দেশের জন্য নিবেদিত বাণিজ্যমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা টিপু মুনশি
বাংলাদেশের রাজনীতিতে উজ্জ্বল এক নাম বাণিজ্যমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা টিপু মুনশি। ৫৪ বছরের বর্ণিল রাজনৈতিক ক্যারিয়ার তাঁর। গণমুখী রাজনীতির কর্ণধার তিনি। সংসদ সদস্য হলেও প্রাপ্য ভাতা ও সম্মানি নেন না। তিনি অসহায় শিক্ষার্থীদের মাঝে বেতন-ভাতা বিলিয়ে দেন। এমপি নির্বাচিত হয়ে প্রথম ভাতা তিনি দান করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের প্রথম শহীদ শংকুরের মায়ের হাতে। তাঁর দীর্ঘ এই রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে নেই কোনো কালিমা। দুর্নীতির কোনো অপবাদও নেই তাঁর বিরুদ্ধে। দেশের জন্য নিবেদিত এই মানুষটির নেই কোনো বিলাসিতাও। রাষ্ট্রীয় শক্তিকে কখনোই ব্যক্তিগত কাজে লাগাননি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ১৯৫০ সালে গোপালগঞ্জে জন্মগ্রহণ করা টিপু মুনশি বাবার হাত ধরে ১৯৬৪ সালে সপরিবার রংপুরে চলে আসেন। ১৯৬৬ সালে ছয় দফার বছরে কলেজে ঢুকেই তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জেল থেকে বের করে আনার জন্য ’৬৯ সালে যে গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল, তিনি সেই অভ্যুত্থানের একজন সংগঠক। দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত হয়ে সেই তরুণ টিপু মুনশি রাজনীতিতে এসে আর পিছপা হননি।
১৯৬৯ সালে রাজধানীতে জোয়ারসাহারা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। এরপর তিনি তিতুমীর কলেজে (তৎকালীন সরকারি জিন্নাহ কলেজ) ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্ব দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখভাগে লড়াই করেন। তাঁর বাবা রমজান আলী ব্রিটিশ সৈনিক ছিলেন। বাবা ছেলে দুজনই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধের বছর ১ মার্চ কারফিউ চলাকালে কয়েকজনকে নিয়ে সরকারি জিন্নাহ কলেজের নাম পরিবর্তন করে শহীদ তিতুমীর কলেজ নামকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন টিপু মুনশি। তিনি ’৭৫ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। জীবিকার তাগিদে টিপু মুনশি রাজনীতির পাশাপাশি ’৮৫ সালে পোশাকশিল্পের সঙ্গে যুক্ত হন। ’৯২ সালে তিনি বৃহত্তর গুলশান আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ ২৪ বছর তিনি ওই পদে ছিলেন। ধীরস্থির স্বভাবের টিপু মুনশি রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতিও ছিলেন। তিনি ২০০১ সাল থেকে রংপুরের পীরগাছা-কাউনিয়া আসনে চারবার নির্বাচনে পরপর তিনবার এমপি হন।
টিপু মুনশি নবম জাতীয় সংসদে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। এর আগে ১৯৯৮ সালে তিনি বিজিএমইএর সহসভাপতি ও ২০০৫ সালে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন নিষ্ঠার সঙ্গে। বর্তমানে তিনি তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন ফোরাম ও সম্মিলিত পরিষদের যৌথ কমিটির প্রেসিডেনশিয়াল সভাপতি।
২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন। টিপু মুনশি অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৫ বিলিয়ন ডলারের বাজার সৃষ্টির দ্বার উন্মোচিত করেছেন। স্বাধীনতার পর ৫৩ বছরের মধ্যে টিপু মুনশির নেতৃত্বে এই প্রথম ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (এফটিএ) প্রারম্ভিকভাবে তিন দেশের সঙ্গে সম্পাদিত হয়েছে। ক্রমান্বয়ে এর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। এতে ২০২৪ সালে এলডি থেকে উন্নীত হলে এই এফটিএর আওতায় রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। রংপুরে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
রমজান মাস নিয়েও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বেশ সতর্ক। কেউ যাতে পণ্য মজুদ করতে না পারে, পণ্যের সংকট যেন না হয় সে ব্যাপারে টিপু মুনশি সোচ্চার। কেউ যাতে অতিরিক্ত মুনাফা না করতে পারে সেজন্য তিনি অসাধু সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়েছেন। করোনার এই দুর্যোগেও তিনি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ব্যক্তিগত অর্থায়নে তিনি ২৩ হাজার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ১০ সহস্রাধিক পরিবারকে সহায়তা দেওয়ারও প্রস্তুতি চলছে।