশতি, কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও সদস্যবৃন্দ।